×

জাতীয়

এরশাদের উত্তরসূরি কে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০১৯, ০২:২২ পিএম

এরশাদের উত্তরসূরি কে
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর সদর আসনে (রংপুর-৩) ২৮ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটল জাতীয় পার্টির। গত ১৪ জুলাই তিনি ঢাকার সিএমএইচ-এ মারা যান। তার মৃত্যুতে রংপুর-৩ সদর আসনটি শূন্য ঘোষণা করেছে সংসদ সচিবালয়। গত মঙ্গলবার এর গেজেটও প্রকাশ করা হয়। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে রংপুর-৩ আসনে ভোট করবে ইলেকশন কমিশন (ইসি)। এ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সাবেক এই সামরিক শাসক জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতার দায়িত্বে ছিলেন। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আসন শূন্য হওয়ার দিন থেকেই নব্বই দিন গণনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে ওই আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসনটি শূন্য ঘোষণার পর থেকে রংপুরে আবারো নির্বাচনী আলোচনা শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ, জাপা ও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম। এখন থেকে এ আসনে জাতীয় পার্টির হাল কে ধরবেন শোকের পাশাপাশি এই আলোচনাও শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। দলীয়ভাবে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও ঘুরে ফিরে আসছে ৩-৪ জনের নাম। এরশাদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দুজনের নাম এই মুহূর্তে আলোচনা হচ্ছে। তারা হলেন এরশাদের ভাই হুসেইন মুহাম্মদ মোর্শেদ এবং এরশাদের ছেলে রাহগীর আলমাদি সাদ এরশাদ। সাদ এরশাদ দীর্ঘ মালয়েশিয়া প্রবাস জীবন শেষে এখন ঢাকাতেই থাকছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে তাকে প্রার্থী করার কথা উঠলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। এরশাদের ভাতিজা সাবেক সাংসদ হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের নামও আলোচনায় রয়েছে। এরশাদের এই ভাতিজা রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে এর আগে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত বছর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন শাহরিয়ার আসিফ। সে সময় জাতীয় পার্টি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশার নামও কেউ কেউ বলছেন। সরাসরি তার মন্তব্য পাওয়া না গেলেও এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে তার এখন আর সে রকম সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে জাতীয় পার্টির হয়ে কিছু করতে পারলে আমার ভালো লাগবে। এরশাদ পরিবারের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে সে তালিকায় থাকতে পারেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর ও মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির। অবশ্য ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর গত নির্বাচনে রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এইচ এন আশিকুর রহমানের কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন। তবে দলের চেয়ারম্যানের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগে এ নিয়ে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে নারাজ ওই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ১৯৯১ সাল থেকে রংপুর সদরের মানুষ এরশাদকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে আসছেন। টানা নয় বছর দেশ পরিচালনা করে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়ার পর গ্রেপ্তার হন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কারাগার থেকে নির্বাচন করে রংপুরের ৫টি আসন থেকে নির্বাচিত হন। রংপুর-২, রংপুর-৩, রংপুর-৫, রংপুর-৬ ও কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সবগুলোতে জয়ী হওয়ার পর এরশাদ রংপুর-৩ আসন রেখে বাকিগুলো ছেড়ে দেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত কারারুদ্ধ থাকেন এরশাদ। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ ৫টি আসনে বিজয়ী হন। ওই সময় জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন। তবে আদালতের রায়ে দণ্ডিত হওয়ার কারণে সংসদে তার আসন বাতিল হয়ে যায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৪টি আসন পেয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টি হয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল। এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২টি আসন পায় এরশাদের জাতীয় পার্টি। পরে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। এসব কারণে দলের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে এখানে আওয়ামী লীগ কিংবা অন্য কোনো দল সুবিধা করতে পারবে না বলে মত স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের। তবে এরশাদের অবর্তমানে সদর আসন আর জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া হবে না বলে মনোভাব প্রকাশ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন ধরে রংপুর সদর আসনটি এরশাদ দখল করে রেখেছিলেন। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য হওয়ার পরও এলাকায় না থাকার কারণে এখানকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আগামীতে এখানে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার কমিটির সদস্য রংপুর সদরের মানুষ চৌধুরী খালেকুজ্জামান প্রার্থী হতে পারেন এ আসনে। এর আগেও তিনি তিনবার মনোনয়নপত্র নেয়ার পরও মহাজোটের কারণে এরশাদের পক্ষে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি দোয়া করি এরশাদ সাহেবকে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন। উপনির্বাচন হলে সেক্ষেত্রে আমি বলব রংপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগের একজন যোগ্য প্রার্থী দেয়া হোক। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি বলেন, এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমপি হলে এখানকার উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে। আওয়ামী লীগ থেকে আরো যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক এমপি এডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিলন। প্রার্থী হতে পারেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ, মহানগর সভাপতি মোজাফফর হোসেন, কাওছার জামান বাবলা, জাসদ নেতা (আম্বিয়া-প্রধান) সাব্বির আহমেদ, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীণ নেতা শাহাদত হোসেন, বাসদের জেলা সমন্বয়ক আবদুল কুদ্দুস, ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App