×

জাতীয়

নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত ডুবেছে রেললাইনও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০১৯, ১১:৩১ এএম

নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত ডুবেছে রেললাইনও
উজানের ঢলে নদনদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বগুড়া ও জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। এদিকে বন্যায় গাইবান্ধায় রেললাইন ডুবে যাওয়ায় ঢাকার সঙ্গে গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিহাটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে দেশের বন্যা পরিস্থিতি যদি আরো অবনতি হয়, তবে তা মোকাবেলায় কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া। তিনি বলেন, বন্যা উত্তর এবং উত্তর মধ্যাঞ্চল হয়ে মধ্যাঞ্চলের দিকে প্রভাব বিস্তার শুরু করছে। ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ এই জেলাগুলো আগামী দুই একদিনের মধ্যে বন্যাকবলিত হবে। তিনি আরো বলেন, আগামী এক দুদিনের মধ্যে মধ্যাঞ্চলে যে বন্যা প্রভাব বিস্তার করবে, সেই বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে। এদিকে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। শহর সংলগ্ন খোলাহাটী ইউনিয়নের গোদারহাট এলাকায় সোনাইল বাঁধের প্রায় ৩০০ ফুট এলাকা ধসে যাওয়ায় শহরে পানি ঢুকেছে। অন্যদিকে বন্যায় গাইবান্ধায় রেললাইন ডুবে যাওয়ায় ঢাকার সঙ্গে গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিহাটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। গাইবান্ধা রেলস্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম জানান, জেলার বাদিয়াখালী এলাকায় রেললাইনে পানি ওঠায় গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ট্রেন চালানো বন্ধ রেখেছেন তারা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পানি ওঠায় স্লিপার, মাটি ও পাথর সরে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না কখন আবার ট্রেন চালু করা যেতে পারে। এই লাইন বন্ধ হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিহাটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বগুড়ায় যমুনার পানি বেড়ে বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় ক্রমেই হিংস্র হয়ে উঠছে যমুনা। ফলে নদী তীরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ভাঙন তীব্র হচ্ছে। সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফলে ওই তিনটি উপজেলার ৮৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে গত ১০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে এবার জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যমুনার পানি ১৯৮৮ সালে বিপদসীমার ১২২ সেমি ও ২০১৭ সালে বিপদসীমার ১৩৪ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। গতকাল বুধবার বিপদসীমার ১৬২ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এবছর বন্যার পানি ২৮ সেমি বেশি বলে জানিয়েছেন জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী। এতে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, সরিষাবাড়ি, মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলায় চার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত ৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কুড়িগ্রামেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ অধিকাংশ নদ-নদীর পানি গত ৫ দিন ধরে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত দুদিন ধরে পানি বৃদ্ধির গতি ধীর হলেও তীব্র ভাঙনের ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টায় রৌমারীর বন্দরের সড়ক ভেঙে যাওয়ায় গোটা উপজেলা এখন পানিবন্দি। গত মঙ্গলবার রাতে রৌমারীতে দাঁতভাঙা এলাকার হাজিরহাট ও ধনারচরে এলজিইডির সড়ক ভেঙে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এর ফলে নতুন করে পঞ্চাশ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও বেসরকারি পর্যায়ের সংগঠনগুলো এগিয়ে না আসায় বানভাসিরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়িতে আটকে পরা মানুষগুলো জ্বালানি সংকটের কারণে রান্না-বান্না করতে পারছে না। উঁচু স্থানে গবাদিপশু রাখলেও গো-খাদ্যের অভাবে গৃহস্থরা অসহায় হয়ে পড়েছে। এদিকে বুধবার দুপুরে উলিপুরের গুনাইগাছ ইউনিয়নের কাজির চক এলাকার সুজন মিয়ার দেড় বছরের শিশু ফুয়াদ পানিতে পরে মারা গেছে। এনিয়ে গত আটদিনে জেলায় পানিতে ডুবে মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়াল ১৩-তে। নওগাঁর মান্দায় আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে কসবা ও বিষ্ণপুর ইউনিয়নের ৭/৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর রাতে উপজেলার চকবালু এলাকায় আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রায় ১শ’ ফিট ভেঙে গেছে। এতে প্রায় ৬/৭ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পরেছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বাঁধ ভেঙে গেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো বৃষ্টিপাত না থাকায় সিলেটের প্রধান নদ নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে। দুএকটি পয়েন্টে অপরিবর্তিত থাকলেও নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হবার খবর পাওয়া যায়নি। বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আশাবাদী এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ। সুনামগঞ্জ জেলায়ও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণ বন্ধ থাকায় নদ-নদীর পানি কমেছে। ৮ দিন ধরে টানা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে জেলার ১১ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছিল। এতে ঘরবাড়ি, হাটবাজার, গবাদিপশুসহ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে, দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, দেশের বন্যা পরিস্থিতি যদি আরো অবনতি হয়, তবে তা মোকাবিলায় কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের চতুর্থ দিনের প্রথম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App