×

জাতীয়

দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাতের স্ত্রী মিন্নি গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০১৯, ১২:৩৫ পিএম

দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাতের স্ত্রী মিন্নি গ্রেপ্তার
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রিফাত হত্যার সঙ্গে পুত্রবধূ মিন্নির যোগসাজশের অভিযোগ এনে শ্বশুরের সংবাদ সম্মেলনের দুদিন পর গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে মিন্নি ও তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনা পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। সারা দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত সাড়ে ৯টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, রিফাত হত্যার সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত মিন্নিসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্নিকে পুলিশ লাইন্সে আনার সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। পুলিশ লাইন্স থেকে তিনি মোবাইল ফোনে গণমাধ্যমকে জানিয়ে ছিলেন রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড জড়িত এক অভিযুক্তকে শনাক্ত করার জন্য মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ লাইন্সে আনা হয়েছে। শনাক্তকরণ শেষ হলে মিন্নিকে আবার বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। তবে শেষ পর্যন্ত ঘটল উল্টোটা। এর আগে গত শনিবার রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। তিনি রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তিনি বলেন, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি আগে নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল। ওই বিয়ে গোপন করে রিফাত শরীফকে বিয়ে করে সে। বিষয়টি আমাদের জানায়নি মিন্নি এবং তার পরিবার। কাজেই রিফাত শরীফ হত্যার পেছনে মিন্নির মদদ রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনলে সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে। দুলাল শরীফ আরো বলেন, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের বিষয়টি মিন্নি ও তার পরিবার সুকৌশলে গোপন করেছে। নয়ন বন্ডের স্ত্রী থাকা অবস্থায় আমার ছেলে রিফাতকে বিয়ে করেছে মিন্নি। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও মিন্নি নয়নের বাসায় যাওয়া-আসা করত। নিয়মিতভাবে নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করত সে। তাকে গ্রেপ্তার করলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। যদিও পরদিন রবিবার শ্বশুরের এ বক্তব্যকে বানোয়াট উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন করেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। লিখিত বক্তব্যে মিন্নি বলেন, বর্তমানে আমার শ্বশুর অসুস্থ এবং তিনি তার একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি যখন যা বলেন তা কোনো কিছুই পরে মনে থাকে না। আসামিরা বিচারকে অন্যদিকে প্রভাবিত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানির চেষ্টা করেছে। তারা আমার ছবি এডিট করে নয়ন বন্ডের সঙ্গে যুক্ত করে পোস্ট করেছে। ০০৭ নামের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপটি যারা সৃষ্টি করেছে তারা খুবই ক্ষমতাবান এবং বিত্তবান। তারা এ বিচারের আওতা থেকে দূরে থাকার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে রিফাত হত্যার বিচারকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য আমার শ্বশুরকে সংবাদ সম্মেলন করাতে বাধ্য করেছেন। শনিবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে আমার শ্বশুর আপনাদের কাছে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মনগড়া ও বানোয়াট। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিন্নি বলেন, আমি আমার স্বামী রিফাত শরীফতে ছাড়া কখনো একা একা কলেজে যেতাম না। হত্যাকাণ্ডের দিন (গত ২৬ জুন) সকালেও আমি আমার স্বামীর সঙ্গে কলেজে যাই। কৌশলে আমার স্বামী আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার কথা বলে কলেজ থেকে বাইরে নিয়ে আসে। কিন্তু আমি কলেজ থেকে বের হয়ে বুঝতে পেরে আমার স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে না গিয়ে কলেজে কাজ শেষ না হওয়ায় আমি কলেজের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করি। এ সময় আমার স্বামী আমার গতিরোধ করতে চাইলেও আমি তা উপেক্ষা করে কলেজে প্রবেশ করি। এরপরই হামলাকারীরা আমার স্বামীকে মারতে মারতে কলেজ থেকে বাইরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে কুপিয়ে যখম করে। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। প্রসঙ্গত, রিফাত হত্যার ঘটনায় তার বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মিন্নির আগে আরো ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গত ২ জুলাই ভোররাতে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App