×

জাতীয়

ত্রাণের অপেক্ষায় বন্যার্তরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৯, ১১:৫৪ এএম

ত্রাণের অপেক্ষায় বন্যার্তরা
ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ত্রাণের অভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন বন্যাদুর্গত জেলার পানিবন্দি মানুষ। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। স্কুল-কলেজে পানি প্রবেশ করায় বন্ধ রয়েছে পাঠদান কার্যক্রম। রাস্তায় পানি ওঠায় বেশ কয়েকটি জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলাগুলোর যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও বাড়িঘর। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহের কথা বলা হলেও ত্রাণের অপেক্ষায় পানিবন্দি লাখো মানুষ। বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত ৪ শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জামালপুরে ৩ ও কুড়িগ্রামে ১ জন। তিস্তা, ঘাঘট, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদ-নদীর পানি বাড়ায় কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব। এদিকে সাঙ্গু নদীর পানি বাড়ায় বান্দরবানে বন্যার আরো অবনতি হয়েছে। প্রধান সড়ক ডুবে থাকায় টানা ষষ্ঠ দিনের মতো বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মৌলভীবাজারে কুশিয়ারা, মনু, ধলাই নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জে পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপদসীমার ওপরে বইছে সুরমা। যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে আরো ৩২ সেন্টিমিটার বেড়ে পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি বেড়ে টাঙ্গাইল অংশে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়ে নতুন করে কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নেত্রকোনায় নদ-নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এদিকে মৌলভীবাজারে মনু নদীর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীতে গেল রাতে নতুন করে আরো চারটি ইউনিয়নের অন্তত দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গাইবান্ধায় গত ১২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টার মধ্যে দেশের ২০ থেকে ২২টি জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বুধবারের মধ্যে এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি হতে পারে। তবে বৃষ্টি বা উজানের ঢল বন্ধ হলে কিছু দিন স্থির থেকে পানি স্বাভাবিকভাবে কমতে থাকবে। তবে এর উল্টোটা হলে এই শতকের সবচেয়ে বড় বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঝারি মানের বন্যার আশঙ্কা দেখছে। বন্যাকবলিত এলাকায় জনবসতি তলিয়ে খাবার পানির সংকটসহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, সুরমা নদী সিলেটের কানাইঘাটে বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৬১ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই বিভাগের অন্যান্য নদীর মধ্যে কুশিয়ারা নদী আমলসিদে ১৪৬ সেন্টিমিটার, শ্যাওলায় ৯৫ সেন্টিমিটার, সিলেটের শেরপুরে ৫১ সেন্টিমিটার, মনু নদী রেলওয়ে ব্রিজে ৪৮ সেন্টিমিটার, মৌলভীবাজারে ৮৪ সেন্টিমিটার, ধলাই নদী কমলগঞ্জে ১৯ সেন্টিমিটার, খোয়াই নদী বাল্লায় ১০৩ সেন্টিমিটার, হবিগঞ্জে ১০ সেন্টিমিটার, পুরনো সুরমা দিরাইয়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারা দেশে বিপদসীমায় ছাড়িয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে সোমেশ^রী নদী কমলাকান্দায় ৬৫ সেন্টিমিটার, কংস নদী ৪৩ সেন্টিমিটার, ধরলা নদী কুড়িগ্রামে ১০৮ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদী কাউনিয়ায় ১৬ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদী গাইবান্ধায় ৬৮ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদী নুনখাওয়ায় ৭১ সেন্টিমিটার, চিলমারীতে ১০২ সেন্টিমিটার, যমুনা নদী ফুলছড়িতে ১০৬ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদে ১১৯ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে ৭৯ সেন্টিমিটার, কাজীপুরে ৪৫ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে ১৬ সেন্টিমিটার, সাঙ্গু নদী বান্দরবানে ৪০ সেন্টিমিটার, দোহাজারীতে ১০০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এগুলো ছাড়া অন্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে বইছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও দেশের সব নদনদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে। নদ-নদীগুলোর ৯৩টি পয়েন্টের মধ্যে ২৫টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এসব নদীর পানি দিনে তিন থেকে চার ইঞ্চি করে বাড়ছে। এখনো পর্যন্ত দেশের ১৬টি জেলায় বন্যার পানি ঢুকেছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যায় ডুবে যাওয়া জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মঞ্জুর হাসান। অন্যদিকে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম, বান্দরবান জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় কয়েক লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও খাদ্যসংকটে রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষকে কলাগাছের ভেলা ও ছোট নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে এসব এলাকায় খাদ্যসংকট আরো তীব্র হচ্ছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে ঘরবাড়ি ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। খামারিরা বিপাকে পড়েছেন গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে। পুকুর ও জলাশয়গুলো ডুবে যাওয়ায় মৎস্যচাষিরা বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়েছেন। এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, বন্যা মোকাবেলায় সরকার বড় রকমের প্রস্তুতি নিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ ও জরুরি ওষুধসেবা পৌঁছে দেয়া শুরু হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এই সেবা আরো বাড়ানো হবে। এ ছাড়া আনসার, এনজিও, রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী তিন দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে ভারি বর্ষণে চট্টগ্রামে পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে সোমবার সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরো জানান, আগামী তিন দিন আবহাওয়া পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App