×

অর্থনীতি

ঋণখেলাপিদের পোয়াবারো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৯, ১২:৪১ পিএম

ঋণখেলাপিদের পোয়াবারো
ঋণখেলাপিদের পোয়াবারো। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া ঋণখেলাপিদের সুবিধা অবশেষে কার্যকর হচ্ছে। এখন থেকে আগামী ২ মাসের মধ্যে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিলেই ১০ বছরের জন্য ঋণ নবায়নের সুযোগ পাবেন খেলাপিরা। আর সে ক্ষেত্রে ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। সেই সঙ্গে অনারোপিত সুদ ও স্থগিত সুদও তারা মওকুফ পাবেন। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সাল পর্যন্ত যারা ঋণখেলাপি তারাই এ সুবিধা পাবেন। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরাও এই সুযোগ পাবেন। শুধু তাই নয়, এ ধরনের ঋণখেলাপিদের প্রথম এক বছর কোনো কিস্তিও দিতে হবে না। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এ প্রজ্ঞাপনটি পরিপালনের নির্দেশনা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনার ফলে আগামী দুই মাস ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে পারবেন খেলাপিরা। আর ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে হলে আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে আবেদন করতে হবে। তবে এই দুই মাস নতুন করে কোনো ঋণ পাবেন না তারা। স্বাধীনতার পর ঋণখেলাপিদের এত বড় ছাড় আর কোনো সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেয়নি। তবে ঋণখেলাপিদের বড় ধরনের এ ছাড় ব্যাংকিং খাতের জন্য মোটেও সুফল বয়ে আনবে না বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। সার্কুলার অনুযায়ী, যেসব খাত সুবিধা পাবে তাদের মধ্যে রয়েছে ট্রেডিং খাত (গম, খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও রিফাইনারি), জাহাজ শিল্প (শিপব্রেকিং ও শিপ বিল্ডিং), লৌহ ও ইস্পাত শিল্প। অন্যান্য খাতের ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ নিরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত প্রকৃত ব্যবসায়ী, যাদের ঋণ নিয়ন্ত্রণ-বহির্ভূত কারণে মন্দমান শ্রেণিকৃত হয়েছে তারা ছাড় পেতে পারেন। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের অকৃষি খাতের আমদানি-রপ্তানিতে সম্পৃক্ত রয়েছে শিল্পঋণও। ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সে সময় এই সার্কুলারের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট। তবে গত ৮ জুলাই হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থিতাবস্থার ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার কার্যকর হচ্ছে। এর আগে গত ২৫ মার্চ অর্থমন্ত্রী শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীরের সঙ্গে বৈঠক পরবর্তী সাংবাদিকদের কাছে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য সুদের হার ৭ শতাংশ করার কথা বলেছিলেন। এরপর সুদের হার ৭ শতাংশ করার বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে অর্থমন্ত্রী গত এপ্রিলে তা ৯ শতাংশ করার কথা বলেন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ১১ জুলাই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে বিআরপিডি সার্কুলার নং-৫, ১৬ মে ২০১৯-এর ওপর হাইকোর্ট ডিভিশন কর্তৃক জারি করা স্থিতাবস্থার ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ৮ জুলাই ২ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। ওই আদেশের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক ডিজি ও অর্থনীতিবিদ তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, এত বড় ছাড়ের ফলে ঋণ সংস্কৃতি ভেঙে পড়বে। ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ভালো গ্রাহকরা ঋণ ফেরত দিতে চাইবেন না। কারণ খেলাপি হলেই সুবিধা বেশি। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের ছাড় অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে না। এখন থেকে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছেন তারা আর ঋণ পরিশোধ করতে চাইবেন না। এর আগে ২০১৫ সালে ঋণখেলাপিদের জন্য একটি বড় সুযোগ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা জারি করা হয়। তখন ১১টি শিল্প গ্রুপের ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করে বড় ধরনের সুবিধা দেয়া হয়। তবে সুবিধা পাওয়ার পরও দুটি গ্রুপ ছাড়া আর কেউ টাকা পরিশোধ করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App