×

জাতীয়

শহররক্ষা বাঁধের ওয়াকওয়ে উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়ায় মান নিয়ে প্রশ্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০১৯, ১২:২৭ পিএম

শহররক্ষা বাঁধের ওয়াকওয়ে উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়ায় মান নিয়ে প্রশ্ন
চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় বঙ্গোপসাগরের তীরে ২৫০০ কোটি টাকার ‘উপকূলীয় বাঁধ কাম-আউটার রিং রোড নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন শহররক্ষা বাঁধের ওয়াকওয়েটি উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়ার ঘটনাটি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। এতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) উদ্যোগে নির্মিত এই কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চউকের সাবেক চেয়ারম্যান, প্রকল্প পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমালোচনাও চলছে। আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় সাগরপাড়ে নির্মিত এই ওয়াকওয়ের কাজ এখনো চলমান থাকা অবস্থায় শনিবার বিকেলে তা ধসে পড়ে। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চউক কর্মকর্তাদের দাবি, টানা বর্ষণে মাটি সরে দেবে গেছে পতেঙ্গার এই ওয়াকওয়ের (দর্শনার্থী ও পর্যটকদের হাঁটার পথ) কিছু অংশ। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া প্রকল্পটি চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো শেষ হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পটির নকশায় গলদ এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় পরিপূর্ণভাবে ব্যবহারের আগেই এটি ধসে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোমিনুল হক বলেন, ‘শুরু থেকেই কাজের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। এখনো ওয়াকওয়ের কাজ শেষ হয়নি। এরমধ্যেই সেটি দেবে গেছে। মূলত গাইডওয়াল দিয়ে সেখানে যেনতেনভাবে বালি ভরাট করায় বালি পানির তোড়ে সরে যায়। ফলে সিসি ঢালাই করা ওয়াকওয়ে ধসে পড়ে। ওয়াকওয়েটা সিসি ঢালাই না করে আরসিসি ঢালাই করা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, সাগরের পাশে কাজ করার সময় মাটি সরে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয়। সেটি বিবেচনায় না রেখে এ ধরনের কাজ করার মানে অর্থ অপচয়। সাধারণত সাগরপাড় ঘেঁষে এসব প্রকল্পে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সাধারণত এ ধরনের কাজগুলো পাইলিংয়ের ওপর হয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভার বহন করার প্রয়োজন হলে সেখানে প্রিকাস্ট কংক্রিট পাইল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ধসে পড়া ওয়াকওয়েটির ক্ষেত্রে এসব করা হয়নি বলেই তা ধসে পড়েছে।’ এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ভোরের কাগজকে বলেন, ‘ বিশেষজ্ঞ একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। ওই টিমের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। যে অংশটি দেবে গেছে তা ঠিক করার বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দোভাষ বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এ প্রকল্পের কাজ আগের চেয়ারম্যানের সময় করা। এরপরও দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। শুধু এই প্রকল্প নয়, কোনো ধরনের দুর্নীতি হলে কেউ পার পাবে না।’ ‘উপক‚লীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোড’ প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত ডিজাইনে এখানে রড ছিল না, তাই আমরা রড (আরসিসি ঢালাই) দেইনি। ওয়াকওয়ে দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে না। যে কারণে প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী সিসি ঢালাই দেয়া হয়েছে ওখানে। সাগরের ভেতরের অংশে আমরা সিমেন্টের ব্লক দেব। তাই মানুষ যে অংশ দিয়ে হাঁটবে সেই অংশে আমরা রড রাখিনি, এতে সরকারের টাকার অপচয় হতো। আমরা এখনো কাজ শেষ করিনি। সাগরের ভেতরের দিকে সিমেন্টের ব্লক দিলে তা ধসে পড়ত না। ব্লক না দেয়ায় মাটি সাগরের দিকে সরে গেছে। আমরা আবারো জিও টেক্সট (একধরনের প্লাস্টিক) দিয়ে তা পুনরায় মেরামত করব এবং কোনো সমস্যা হবে না।’ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে পতেঙ্গা হতে ফৌজদারহাট পর্যন্ত উপক‚লীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণ নামে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চউক। এ প্রকল্পের আওতায় ১৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার চার লেনের সড়ক নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ১৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার মূল ও ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে। এছাড়া সাগরপাড়ে ৫০ ফুট জায়গা থাকবে ওয়াকওয়ে, বসার জন্য থাকবে বেঞ্চ, নির্দিষ্ট কিছু দোকান থাকবে, থাকবে শিশুদের জন্য কিডস জোন, গ্রিন জোন ও পার্কিং সুবিধা। পুরো ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রোডে সাগরের ভেতরের অংশে সিমেন্টের ব্লক বসবে। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাইকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থ ১ হাজার ৭২০ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও জাইকার সহায়তা ৭০৬ কোটি টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App