×

জাতীয়

এরশাদবিহীন জাপা কোন পথে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০১৯, ১১:১৯ এএম

এরশাদবিহীন জাপা কোন পথে
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতাকর্মীরা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে উঠলেও মূল সংকট দেখা দেয় পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর এ প্রশ্নটা এখন সবারই। মৃত্যুর আগেই ছোট ভাই জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। সে বিচারে পার্টির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার দায়িত্ব জি এম কাদেরেরই। তবে পেছনের ইতিহাসের দিকে তাকালে আরো কিছু হিসাব-নিকাশ করার প্রয়োজন হয়। এরশাদের পরে দলের হাল ধরা নিয়ে আগেই কয়েকবার বিভক্ত হয়েছিল পার্টি। ছোট ভাই জি এম কাদের আর স্ত্রী রওশন এরশাদের রশি টানাটানিতে বিষয়টি গণমাধ্যমে ফলাও হয়েছিল। পার্টির চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান বদল নিয়েও কম জল ঘোলা হয়নি। এর মধ্যেই এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা রাজনীতিতে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন। তার দাবি, মহাজোট তার হাত দিয়েই গড়া। যার কারণে বিএনপি তাকে থাকতে দেয়নি। জাপায় একাধিক গ্রুপের মধ্যে সরকার ও সরকারবিরোধী তৎপরতাও প্রবল। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আর কো-চেয়ারম্যানের যেমন দুটি শিবির আছে, তেমনি এরশাদের ভাগিনা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গারও একটা বলয় আছে। জি এম কাদেরের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে রাঙ্গার। দুজনেই সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তবে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে মহাসচিব পদে থাকা এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারও পার্টির মূল কার্যক্রম থেকে এখন অনেকটাই দূরে থাকছেন। রওশন এরশাদ আর জি এম কাদের গ্রুপের মধ্যে প্রবল বিরোধের প্রকাশ্য রূপ দেখা গেছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর। নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার সময় এরশাদের পক্ষে ছিলেন জি এম কাদের। আর স্বামী-দেববের মতামতেই বাইরে ভোটে অংশ নিয়ে বিএনপিবিহীন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছিলেন রওশন এরশাদ। এর মধ্যে ভোটের পুরোটা সময় সিএমএইচে কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছিলেন এরশাদ। শেষ অবধি সব হারিয়ে পর্দার আড়ালে চলে গিয়েছিলেন জি এম কাদের। তবে এরশাদ দুবছরের মাথায় পার্টিতে কো-চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করে জি এম কাদেরকে সেখানে বসিয়ে দিয়েছিলেন। এতে রওশনপন্থিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আর পরে সেই ক্ষোভ সামাল দিতে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করে স্ত্রী রওশনকে ভাইয়ের ওপরে স্থান দিতে বাধ্য হয়েছিলেন এরশাদ। শেষ অবধি রওশন এরশাদ জি এম কাদেরকে সন্তানতুল্য হিসেবে উল্লেখ করলেও সেই সময়ের স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়নি এখনো। এর ওপর বিদিশা আবার জি এম কাদেরকে নিয়ে আশাবাদী হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তার ছেলে এরিক এরশাদ তার বাবার উত্তরসূরি হয়ে উঠবেন এমন স্বপ্নও তার চোখে। এদিকে এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার কাণ্ডারি হিসেবে রওশন এরশাদকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা কিছুটা সংকট আছে। বার্ধক্যজনিত কারণে রওশন এরশাদকে বেশিরভাগ সময় এখন চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হচ্ছে। সে কারণে জি এম কাদেরের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। তবে কেউ কেউ বলছেন, তার মতো নিপাট ভদ্রলোক পুরো পার্টির ভার কতটা বহন করতে পারবেন তা সময়ই বলে দেবে। বিশেষ করে সরকারপন্থি হিসেবে পরিচিত রওশন এরশাদ গ্রুপের নেতারা জি এম কাদেরকে কতটা এগিয়ে দেবেন তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। এদিকে বিগত দশম জাতীয় সংসদের মতো এবার মন্ত্রিসভায় নেই জাতীয় পার্টি। সংসদে যথাযথ বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে তারা। জি এম কাদের ঘোষণা দিয়েছেন, তারা সরকারের মন্দকাজের সমালোচনা করবেন। জনগণের স্বার্থে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন। এমন ঘোষণার পর সরকারের বিরুদ্ধে পার্টির অবস্থান শক্ত করতে জি এম কাদের কতটা সক্ষম হবেন তার ওপর নির্ভর করছে পার্টির জনপ্রিয়তা। একই সঙ্গে সরকারের সহায়তা ছাড়া তারা পার্টিকে কতটা এগিয়ে নেবে সেটাও ভাবতে হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App