সঙ্গীত ভবনের বর্ষাবন্দনা ‘আষাঢ়ের নব আনন্দ’
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০১৯, ০২:২৯ পিএম
বাঙলা-বাঙালি আর বর্ষার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। বাংলার প্রকৃতি সারা বছর অপেক্ষায় থাকে বর্ষার ঘনমেঘস্নিগ্ধ অম্বর ছায়াতলে কেতকী-কদম-যূথিকা। পুষ্পবাসরে অবিরল প্রেমরস ধারায় সিক্ত নিষিক্ত হতে। নৃত্যপর সখিরা বাজায় মেঘের মৃদঙ্গ আষাঢ়ের নব আনন্দে। জেগে ওঠে জীবন। আর তাইতো বাঙালি গান-কাব্যে, সাহিত্যে সর্বদা বর্ষাবন্দনায় মগ্ন।
বর্ষাকে স্বাগত জানিয়ে বর্ষার কিছু প্রাণছোঁয়া গান নিয়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ছিল একটি বিনম্র উপস্থাপনা ‘আষাঢ়ের নব আনন্দ’। এর আয়োজন করে প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কলিম শরাফীর হাতে গড়া সংগঠন সঙ্গীত ভবন।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সঙ্গীত ভবনের শিল্পীদের সমবেত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। তারা পরিবেশন করেন ‘বিশ্ববীণা রবে বিশ্বজন মোহিছে’ গানটি। এরপর একক গান পরিবেশন করেন সীমা সরকার। তিনি পরিবেশন করেন ‘হেরিয়া শ্যামল ঘন নীল গগনে, সেই সজল কাজল আঁখি পড়িল মনে’ গানটি। তার এই গানের রেশ কাটতে না কাটতে মঞ্চে এসে সুপর্ণা দে ও তাহমিনা তনু গেয়ে শোনান ‘আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে, জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না’। আমিনা আহমেদের কণ্ঠে শোনা গেল দ্বিজেন্দ্রগীতি ‘বরষা আইল ওই ঘন ঘোর মেঘে দশদিক তিমিরে আঁধারি’।
এরপর দ্বৈত কণ্ঠে সালেহ মোহাম্মদ খোকন ও নিবেদিতা হালদার পরিবেশন করেন ‘এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে’। রিফাত জামাল মিতু ‘আমার নিশীথ রাতের বাদলধারা, এসো হে গোপনে, আমার স্বপনলোকে দিশাহারা’। সর্ববাণী চক্রবর্তী ‘ওগো তুমি পঞ্চদশী, তুমি পৌঁছিলে পূর্ণিমাতে’। মোহাম্মদ মোস্তফা গাইলেন ‘পুবালী বাতাসে’। এমদাদ হোসেন ‘আকাশ এতো মেঘলা যেও নাকো একলা’। ‘এসো শ্যামল সুন্দর, আনো তব তাপহরা তৃষাহরা সঙ্গসুধা’ গানের সঙ্গে একক নৃত্য পরিবেশন করে নেওয়াজ মৃন্ময় খুকুমনি। নাচের পর আবার গানের পালা। এবার একক গান নিয়ে মঞ্চে আসেন স্বপন কুমার দাস। তিনি গাইলেন ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী, উড়ে চলে দিগ দিগন্তের পানে’। অনেকগুলো একক গানের পর আবার দ্বৈত গান নিয়ে মঞ্চে আসেন কনক খান ও খন্দকার জাফর সাদেক পাভেল। তারা দ্বৈত কণ্ঠে গাইলেন ‘এই মেঘলা দিনে একলা’। তাদের দ্বৈত পরিবেশনা শেষে পীযূষ বড়ুয়ার কণ্ঠে শোনা গেল নজরুলগীতি ‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে’। এরপর সুমন চৌধুরী গাইলেন ‘গহন মেঘের ছায়া ঘনায় সে আসে’, মাহমুদ সেলিম শোনালেন ‘বড়
একা লাগে এই আঁধারে’।
ধরণীর গগনের মিলনের ছন্দে, বাদল বাতাস মাতে মালতীর গন্ধ’ গানের সঙ্গে আয়োজনের দ্বিতীয় এবং শেষ একক নৃত্য পরিবেশন করেন তাহনীনা ইসলাম।
দুটি সমবেত, দুটি দ্বৈত, দুটি একক নৃত্য ও ১০টি একক গান দিয়ে সাজানো বর্ষাবিষয়ক মনোমুগ্ধকর ওই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাটি শুরু হয়েছিল সমবেত গানের মধ্য দিয়ে, শেষও হয় সমবেত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া সঙ্গীত ভবনের শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে গাইলেন ‘অম্বরে মেঘ মৃদঙ্গ বাজে’।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগঠনের সভাপতি পীযূষ বড়ুয়ার জন্মদিন উপলক্ষে তাকে সঙ্গীত ভবনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। আগত দর্শক-শ্রোতাতের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন পীযূষ বড়ুয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সঙ্গীতশিল্পী মাহমুদ সেলিম।