×

জাতীয়

বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০১৯, ০২:৩৫ পিএম

বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টির ফলে দেশের নদনদীগুলো ফুঁসে উঠেছে। দ্রুত বাড়ছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যমুনা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, মনু ও সোমেশ্বরীর পানি। এসব নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে এসব অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যমুনা নদীর পানি সারিয়াকান্দি ও কাজিপুর পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। একই সময় চট্টগ্রাম, সিলেট ও রংপুর বিভাগে সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী, সাঙ্গু, ধরলাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট লালমনিরহাট : তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বন্যার পানিতে শ্রেণিকক্ষ ডুবে যাওয়ায় ৩৪টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টার দিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে সকাল ৯টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার দুপুরের দিকে তা কমতে শুরু করে। এদিকে শুক্রবার মধ্যরাতে পানির তোড়ে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী তালেব মোড় এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে উপজেলা শহরে বন্যার পানি প্রবেশ করে। বন্যায় প্লাবিত হয় নতুন নতুন এলাকা। প্রতিনিয়ত বাড়ে পানিবন্দির সংখ্যা। ভারতের গজল ডোবা ব্যারাজে তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ওই ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ বেড়েছে বলে দাবি করছে ডালিয়া ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ছয় দিনের ভারি বৃষ্টি। ফলে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় প্রায় ২০-২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নৌকা বা ভেলা ছাড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিত মানুষ। পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী এলাকার বেশ কয়েকটি ব্রিজ-কালভার্ট ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকায় ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে লাগাতার বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এতে করে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। এসব এলাকায় পানিবন্দি মানুষজনের দুর্ভোগ বাড়ছে। জলমগ্ন এলাকাগুলোতে খাবার পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে বিপুলসংখ্যক বন্যাকবলিত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও গবাদিপশু নিয়ে পাকা সড়ক এবং উঁচু বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে আশ্রিত এলাকাগুলোতে দুর্গতদের শিশুখাদ্য ও পশু খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এলাকাগুলোতে কাঁচা-পাকা সড়কের উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে বেশ কিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সদর, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, রাজারহাট নাগেশ্বরী ভূরুঙ্গমারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার অন্তত হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় অসংখ্য মাছের ঘের তলিয়ে গেছে, পাশাপাশি শাকসবজিসহ আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের স্টকে থাকা ৫০০ টন চালের মধ্যে ৫০ টন চাল বন্যাকবলিতদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছি। ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের মধ্যে ২ হাজার প্যাকেটই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার মধ্যে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেয়া আছে। শুকনো খাবার বরাদ্দ চেয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আরো বেশি চাহিদা থাকলে সেটা দ্রুত জানাতে বলা হয়েছে । সিলেট : সিলেটের তিনটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি না থাকলেও বিকেল থেকে ফের শুরু হওয়া বর্ষণে পানি বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, ধলাই নদীর পানি। এতে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুরের বেশ কিছু এলাকার মানুষ এখনো পানিবন্দি। সিলেট সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পানি নামছে ধীরগতিতে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন, বন্ধ রয়েছে উপজেলার দুটি পাথরকোয়ারি। পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। পিয়াইন ও সারী নদীর পানি বিপদসীমার উপরে থাকায় সহসা এসব এলাকায় পানি কমার সম্ভাবনা নেই। গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত উপজেলার পূর্ব জাফলং, আলীরগাঁও, রুস্তমপুর, ডৌবাড়ি, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে উপজেলার নয়াগাঙ্গের পাড় ও বাউরবাগ হাওর গ্রামের নদী তীরবর্তী বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে রয়েছে। পাশাপাশি এই এলাকার নদীর তীর সংরক্ষণ ও ফসলি জমি রক্ষায় বেড়িবাঁধগুলোও রয়েছে হুমকির মুখে। গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, উপজেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। এরই মধ্যেই বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। জৈন্তাপুর উপজেলায়ও বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অনেক এলাকার মানুষের বাড়িঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। অনেক এলাকায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। জনসাধারণ নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। এদিকে টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ও হাটখোলা ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গ্রামের বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে এসব ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছেন সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। সিলেটের জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, গতকাল শনিবার উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে ১৮ ইউনিয়নের তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার ১৬৫টি ছোট-বড় চর প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। পানির প্রবল স্রোতে নদ-নদীর তীরে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৭ সেন্টিমিটার বেড়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ৫০ সেন্টিমিটার বেড়ে গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এসব চরের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্র বা নিরাপদ উঁচু স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। অপরদিকে নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরের চরাঞ্চল ও মূল ভূখণ্ডে দেখা দিয়েছে ভাঙন। সুন্দরগঞ্জের চণ্ডীপুরের হরিপুরঘাট, কাপাসিয়ার লালচামার, সদরে কামারজানীর গোঘাট, রায়দাসবাড়ী, ফুলছড়ির এরেন্ডাবাড়ীর জিগাবাড়ী, উড়িয়ার রতনপুর, উদাখালীর সিংড়িয়া, গজারিয়ার কাতলামারী, সাঘাটার ভরতখালীর হাট ভরতখালী, হলদিয়া ও জুমারবাড়ীর নলছিয়া এলাকাসহ চরাঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক নদীভাঙন। প্রতিদিনই নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে শত শত ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গাছপালাসহ ফসলি জমি। নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলো আশ্রয় নিচ্ছে অন্যের জায়গা, আত্মীয়ের বাড়ি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এসব নদ-নদীর ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোয় ভাঙন রোধে ৬৫ হাজারের বেশি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন বলেন, বন্যা মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বগুড়া : শনিবার সন্ধ্যায় সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যার পানিতে সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের যমুনা নদীর চরাঞ্চল ও যমুনা তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে যমুনার চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ধুনট উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে যমুনা নদীর বৈশাখী, রাধানগর ও বথুয়ারভিটা চরের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার। এ ছাড়া বাঁধের অভ্যন্তরের সহরাবাড়ী ও শিমুলবাড়ী গ্রাম সম্পূর্ণ এবং আটাচর, বানিয়াজান, কৈয়াগাড়ী, রঘুনাথপুর, ভাণ্ডারবাড়ী, পুকুরিয়া, ভ‚তবাড়ী ও মাধবডাঙ্গা গ্রামের আংশিক এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার পানিতে এরই মধ্যে ১৪০ হেক্টর জমির পাট, ২ হেক্টর জমির আখ ও ১ হেক্টর জমির মরিচ ক্ষেত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হেক্টর জমির পাট ও ১ হেক্টর জমির মরিচ সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। কর্তৃন উপযোগী ফসল কেটে নেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এদিকে শিমুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ধুনট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া সুলতানা বলেন, শনিবার দুপুর পর্যন্ত ধুনট উপজেলায় যমুনার চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া নদী তীরের গ্রামগুলো বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা, কর্নিবাড়ী, বোহাইল, চালুয়াবাড়ী, চন্দনবাইশা, হাটশেরপুর, কুতুবপুর, সারিয়াকান্দি সদর, কামালপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও যমুনার তীরবর্তী এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি মাদ্রাসা, ১টি হাইস্কুলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যায় চরাঞ্চলের কৃষকের আউশ, পাট, রোপা-আমন, বীজতলা, শাকসবজি তলিয়ে গেছে। জামালপুর : জেলার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আব্দুল মান্নান। জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া রাস্তাঘাট ও নতুন করে রাস্তাঘাট ভেঙে বন্যার পানি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। দ্রুতগতিতে পানি বাড়ায় গ্রামকে গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে। পানি প্রবেশ করছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। হঠাৎ বন্যা আঘাত হানায় গরু ছাগল সহায় সম্পদ নিয়ে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছোটাছুটি করছে। আশ্রয় নিচ্ছে রেললাইনে, বাঁধে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও রাস্তার ধারে উঁচু স্থানে। জেলার ইসলামপুর উপজেলার চীনাডুলি, বেলগাছা, নোয়ারপাড়া, সাপধরি ও কুলকান্দি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, এভাবে দ্রুতগতিতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে রাতের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকা ইসলামপুরে ২০ টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা, দেওয়ানগঞ্জে ২০ টন চাল, নগদ ৫০ হাজার টাকা, মাদারগঞ্জে ১০ টন চাল ও নগদ ২০ হাজার টাকা, মেলান্দহে ১০ টন চাল ও নগদ ২০ হাজার টাকা, সরিষাবাড়ীতে ১০ টন চাল ও নগদ ২০ হাজার টাকা, বকসীগঞ্জে ১০ টন চাল ও নগদ ২০ হাজার টাকা ও সদর উপজেলায় ১০ টন চাল ও নগদ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে দেখা দিয়েছে ভাঙন। প্রতিদিনই যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলোতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। যমুনা নদীতে অবৈধ আর অপরিকল্পিত বালি উত্তোলনের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দুয়েক দিনের মধ্যে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করবে। পানি বৃদ্ধির কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। অব্যাহত ভাঙনে বাঐখোলা বাঁধসহ বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না থাকায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে নদী পাড়ের ৮ গ্রামের মানুষের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে, ভাঙন রোধে বালির বস্তা ফেলার কাজ শুরু করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App