×

মুক্তচিন্তা

কৃষি শিক্ষার সূতিকাগার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০১৯, ০৯:৪০ পিএম

কৃষি শিক্ষার সূতিকাগার
কৃষি শিক্ষার সূতিকাগার

শিক্ষার মান বজায় রাখতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকাটা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের পরিবেশ সব সময় সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক ছিল। আমাদের শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট, কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে তারা কী ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছে, যোগ্যতায় ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে কিনা- এসবই পর্যালোচনা করা দরকার।

আধুনিক কৃষি শিক্ষার সূতিকাগার বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট (বিএআই) স্থাপিত হয় ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষকরত্ন শেখ হাসিনা বিএআইকে রূপান্তরের মাধ্যমে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) প্রতিষ্ঠা করেন। দক্ষ কৃষিবিদ এবং কৃষিবিজ্ঞানী তৈরি করার পাশাপাশি কৃষি গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রসার করার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের কৃষি সেক্টরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাখছে কৃতিত্বের স্বাক্ষর। বিসিএসসহ অন্য সব প্রতিযোগিতামূূলক চাকরির পরীক্ষায় বিশেষ করে কৃষি সেক্টরে উত্তীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং তারা কর্মক্ষেত্রে রাখছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয়- শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা। বিভিন্ন অনুষদে দেশের সবচেয়ে মেধাবী এবং যোগ্যতাসম্পন্ন ১০০ জন শিক্ষক এবং ২৭ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভালো ডিগ্রিধারী শিক্ষক এবং মেধাবী শিক্ষার্থী- এই দুটি বিষয়ে যখন সম্মিলন ঘটছে, তখন আমরা আশা করব নিঃসন্দেহে আমাদের শিক্ষার মান বাড়ছে এবং বাড়বে। শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এসিউরেন্স সেল (আইকিউএসি)-এর মাধ্যমে প্রায় ৭৫টি ট্রেনিং, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছে। সেলফ এসেসমেন্ট ও আউটকাম বেসড কোর্স কারিকিউলা তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদ, এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদ, এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ এবং ফিশারিজ অনুষদের ৩৫টি বিভাগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় গবেষণার প্রজননক্ষেত্র। গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টি, উদ্ভাবনী চিন্তাচেতনার বিকাশ প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মানকে বিশ্ব পর্যায়ে নেয়ার জন্য কাজ করছি। আমি মনে করি এখন অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মানসম্মত গবেষণা হচ্ছে। এ দেশের জনগণ তথা সমগ্র জাতির উন্নয়নে এ কৃষিবান্ধব সরকার বরাবরই গণমুখী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত ২১ জুলাই ২০১৬ সালে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ৩৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার প্রকল্প পাস করেন। এ বিশাল অঙ্কের বরাদ্দের কারণে ভোগান্তি দূর হবে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যার। ত্বরান্বিত হবে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত। নতুনভাবে শুরু হচ্ছে ছাত্রীদের জন্য ১০০০ আসনবিশিষ্ট ১০ তলা ভিত দিয়ে ১০ তলা হল ভবন নির্মাণ, ছাত্রদের জন্য ১০০০ আসনবিশিষ্ট ১০ তলা ভিত দিয়ে ১০ তলা হল ভবন নির্মাণ, ভেটেরিনারি ক্লিনিক নির্মাণ, পোল্ট্রির শেড নির্মাণ, এ ছাড়া গবেষণা প্লটের জন্য ভূমি উন্নয়ন, সেচ ব্যবস্থা, গ্রিন হাউস নির্মাণ, অত্যাধুনিক ২টি গেট নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পানি, গ্যাসের লাইন স্থাপন, বই-পুস্তক ও জার্নাল সংগ্রহ, উচ্চতর কৃষি গবেষণা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হচ্ছে গবেষণাগারের জন্য। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রও সংগ্রহের কাজ চলমান। আমি সব সময় ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। শিক্ষার্থীরা অন্যায় কাজে না জড়িয়ে যাতে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সব সময় নিয়োজিত থাকে, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চারও আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। বর্তমানে বিশ^বিদ্যালয়ে ৩০ থেকে ৩২টি সংগঠন এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায় গাছ দিয়ে পুরো ক্যাম্পাসটিকে একটি মিনি বলধা গার্ডেন বানানো হবে। এটা আমার স্বপ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ৬০ ফুট উচ্চতার বঙ্গবন্ধুর একটি মনুমেন্ট সংবলিত স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হবে। কৃষি অনুষদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং মুক্তমঞ্চ নির্মাণ করা হবে। প্রবেশদ্বারে দুটি অত্যাধুনিক গেট নির্মাণ করা হবে। লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া আমি উপাচার্য থাকাকালীন এগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে আরো কিছু সময়োপযোগী ডিগ্রি চালু করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি নতুন অনুষদ খোলার বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়েছি। এ ছাড়া শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণের উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশ ও বিদেশের বহু বিশ^বিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করেছি এবং আরো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিক্ষার মান বজায় রাখতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকাটা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের পরিবেশ সব সময় সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক ছিল। আমাদের শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট, কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে তারা কী ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছে, যোগ্যতায় ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে কিনা- এসবই পর্যালোচনা করা দরকার। অবকাঠামো উন্নয়নের নামে দালানকোঠা বানিয়ে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার স্বপ্ন না দেখে বরং দেশময় কিংবা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে লেখাপড়ার উচ্চ মান; শিক্ষকদের গবেষণা ও প্রকাশনার অভিনবত্ব। গবেষণা ও প্রকাশনা দিয়ে অন্যদের বোঝাতে হবে আমাদের উন্নতি। আমি মনে করি উচ্চ মানসম্মত লেখাপড়া, পরীক্ষা ও ফলাফল নিয়মিতকরণ এবং শিক্ষকদের জ্ঞান অন্বেষী মনোভাব- আপাতত এটুকু হলেই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবের একটি অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হবে। বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় এবং কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ সংশ্লিষ্ট শুভানুধ্যায়ীদের প্রচেষ্টায় সব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কৃষি শিক্ষার সূতিকাগার এ প্রতিষ্ঠানটিকে তার স্বমহিমায় দাঁড় করিয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত করতে আমাদের প্রয়াস দৃঢ়ভাবে অব্যাহত রাখব বলে আশা করি।

প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ : উপাচার্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App