×

জাতীয়

রাঙ্গামাটি-শেরপুরে জনজীবন বিপর্যস্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০১৯, ০১:২০ পিএম

রাঙ্গামাটি-শেরপুরে জনজীবন বিপর্যস্ত
কয়েক দিনের টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটির মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন হাজারেরও বেশি মানুষ। এদিকে পাহাড়ি ঢলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে শেরপুরে ৩টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ। অপরদিকে ফেনীতে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ১৫টি গ্রাম। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট রাঙ্গামাটি : গত ৫ দিনের টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটির মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাঙ্গামাটির ৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন হাজারেও বেশি মানুষ। অবিরাম বৃষ্টির ফলে রাঙ্গামাটির প্রতিটি পাহাড়ের মাটি ছোট ছোট আকারে খয়ে পড়ছে। মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি আবার শুরু হয়। গতকাল বুধবার সকাল থেকে আবারো ভারি বর্ষণ শুরু হলে মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিজেদের সহায়-সম্বল রক্ষায় এখনো অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের খাদে বসবাস করছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার পর্যাপ্ত না থাকায় মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রমুখী হতে পারছে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে রান্নাবান্না করে খাবার খেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে আসছেন। দিনে লোকজন না থাকলেও রাতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যায়। এদিকে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার মাটি সরে গিয়ে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বন্ধ রয়েছে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি-বান্দরবান, রঙ্গামাটি-মারিশ্যা রুটের সব যানবাহন। এ ছাড়া ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকায় ছড়ার পানির তোড়ে ভেঙে গেছে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের রাস্তার বিশাল অংশ। গতকাল বিকেল থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মচারীরা রাস্তা সংস্কারের জন্য দ্রæত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে পাহাড়বেষ্টিত হওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলার সবকটি উপজেলার ইউনিয়ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মাইকিং করা হচ্ছে সবকটি ইউনিয়নে। এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তর্পণ দেওয়ান বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন আছে, যে কোনো দুর্যোগ দেখলেই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব। দুর্যোগ মোকাবেলায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সব সময় প্রস্তুত আছে বলে জানিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, রাঙ্গামাটি জেলা ও সদর উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন পাহাড়বেষ্টিত হওয়ায় সব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে দিয়ে আমরা এখনো মাইকিং ও জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি বৃষ্টি একটু কমলেই আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে। রাঙ্গামাটি পৌর এলাকায় ২১টির মতো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আশ্রয় নেয়ার জন্য। বৃষ্টি কমলেই মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে এমনটাই আশা করছে সচেতন মহল। শেরপুর : অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ৩ দিন ধরে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে মহারশী নদীর দীঘিরপাড় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৩টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকদের বীজতলা। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কোচনীপাড়া-বাগেরভিটা রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে ছুড়িহারা, দীঘিরপাড়, চতল, রামনগর, কালীনগর, দরিকালীনগর, বালুরচর, দারিয়ারপাড়, দেবোত্তরপাড়া, জুলগাঁও, হাসলিগাঁও, বানিয়াপাড়া, রাঙ্গামাটি, হাতীবান্ধা, লয়খা, কামারপাড়া, মাগলার মুখসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিতে ভেসে গেছে এসব গ্রামের অনেক পুকুরের মাছ। তলিয়ে গেছে কৃষকদের বীজতলা। গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল মাহমুদ, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন চাঁন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান মহারশী নদীর দীঘিরপাড় বিধ্বস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেন। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া ৩ পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারা। উপজেলা কৃষি অফিসার হুমায়ুন কবির জানান, ৬৭০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৫ হেক্টর জমির বীজতলা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. সিরাজুস সালেহীন জানান, পানিতে তলিয়ে কী পরিমাণ মাছের ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। মুহুরী নদীর বাঁধে ভাঙন, ফেনীর ১৫ গ্রাম প্লাবিত : ফেনী প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে পানির চাপ বাড়ায় মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ৮টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে পরশুরাম-ফুলগাজী উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে পরশুরামের উত্তর শালধরে মহসিন মেম্বারের বাড়ি, দুর্গাপুরে কালাম মেম্বারের বাড়ি, উত্তর ধনিকুণ্ডা বদু মিয়ার বাড়ি ও নোয়াপুর আলত মিয়ার বাড়িসংলগ্ন স্থানে এবং ফুলগাজীর জয়পুর গ্রামে মুহুরী নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। এতে করে শালধর, ধনিকুণ্ডা, চিথলিয়া, রাজষপুর মালিপাথর, নিলক্ষী, দেড়পাড়া, জয়পুর, কিসমত ঘনিয়ামোড়া, দুর্গাপুর, রামপুর ও পশ্চিম ঘনিয়া মোড়াসহ ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া মুহুরী নদীর পানি গার্ডওয়ালের উপর দিয়ে প্রবেশ করায় ফুলগাজী বাজারের শতাধিক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ উপজেলায়ও বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফেনী-পরশুরাম সড়কের ফুলগাজী বাজার অংশে হাঁটু পানি থাকায় বুধবার বিকেল ৫টার পর থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম ও পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেলুল কাদের জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য উপজেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জহির উদ্দিন জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১.৭০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উজানে বৃষ্টি বন্ধ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App