×

জাতীয়

জলজটে হাবুডুবু নগরী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০১৯, ০১:১৭ পিএম

জলজটে হাবুডুবু নগরী
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা ভারী বৃষ্টির পানি জমে নগরীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশজুড়ে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলির কোথাও কোমর সমান, কোথাও আবার বুক সমান পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন নগরবাসী। বাসা-দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস, কাঁচাবাজারেও ঢুকে পড়ে পানি। জলযটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সব স্তরের মানুষ। বিভিন্ন স্থানে দেয়াল ও গাছপালা ভেঙে পড়ায় এবং টানা বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে গিয়ে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য উঠানামার কাজ কার্যত অচল, যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করতে নারাজ। এদিকে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় পাহাড়ধসের আশঙ্কায় বিভিন্ন পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে এসেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে ইতোমধ্যে সরে আসা ৩৬১টি পরিবার আটটি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এসব পাহাড়ে থাকা অবশিষ্ট লোকজনকে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য তোলা বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ও ভ‚মিধসজনিত সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় মেডিকেল টিম গঠন ও কন্ট্রোল রুম চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে রেড ক্রিসেন্ট। গত ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে সামান্য বৃষ্টিপাত শুরু হলেও ৬ জুলাই শনিবার থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। গত রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত গতকাল সোমবার ভোর থেকে টানা প্রবল বর্ষণে রূপ নেয়। নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ডিউটি অ্যাসিসট্যান্ট মো. মাহমুদুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, মৌসুমি বায়ু প্রবলভাবে সক্রিয় থাকায় ভারি বর্ষণ হচ্ছে। মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত আরো ২ থেকে ৩ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও পাহাড়ি এলাকায় ভ‚মি ধসের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৮৭ দশমিক ২ মিলিমিটার। দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত ছিল ১৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার। গত বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গত পাঁচ দিনে ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে টানা ভারি বৃষ্টিতে নগরীর ওয়াসা, মেহেদীবাগ, প্রবর্তক, অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, নিউমার্কেট এলাকা, অলঙ্কার, পাহাড়তলী রোড, তিন পোলের মাথা, হেমসেন লেন, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বাকলিয়া, হালিশহরসহ অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কোথাও হাঁটু পরিমাণ, কোথাও কোমর সামান আবার কোথাও কোথায় বুক সমান পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর মূল সড়ক ও অলিগলি। ভারি বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বন্দরনগরী। সকাল থেকে জলমগ্ন রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা। নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারেও হাঁটু পানি জমে গেছে। সড়কে পানি ওঠায় নগরীর অধিকাংশ রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকায় চাল-ডালের আড়ত, শুঁটকিপট্টিসহ বেশ কিছু আড়ত ও দোকানের মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বর্ষার শুরুতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পেছনে নাগরিকরা দোষারোপ করছেন সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতাকে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার রাজীব হোসেন বলেছেন, নগরীর পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা ৩৬১টি পরিবারকে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের জন্য শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং এবং উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন বলেন, নগরীর দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় পানি জমেছে। বেশি কছু এলাকায় দেয়াল ধসের এবং গাছ ভাঙার খবর পাওয়া গেছে। সিটি করপোরেশনের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। এদিকে ভারি বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে লাইটার জাহাজে (ছোট আকারের জাহাজ) পণ্য খালাস বন্ধ আছে। বন্দরের সদস্য (প্ল্যানিং এন্ড এডমিন) মো. জাফর আলম বলেন, বৃষ্টি বেশি হলে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস সম্ভব হয় না। তাই কাজ বন্ধ আছে। চার শতাধিক লাইটার কর্ণফুলী নদীতে বসে আছে। বৃষ্টির কারণে কাজ করতে পারছে না। বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকলে বিদেশি জাহাজের পাইলটরা লাইটারিং বন্ধ করে দেন। তবে এনসিটি, সিসিটি ও জিসিবি বার্থের জাহাজে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং স্বাভাবিক রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App