×

জাতীয়

ওয়াসার জলে মলের অস্তিত্ব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০১৯, ১২:০৯ পিএম

ওয়াসার জলে মলের অস্তিত্ব
ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনের মধ্যে চারটি জোন এবং সায়েদাবাদ ও চাঁদনীঘাট এলাকা থেকে সংগৃহীত আটটি নমুনা পানি পরীক্ষায় ব্যাকটেরিয়া, অ্যামোনিয়া ও মলের অস্তিত্ব মিলেছে। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে এ দূষণের তথ্য পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে ওয়াসার ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। পাশাপাশি পানি পরিশোধনে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে তা জমা দিতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার নমুনা পানি পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিলের পর গতকাল রবিবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে প্রতিবেদনটি দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। এ সময় রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ৩ জুলাই ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনের মধ্যে চারটি জোন এবং সায়েদাবাদ ও চাঁদনীঘাট এলাকা থেকে সংগৃহীত আটটি নমুনার পানিতে দূষণের তথ্য প্রতিবেদন আকারে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। এলাকার পানিতে ব্যাকটেরিয়া, উচ্চমাত্রার অ্যামোনিয়া পাওয়া গেছে এবং কিছু কিছু নমুনাতে মলের অস্তিত্বও পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গত ২১ মে এক আদেশে ঢাকা ওয়াসার পানির উৎস, ১০টি বিতরণ জোন, গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০টি জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ৩৪টি স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে তা আইসিডিডিআরবি, বুয়েট ও ঢাবি অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে আটটি নমুনায় দূষণ পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- মডস জোন ১ : এই জোনের পানিতে দেখা যায় উচ্চ স্তরের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রয়েছে। এই অঞ্চলে বসবাসকারীরা পানিতে দুর্গন্ধ ও স্বাদ সমস্যার বিষয়ে অভিযোগ করেন। মডস জোন ২ : সদরঘাটের ফায়ার স্টেশন থেকে নেয়া পানির নমুনায় নন-প্যাথোজনিক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখা যায়। এই ব্যাকটেরিয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এই অঞ্চলের বসবাসকারীরাও দুর্গন্ধ ও স্বাদ সমস্যার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। মডস জোন ৩ : এই অঞ্চলের তিনটি নমুনায় কোনো ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ পাওয়া যায়নি। এই অঞ্চলের অধিবাসীরাও দুর্গন্ধ ও স্বাদ সমস্যার বিষয়ে অভিযোগ করেছে। নমুনায় পাওয়া ডি-ক্লোরোমিন নিম্ন স্তরের হওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা কম। মডস জোন ৪ : ৬৮৬/১ থেকে সংগৃহীত পানির নমুনা। এই অঞ্চলের অভিযোগÑ এলাকার পশ্চিম কাজীপাড়া, মিরপুরের পানিতে উচ্চ স্তরের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ দেখা যায়। এই অঞ্চলের বাসিন্দারাও দুর্গন্ধ এবং স্বাদ সমস্যার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। মডস জোন ৫ ও ৬ : এই অঞ্চলের তিনটি নমুনায় কোনো ব্যাকটেরিয়াজনিত জীবাণু পাওয়া যায়নি। এই অঞ্চলের বাসিন্দারাও দুর্গন্ধ এবং স্বাদ সমস্যার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। ডাই ও ট্রাইক্লোরোমিনস এবং ক্লোরিন জীবাণুর উপস্থিতির কারণে এটি হতে পারে। এ ছাড়াও ডাই ও ট্রাইক্লোরোমিনসের উপস্থিতিতে ট্রাইহ্যালোমিথেন এবং হ্যালোজেনিক অ্যাসেটিক অ্যাসিড হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। মডস জোন ৭ : যদিও এই জোন থেকে সংগৃহীত পানির নমুনার মধ্যে নন-প্যাথোজনিক ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে তবে ই-কোলির উপস্থিতি দেখা যায়নি। ১২/১৬ ডিএসসিসি শনির আখড়া থেকে নেয়া নমুনায় ক্লোরোফর্ম এবং নন-প্যাথোজনিক ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। মডস জোন ৮ : এই অঞ্চলের তিনটি নমুনায় কোনো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। তিনটি নমুনায় উচ্চ মাত্রার রং দেখা গেছে। মডস জোন ৯ : এই এলাকা থেকে সংগৃহীত নমুনা পানিতে ডাই ও ট্রাইক্লোরোমিনস পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। মডস জোন ১০ : এই অঞ্চলের পানিতে দুর্গন্ধ ও স্বাদ সমস্যার বিষয়ে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এ ছাড়াও পানিতে ডাই ও ট্রাইক্লোরোমিনসের উপস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর বিশ^ব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ অনিরাপদ উৎসের পানি পান করে। ৪১ শতাংশ পানির নিরাপদ উৎসগুলোতে রয়েছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। ১৩ শতাংশ পানিতে রয়েছে আর্সেনিক। পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮২ শতাংশ। পরে পত্রিকায়ও এসব তথ্য প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। এরপর ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৬ নভেম্বর ঢাকায় পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় (ঢাবি) এবং আইসিডিডিআরবির প্রতিনিধিরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App