×

খেলা

টাইগারদের অনেক পাওয়া না পাওয়ার বিশ্বকাপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০১৯, ০১:০৪ পিএম

টাইগারদের অনেক পাওয়া না পাওয়ার বিশ্বকাপ
কত স্বপ্নই না ছিল! ছিল কত প্রত্যাশা! অথচ কিছুই পূরণ হলো না। ২০১৫ সালের পর থেকে মাশরাফি বিন মুর্তজার অসাধারণ অধিনায়কত্বে ওয়ানডেতে বদলে যেতে শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ক্যাপ্টেন ম্যাশের পাশাপাশি তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা হয়ে ওঠেন অভিজ্ঞ, পরিণত। পঞ্চ পাণ্ডবের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, লিটন দাশ ও সাব্বির রহমানের মতো তরুণ কিন্তু পরীক্ষিত কয়েকজন ক্রিকেটার নিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ^কাপের সেমিতে খেলার লক্ষ্য নিয়ে ইংল্যান্ড পাড়ি জমায় বাংলাদেশ। ম্যাশ বাহিনীর ওপর টাইগার ভক্তদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু সেই প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি স্টিভ রোডসের শিষ্যরা। তবে সাকিব আল হাসানের ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট এবং কাটার মাস্টারের ২০ উইকেট ছিল বড় প্রাপ্তি। দ্বাদশ বিশ^কাপে টাইগারদের ব্যক্তিগত অর্জনের পাল্লাটা ভারী হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো দলীয় সফলতা নেই বললেই চলে। এবারের বিশ^কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ^ ক্রিকেটে নতুন এক পরাশক্তির উত্থানের বার্তা দেয় মাশরাফি বাহিনী। কিন্তু টাইগারদের শেষটা শুরুর মতো সুন্দর হয়নি। নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে হারে বাংলাদেশ। এর মধ্যে জয় পায় উইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এই দুটি জয় প্রত্যাশিতই ছিল। আর পরিত্যক্ত হয় একটি ম্যাচ। ওই ম্যাচে স্টিভ রোডসের শিষ্যদের প্রতিপক্ষ ছিল ১৯৯৬ সালের বিশ^ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। সব মিলিয়ে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার আগেই দ্বাদশ বিশ^কাপের সেমির দৌড় থেকে ছিটকে পড়ে মাশরাফির দল। সেমির স্বপ্ন ভেঙে গেলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি টাইগারদের কাছে বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি ছিল ক্রিকেটের তীর্থভ‚মি লর্ডসে খেলা টাইগারদের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। পাকিস্তানকে হারাতে পারলে লর্ডসে অভিষেকটা স্মরণীয় হয়ে থাকত। এ ছাড়া সরফরাজ আহমেদের দলের বিপক্ষে জয় পেলে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচ নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করতে পারত টাইগার বাহিনী। তা ছাড়া বিশ্বকাপের এক আসরে নিজেদের সর্বোচ্চ সংখ্যক ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ভাঙার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। ২০০৭ ও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ৩টি করে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ দল। পাকিস্তানকে হারাতে পারলে দ্বাদশ বিশ্বকাপে টাইগারদের জয়ের সংখ্যা দাঁড়াত চারে। শেষ পর্যন্ত মিকি আর্থারের শিষ্যদের বিপক্ষে ৯৪ রানে হেরে যাওয়ায় কোনো লক্ষ্যই পূরণ হয়নি। তবে এই বিশ্বকাপে টাইগারদের প্রাপ্তির খাতা যে একেবারে শূন্য তা নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যতীত আগের সবগুলো ম্যাচেই দারুণ ব্যাটিং করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এর মধ্যে চারটি ম্যাচে টাইগারদের স্কোর ছাড়িয়েছে তিনশ। এই ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও উইন্ডিজ। সবগুলো দলেরই পেস বোলিং অ্যাটাক দারুণ শক্তিশালী। ওয়ানডেতে টাইগারদের সর্বোচ্চ রানের স্কোরটি এসেছে এই বিশ্বকাপেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান। এ ছাড়া গড়েছে রান তাড়ার রেকর্ড। উইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২২ রান তাড়া করে জিতেছে ম্যাশ বাহিনী। তার চেয়েও বড় কথা বড় দলগুলোর বিপক্ষে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করেছে স্টিভ রোডসের শিষ্যরা। ইংলিশ কন্ডিশনে টাইগার ক্রিকেটারদের এমন লড়াকু পারফরমেন্স নজর কেড়েছে সবার। দলীয় সাফল্যের চেয়ে ব্যক্তিগত অর্জনের পাল্লাটা অনেক বেশি ভারী। টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দ্বাদশ বিশ^কাপে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনেক উঁচুতে। ব্যাট হাতে ৬০৬ রান করার পাশাপাশি বোলিংয়ে নিয়েছেন ১১ উইকেট। সহজ কথায় বলা যায়, এটি যেন সাকিবের বিশ^কাপ। ৮ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি ও ৫ হাফসেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এর মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ৫১ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি বল হাতে নেন ৫ উইকেট। বিশ^কাপে এমন কীর্তি আছে কেবল দুজনের। এ ছাড়া এক বিশ্বকাপ আসরে পাঁচশর বেশি রান ও দশের অধিক উইকেট পাওয়া একমাত্র ক্রিকেটারও তিনিই। এবারের বিশ^কাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের তিনটি সেঞ্চুরি রয়েছে। এর দুটিই এসেছে সাকিবের ব্যাট থেকে। তাও আবার ব্যাক টু ব্যাক। এ ছাড়া অপরটি করেছেন মুশফিক। এবারের আসরে বল হাতে দারুণ সফল কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। ৮ ম্যাচে ২০ উইকেট পেয়েছেন তিনি, যা এক বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া টানা ২ ম্যাচে মোস্তাফিজ ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েছেন। কোনো টাইগার বোলার অতীতে এমন কীর্তি গড়তে পারেননি। সব মিলিয়ে বলা যায়, স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হলেও দ্বাদশ বিশ্বকাপে টাইগারদের অনেক প্রাপ্তিও রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App