গতকাল ৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। দেশটির স্বাধীনতা দিবসে প্রথা ভেঙে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে সমালোচনার মুখে পড়লেও আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে রাজনীতির বদলে জাতীয় ঐক্যের উপর জোর দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

প্রায় দুই বছর আগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ফরাসি জাতীয় দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে সামরিক কুচকাওয়াজ ও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রেও এমন প্রথা চালু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

সামরিক কর্মকর্তাদের সংশয় অগ্রাহ্য করে চলতি বছর সামরিক সাজসরঞ্জাম প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন ট্রাম্প। মাথার উপর দিয়ে এমনকি বি-টু স্টেল্থ বোম্বারের মতো সামরিক বোমারু বিমান উড়ে গেল, প্রকাশ্যে যেটি প্রায় কখনোই দেখা যায় না।

ওয়াশিংটনে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণের জন্য বেছে নিয়েও প্রথা ভাঙলেন ট্রাম্প।

উল্লেখ্য, সেখানে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের বিশাল ভাস্কর্য রয়েছে। এ ছাড়া ১৯৬৩ সালে সেখানে নাগরিক আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং তার বিখ্যাত ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণ দিয়েছিলেন। বিগত প্রায় সাত দশকে অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে সেখানে ভাষণ দেননি।

গত আড়াইশো বছরে মার্কিন সেনাবাহিনী ও মার্কিন নায়কদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন ট্রাম্প। দেশাত্মবোধের আবেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কী অসাধারণ এই দেশ। আমেরিকানদের কাছে অসম্ভব বলে কিছুই নেই।’

মার্কিন ইতিহাসের উজ্জ্বল সাফল্যগুলো তুলে ধরে ট্রাম্প অদূর ভবিষ্যতে তার কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, চাঁদে আবার মানুষ পাঠানো হবে এবং মঙ্গল গ্রহের মাটিতেও মার্কিন পতাকা ওড়ানো হবে।

উল্লেখ্য, সম্ভবত চলতি দশকের শেষে অথবা তারও পরে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে নাসা।

স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ অবশ্য পুরোপুরি রাজনীতিবর্জিত ছিল না। মেক্সিকো সীমান্তে শরণার্থীদের প্রতি কড়া আচরণের কারণে সমালোচিত সীমান্তরক্ষী ও শুল্ক সংস্থার আলাদা করে প্রশংসা করেন ট্রাম্প। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে এর জন্য কৃতিত্বের দাবি করেননি ট্রাম্প। তবে সমালোচকদের আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে তিনি নিজের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ও নীতি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রতিপক্ষদের আক্রমণ করা থেকেও বিরত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ছুটির দির ৪ঠা জুলাইয়ে সাধারণত হাজার হাজার মানুষ ওয়াশিংটনের ‘ন্যাশানল মলে’ গিয়ে হালকা মেজাজে নানা ধরনের মজা করেন এবং আতশবাজি পোড়ানো দেখেন। বৃহস্পতিবার ঝড়বৃষ্টির কারণে অনেকে সেখানে না গেলেও ট্রাম্প অনুরাগী ও প্রতিবাদী বিক্ষোভকারীদের সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না।

মূল অনুষ্ঠানে মূলত ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের অনুগত ব্যক্তি ও প্রেসিডেন্টের পুনর্নির্বাচন অভিযানের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। তবে গোটা অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন করতে ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় পার্ক রক্ষাণাবেক্ষণ তহবিল থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সমালোচনার মুখে পড়েছে। এমনকি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে।

সূত্র: ডয়েচে ভেল।