কর্মপরিবেশ-নিরাপত্তার অভাবে বাড়ছে শ্রমিক মৃত্যু
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০১৯, ০৮:৪৫ পিএম
গাজীপুরের একটি স্পিনিং মিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি আবারো সামনে এসেছে। এ ঘটনায় ৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩০ শ্রমিক। এমন ঘটনা দুঃখজনক। আমরা নিহত শ্রমিক পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। গত তিন বছরে গাজীপুরেই চারটি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে প্রায় ৬৫ জনকে জীবন দিতে হয়েছে।
দেশে বিভিন্ন কলকারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়লেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও দায়িত্বশীলদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। খবরে প্রকাশ, গত মঙ্গলবার দুপুরে শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকার অটো স্পিনিং কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কারখানার ব্যাক প্রসেসিং ইউনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়ে পরে তা বিভিন্ন ইউনিটে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহতদের স্বজন ও সহকর্মীদের দাবি, আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। এর আগে কারখানায় বড় ধরনের বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল। গাজীপুরের টঙ্গীতে টাম্পাকো ফয়লস নামে একটি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৩৯ শ্রমিক। একই বছরের জানুয়ারিতে গাজীপুরে একটি টায়ার কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুনে পাঁচজন নিহত হন।
২০১৭ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মাল্টি ফ্যাবস নামে একটি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জন মারা যান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে কারখানাগুলোতে বয়লারসহ বিভিন্নভাবে বিস্ফোরণের ঘটনা যেন নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এসব নিছক দুর্ঘটনা নয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের এসব গাফিলতির জবাবদিহি প্রয়োজন।
আশপাশে পানি না থাকায় গাজীপুরে স্পিনিং মিলসে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীনুর ইসলাম। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বড় গুদামের ওপরে তাপ শোষণের জন্য লাগানো ফোমজাতীয় দাহ্য ফলস সিলিং ও নিচে তুলা থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণের জন্য কারখানায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলেও পানি মজুত রাখার মতো রিজার্ভ ট্যাঙ্কি ছিল না। এত বড় কারখানা ও গুদামের জন্য রিজার্ভ ট্যাঙ্কির আয়তন ছিল কম। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কাদের গাফিলতি কাজ করেছে তা শনাক্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের দেশে কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত থাকে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের মুনাফার দিকে যতটা মনোযোগ থাকে, নিরাপত্তার দিকে তারা ততটাই উদাসীন থাকেন। এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। দেশে শিল্পায়নের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে শিল্প খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশের বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্ব দিতে না পারলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
কারখানা সংস্কার এবং অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিল্প মালিক-শ্রমিক সবাই লাভবান হবেন। কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্প মালিক এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।