×

মুক্তচিন্তা

জিয়ার মাজার সরানো এবং প্রাসঙ্গিক কথা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০১৯, ১০:১৫ পিএম

গত ২৯ জুন শনিবার ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংসদ ভবনের মূল নকশার বাইরে জিয়াউর রহমনের কবরসহ সব স্থাপনা সরানোর দাবি করেছেন। এর আগেই লুই কানের নকশা এলে সেসব অবৈধ স্থাপনা সরানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। প্রশ্ন হলো এই নীতিগত সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ কেবলই কি লুই কানের নকশা? নাকি এর মধ্যে রয়েছে জাতির সামনে ইতিহাস থেকে উত্থিত বড় এক নৈতিক প্রশ্ন?

ছোটবেলায় জানতাম, মৃত্যুর পর মানুষ পার্থিব হিসাব-নিকাশের ঊর্ধ্বে চলে যায়। মরার বাড়া তো গাল নেই- ‘গোরা’ উপন্যাসে কথাটা লিখেছিলেন কবিগুরু। ‘মৃত্যুর পরে’ কবিতায়ও লিখেছিলেন, ‘যত কিছু ভাল-মন্দ/যত কিছু দ্বিধা-দ্বন্দ্ব/কিছু আর নাই/বলো শান্তি, বলো শান্তি/দেহ সাথে সব ক্লান্তি/হয়ে যাক ছাই।’ কিন্তু বয়স হওয়ার পরে দেখছি, প্রতিটি ক্রিয়ারই আছে প্রতিক্রিয়া। যত বড় ক্রিয়া, তত বড় হয় প্রতিক্রিয়া। এর ভেতর দিয়েই এগিয়ে চলে সবকিছু। ঢিল মারলে পাটকিল খেতে হয়, এক মাঘে শীত যায় না, যেমন কর্ম তেমন ফল, যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল প্রভৃতি ধরনের কত যে প্রবাদ রয়েছে আমাদের দেশে। যদি কাউকে তুমি নিচে ফেলতে চাও, তবে সে তোমাকে নিচেই বেঁধে রাখবে, এটাই চিরায়ত নিয়ম। তাই অন্যায় ও পাপ কাজ করে কেউ পার পেয়ে যেতে পারে না। রাষ্ট্র ও রাজনীতি নির্দিষ্ট সীমায় সর্বব্যাপী শতলক্ষ মানুষ নিয়ে প্রচার-অপপ্রচারের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। তাই ভালো-মন্দ ক্রিয়ার ফল এখানে দীর্ঘস্থায়ী। তবে ভালো ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া যেমন সুখকর, তেমনি মন্দ ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া সবসময়েই হয় ভয়ঙ্কর। রাজনীতির মাঠে ‘সূচাগ্র মেদেনী’ও কেউ ছাড় দিতে চাইবে না। তাই মৃত রাজনৈতিক নেতার লাশ বা কবর নিয়েও এখানে চলে রাজনীতি। ষাটের দশকের প্রথমদিকে পূর্ববাংলার রাজনৈতিক গণপরিচিত নেতাদের মধ্যে প্রথম ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী, চুয়ান্ন সালে ২১ দফার ভিত্তিতে গঠিত যুক্তফ্রন্টের তিন প্রধান নেতার এক নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। পাকিস্তানি পতাকা অর্ধনমিত করে, সারা পাকিস্তানের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রেডিও পাকিস্তান সব অনুষ্ঠান বন্ধ রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হাইকোর্টের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। এর ২০ মাস পর ১৯৬৩ সালে ৫ ডিসেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতের এক হোটেলে রহস্যময়ভাবে মৃত্যুবরণ করেন যুক্তফ্রন্টের অপর নেতা, অবিভক্ত বাংলা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি ছিলেন সেনাশাসক আইয়ুবের সাক্ষাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী। অস্বাভাবিক মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই তখন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়। অভিযোগ তোলার কারণে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সরকার মামলাও করে। এই পরিবেশেও শেরে বাংলার মাজারের পাশেই তাঁকে কবরে শায়িত করা হয়। মৃত্যুর পর পাকিস্তানের কুখ্যাত সেনাশাসক আইয়ুব সরকারের পক্ষ থেকে বাংলার ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে কটূক্তি করা হয়েছে বলে মনে পড়ে না। প্রসঙ্গত, এর আগেই এই স্থানে কবর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর ১৯৬৪ সালের ২২ অক্টোবর প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা, অবিভক্ত বাংলা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, মাতৃভাষা বাংলাবিরোধী, একুশে ফেব্রুয়ারি গুলি চালানোর দায়ে অভিযুক্ত, পাঞ্জাবে সামরিক শাসন জারি করে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতার পথ দেখানোর অগ্রদূত, নিশান-ই-পাকিস্তান খেতাবপ্রাপ্ত খাজা নাজিমউদ্দিনের মৃত্যু হলে সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। বাঙালির প্রিয় ওই দুই নেতার পাশে কেন পাকিস্তানপন্থি ওই নেতার কবর দেয়া হলো তা নিয়ে তখন কোনো প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়নি। তিন নেতার মাজার হিসেবেই তা পবিত্র স্থান রূপে গণ্য। মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বরে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই কবরস্থান থেকে পূর্ববাংলার নাম ‘বাংলাদেশ’ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়ে এই স্থানটিকে ঐতিহ্যের মহিমান্বিত স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তবে এই ঐতিহ্য সত্ত্বেও সত্যটা হলো রাজনৈতিক অঙ্গনে মৃতের প্রতি নিদারুণ অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা বাঙালি জাতি দেখিয়েছে ভ্রাতৃঘাতী হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময়। কুকুর বেড়ালের মতো রাস্তা-ঘাটে-নদীতে পড়ে থেকেছে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের মৃতদেহ। একই ঘটনা ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে দেশীয় ঘাতক-দালাল-রাজাকার-আলবদর-আলশামসরা। শহীদ বুদ্ধিজীবী অনেকের মৃতদেহ টেনেহেঁচড়ে একত্রে কবরস্থ করা হয়েছে। অনেকের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। এসবই ছিল বাঙালি জাতিসত্তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানপন্থি দ্বিজাতিতত্ত্ববাদীদের তীব্র ক্রোধ ও জিঘাংসার বহিঃপ্রকাশ। বলাই বাহুল্য, পাকিস্তানি আমলে বাঙালির স্বাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির প্রধান নেতা। তাই তিনি হন জাতিবিরোধীদের টার্গেট। পঁচাত্তরের কালরাতে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়িতে অবজ্ঞায়-অযত্নে-অশ্রদ্ধায় ফেলে রাখা হয়। জাতির শত্রুরা ছিল খুবই ধুরন্ধর। যেমন সুপরিকল্পিত ছিল হত্যাকাণ্ড তেমনি সুদূরপ্রসারী ছিল এসব স্বঘোষিত খুনির দৃষ্টিশক্তি। পরিবারের সবাইকে রাজধানী ঢাকায় কবর দেয়া হলেও বঙ্গবন্ধুকে কবর দেয়া হয় সুদূর পল্লীতে। কেননা এসব জাতীয় শত্রুদের অনুমান ছিল জীবিত বঙ্গবন্ধুর চাইতে মৃত বঙ্গবন্ধু হবেন শক্তিশালী এবং শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে চিরকাল বাঙালি জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর কবর অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। জাতির পিতাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিয়ে যাওয়াই ছিল খুনিচক্র ও তাদের মাস্টারমাইন্ডদের হীন উদ্দেশ্য। একই উদ্দেশ্যে জাতির পিতার লাশ কবরস্থ করার আগ থেকেই শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিকৃত অপপ্রচার। যা আগে মৃত্যুর পর রাজনীতিতে দেখা যায়নি। কত সব জঘন্য অপপ্রচার ও মিথা প্রচার যে করা হয়েছে, ওই মহান নেতার প্রতি, তা ভাবলে এখনো পড়ন্ত বয়সে তরুণদের মতো রক্ত গরম হয়ে ওঠে। সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি, হতেও পারে না। আজ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরস্থান হয়ে উঠেছে বাঙালি জাতির প্রধানতম তীর্থক্ষেত্র। একই ধারাবাহিকতায় জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করে চরম অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধায় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু কি আশ্চর্য! যেই না সেনাশাসক জিয়া গায়ের জোরে ক্ষমতায় বসে প্রথমে হ্যাঁ-না ভোট আর পরে প্রহসনের নির্বাচন করে গদি পাকাপোক্ত করলেন, তেমনি সংসদ প্রাঙ্গণে একে একে কবর দেয়া হতে থাকল পাকিস্তানিদের দোসর ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সবুর খান, শাহ আজিজুর রহমান, মশিউর রহমান যাদু মিয়া প্রমুখদের। পরিকল্পনা ছিল গণতন্ত্রের স্মারক সংসদ ভবনে পাকিস্তানপন্থি নেতাদের কবরস্থান বানিয়ে সেই ক্ষেত্রটিকে জাতির পবিত্র স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাই বিশ্বনন্দিত স্থপতি লুই কানের নকশার কথা তারা স্মরণে রাখেনি। ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে যারা যেতে চায়, তারা কখনো ঘুঘু পাখির মতো ধান দেখে ফাঁদ দেখে না। ইতিহাস যে ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ নেয় তা তারা ভুলে যায়। প্রকৃত বিচারে সামরিক বাহিনীর সাথী বন্ধুদের হাতে জিয়ার মৃত্যু এবং মরদেহ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ইতিহাসের চরমতম প্রতিশোধ হিসেবে গণ্য হতে বাধ্য। জিয়ার মৃতদেহ নিয়ে যে প্রহসনের নাটক তার সাঙ্গোপাঙ্গরা করেছে এর জুরি মেলা ভার। খুনিরা সেই টেনশনের সময় কোথায় কবর দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াকে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকাটাই স্বাভাবিক। আর কবর যদি সেটাই হতো আর জিয়া যদি হতেন জাতীয় মূলধারা আন্দোলন-সংগ্রামের নেতা, তবে যেখানেই কবর হোক না কেন, নিঃসন্দেহে তা হয়ে উঠত গণশ্রদ্ধা প্রদর্শনের স্থান। কিন্তু মানুষকে তাৎক্ষণিক চমক ও বিভ্রান্ত করার জন্য যেমন ছেঁড়া জুতা ও ভাঙা সুটকেসের প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছিল, তেমনি প্রয়োজন পড়েছিল সেই অসুনির্দিষ্ট কবর থেকে মরদেহ ঢাকায় এনে কবর দেয়া। বলাই বাহুল্য, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের মাধ্যমে দেশে যিনি গণতন্ত্র হত্যা করে পাকিস্তানের মতো সামরিকতন্ত্রের ধারা প্রবর্তন করলেন, তাকেই কবরস্থ করা হলো সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে, সংসদ অধিবেশন স্থানের নাকের ডগায়। বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হলো বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই কানকে। বাস্তব বিচারে কবর থেকে মৃতদেহ তুলে আনার দৃষ্টান্ত রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা করেছে ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেয়া, দ্বিজাতিতত্ত্বকে কবর থেকে তুলে এনে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে আনার দল বিএনপি। উদ্দেশ্য ছিল কবর দেখিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করা, রাজনৈতিক ফায়দা লোটা। প্রয়াত সেনাশাসক রাষ্ট্রপতি জিয়া চেয়েছিলেন সামরিক ফরমান বলে রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিতে আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ভুয়া জন্মদিন পালনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণ দিনটিকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিল। সেই ফায়দা লোটার ক্ষেত্র এখন সীমিত, প্রায় নিঃশেষিত। নিজেরাই জামায়াতকে সঙ্গে রেখে, হাওয়া ভবনের কীর্তি ঘটিয়ে, দুই-দুইবার গৃহযুদ্ধ বাধানোর অপচেষ্টা এবং গণতন্ত্র ও জাতিবিরোধী কর্মকাণ্ড করে এখন দেউলিয়া ও ছত্রখান। ইতিহাস বিএনপির বিরুদ্ধে নিয়েছে যথাযোগ্য প্রতিশোধ। কবর সরানোর যে পথ দেখিয়েছে বিএনপি, যেভাবে স্থাপত্যের তোয়াক্কা না করে কবরস্থান নির্মিত করেছে; তাতে নিজের ফাঁদে নিজেই পড়েছে হতভাগ্য ও বিধ্বস্ত বিএনপি। গত ২৯ জুন শনিবার ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংসদ ভবনের মূল নকশার বাইরে জিয়াউর রহমনের কবরসহ সব স্থাপনা সরানোর দাবি করেছেন। এর আগেই লুই কানের নকশা এলে সেসব অবৈধ স্থাপনা সরানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। প্রশ্ন হলো এই নীতিগত সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ কেবলই কি লুই কানের নকশা? নাকি এর মধ্যে রয়েছে জাতির সামনে ইতিহাস থেকে উত্থিত বড় এক নৈতিক প্রশ্ন? জিয়ার কবরের স্থান কি সংসদ ভবন হওয়ার জন্য উপযুক্ত? মোটেই যে তা নয় এমনটা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সামরিক শাসকের কবর থাকে কীভাবে সংসদ ভবনে! অবদান মূল্যায়নের ভিত্তিতে বিশ্বে কবরস্থান পরিবর্তনের অনেক উদাহরণ রয়েছে। তাই অবস্থাদৃষ্টে ধারণা করা হচ্ছে, এসব কবর সরানো বিষয়টি এখন সময়ের অপেক্ষা করছে। হত্যা-ক্যু-পাল্টা ক্যুর রক্তঋণ শোধ হবে এই কবর অপসারণের মাধ্যমে। তবে দ্বিধাদ্বন্দ্ব না রেখেই বলি, পঁচাত্তরকে কেন্দ্র করে অঘটনঘটনপটিয়সীর মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনবিরোধী যত কিছুই তিনি করুন না কেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের একজন সম্মানিত সেক্টর কমান্ডার। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সেই কঠিন দিনগুলোতে তিনি বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণাবাণী পাঠ করেছিলেন। জাতি হয়েছিল উজ্জীবিত। যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন তিনি ছিলেন দেশের একজন রাষ্ট্রপতি। তাই যতটুকু সম্মান ও মর্যাদার যোগ্য তিনি ততটুকু যেন কবর অপসারণ ও কবর স্থাপনে পান সে দিকে লক্ষ রাখা সরকারের একান্ত কর্তব্য। সবশেষে এটাই বলতে হয় যে, এক বিষয়ে যৌক্তিকতা ও নৈতিকতা দেখিয়ে অন্যসব ক্ষেত্রে অনৈতিক কিছু করা ও প্রশ্রয় দেয়া কিন্তু ভারসাম্য রক্ষার সহায়ক নয়। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ এবং গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার ওয়াদাবদ্ধ। ইতোমধ্যে এমন মত সামনে আসছে যে, সরকারি অফিসগুলোতে বাম হাতের কারবারের এখন পোয়াবারো। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে কি লাভ হলো, ‘সার্ভিস চার্জের’ হার তো বাড়ছেই প্রভৃতি সব কথা উঠছে। প্রায় প্রতিটি সন্ত্রাস ও ধর্ষণের ঘটনায় সরকারি দলের তথাকথিত ক্যাডারদের নাম উঠে আসছে। মস্তানদের আড়াল করারও অভিযোগও বাড়ছে। আর ভোট ও গণতন্ত্র নিয়ে আছে নানা কথা। তাই সহজ বিবেচনায়ই বলা যায়, কবর অপসারণের সঙ্গে ওইসব নৈতিক কাজও সরকারকে জনগণের দৃষ্টিগোচরে আনতে হবে। তবেই বুমেরাংয়ের মধ্যে না পড়ে করা যাবে ইতিহাসের দায় শোধ।

শেখর দত্ত : রাজনীতিক ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App