×

মুক্তচিন্তা

দুর্ভোগের বিষয়টি সরকারের ভাবা উচিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫৩ পিএম

অর্থবছরের বাজেট পাসের পর গ্যাসের দাম আরেক দফা বাড়ল। ঘোষিত নতুন মূল্যহার অনুযায়ী, সব ধরনের গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে গড়ে ২ টাকা ৪২ পয়সা বা ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বিবেচনায় এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। বর্ধিত এ গ্যাসের দাম গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। এ দাম বৃদ্ধির ফলে বছরে সব গ্রাহকের অতিরিক্ত খরচ হবে ৮ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

এভাবে গ্যাসের দাম বাড়ায় গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক ও অন্যায্য বলছে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। আর ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ বলছেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি অনেক পণ্য ও সেবার দামও বাড়বে। রবিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

বর্ধিত মূল্যহার অনুযায়ী বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের এক চুলার মাসিক বিল ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৯২৫ টাকা হয়েছে। দুই চুলার মাসিক বিল ৮০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭৫ টাকায়। অর্থাৎ উভয় ধরনের চুলাতেই ১৭৫ টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। আর গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত মিটারভিত্তিক প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৬০ পয়সা হলো।

গ্যাস বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হবে সরকারকে। ফলে বেড়ে যাবে জীবনযাত্রার ব্যয়। এর চাপ পড়বে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর। গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য দেখানো হচ্ছে অদ্ভুত সব যুক্তি। সরকার বাসাবাড়িতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ তো বন্ধ করেছেই, এখন পাইপলাইন গ্যাসের ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করতে চায়। দেশের অধিকাংশ মানুষ পাইপলাইনের গ্যাস পায় না।

তাদের অনেকেই বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করে, যার দাম অনেক বেশি। এই দুই ধরনের ব্যবহারকারীর মধ্যে বৈষম্য কমানোও সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সে কারণে নাকি বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম বেশি বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, পাইপলাইনের গ্যাস ও সিলিন্ডার গ্যাসের দামের ব্যবধান কমাতে পাইপের গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে কেন? সিলিন্ডারের গ্যাস সুলভ ও সহজলভ্য করার কথা তো সরকার থেকে অনেকদিন ধরেই বলা হচ্ছে।

কিন্তু তার তো কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। গ্যাসনির্ভর শিল্পোৎপাদনের ব্যয় বাড়লে উৎপাদিত পণ্যমূল্যও বাড়াবে। দেখা যাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অজুহাত তুলে বিদ্যুতের দামও বাড়ানোর পাঁয়তারা চলবে। গ্যাসের অপচয় বন্ধ করা, সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে স্রেফ দাম বাড়ানো কোনোভাবেই যৌক্তিক চিন্তা নয়।

ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন না ঘটিয়ে শুধু দাম বাড়িয়ে লাভ-লোকসানের হিসাব মেলানোর প্রবণতা থেকে সরে আসা উচিত সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর। সরকারকে জনসাধারণের সার্বিক দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে মনে করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App