×

জাতীয়

মামলার কার্যক্রম আটকে আছে ময়নাতদন্তেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০১৯, ১২:৫৫ পিএম

মামলার কার্যক্রম আটকে আছে ময়নাতদন্তেই
শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীনের ছেলে ও যুদ্ধাপরাধের মামলার অন্যতম সাক্ষী ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন জাহিদের (৫২) রহস্যময় মৃত্যুর পর বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো জানা যায়নি- তিনি কি সুপরিকল্পিত হত্যা-কাণ্ডের শিকার হয়েছেন, নাকি পারিপার্শ্বিক চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। পুলিশ বলছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগ থেকে সুমন জাহিদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় থমকে আছে মামলার তদন্তকাজ। অন্যদিকে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, মহাখালীর পরীক্ষাগার থেকে ভিসেরা রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দিতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে শহীদ বুদ্ধিজীবীর ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি এখনো রহস্যাবৃত্তই রয়ে গেছে। তবে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, আগামী ২-৩ জুলাইয়ের মধ্যেই সুমন জাহিদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হবে। এ বিষয়ে গতকাল তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, মহাখালীর পরীক্ষাগার থেকে ভিসেরা রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় এতদিন আমরা সুমন জাহিদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিতে পারিনি। তবে ইতোমধ্যেই মহাখালীর ল্যাব থেকে ভিসেরা রিপোর্ট আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এখন প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। আগামী ২ অথবা ৩ জুলাই সুমন জাহিদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হবে। ২০১৮ সালের ১৪ জুন সকালে হাঁটার কথা বলে রাজধানীর উত্তর শাজাহানপুরের বাসা থেকে বের হন সুমন জাহিদ। এরপর সকাল ১০টার দিকে তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন পরিবারের সদস্যরা। দক্ষিণ খিলগাঁও বাগিচা এলাকায় ৭৬নং জান্নাতুল নাঈম মহিলা মাদ্রাসার সামনে রেল লাইনের পাশে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পুলিশ সুমন জাহিদের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে। পরে এ ঘটনায় কমলাপুর জিআরপি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ায় পরিকল্পিতভাবে সুমন জাহিদকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন না। এগুলোকে ষড়যন্ত্র বলছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে দীর্ঘ এক বছরেও মৃত্যুর রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহতের স্ত্রী কাজী দ্রাকসিন্দা জেবিন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ায় সুমন জাহিদ ক্রমাগত হুমকি পেতেন। ওই হুমকিদাতারাই সুমনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। কিন্তু তার মৃত্যুর দীর্ঘ এক বছরেও কেন ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হয়নি? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এদিকে মামলা তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর জিআরপি থানার ওসি ইয়াসিন মজুমদার গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, তদন্তে নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। ঢামেক ফরেনসিক বিভাগ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত সুমন জাহিদের পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন) রিপোর্ট পাইনি। ফলে তার মৃত্যুর ঘটনাটি ‘পরিকল্পিত হত্যা না আত্মহত্যা’ সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়ার পর সে অনুযায়ী আমরা নতুন করে তদন্ত শুরু করব। এর আগে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ৯ বছরের শিশু নাদিয়ার বরাত দিয়ে ওসি ইয়াসিন মজুমদার জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন সকালে রেললাইন সংলগ্ন নাদিয়াদের দোকান থেকে সুমন জাহিদ চা পান করেন। পরে কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা তিতাস ট্রেনের সামনে তিনি নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য অনুযায়ী, এটি আত্মহত্যা। কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়ায় তার মৃত্যুর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App