×

মুক্তচিন্তা

এই ভয়ঙ্কর যাত্রা বন্ধ করতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০১৯, ০৮:২১ পিএম

প্রাণঘাতী ঝুঁকি-বিপত্তির পরও অবৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হচ্ছে না। কারণ হিসেবে সরকারের নীতি ও করণীয় সম্পর্কে স্বচ্ছতার অভাবকে দায়ী করা যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রায় সব পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই নানা উপায়ে অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এতে তারা প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে।

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রায় মৃত্যুর খবর নতুন নয়। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও জীবনে স্বপ্নের হরিণ ধরতে ঝুঁকি নিয়ে আফ্রিকার দেশ লিবিয়া থেকে ইউরোপে প্রবেশ করছে বাংলাদেশিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য মতে, ভূমধ্যসাগর ব্যবহার করে ইউরোপে প্রবেশকারীর সংখ্যায় বাংলাদেশিদের অবস্থান চতুর্থ।

গত সাত বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৯০৬ জন। ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যানবিষয়ক দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮-১৭ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথটি হচ্ছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৪-১৭ সাল পর্যন্ত ওই পথ দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় প্রতি ৫০ জনের একজন মারা গেছে।

আর এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অন্তত ১৭ হাজার অবৈধ অভিবাসী ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে ঢুকে পড়েছে। এ সময়ে সাগরে হারিয়ে গেছে অন্তত ৪৪৩ জন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে মেক্সিকোর দুর্গমপথে প্রায় ২০০ বাংলাদেশি আটক হন। তাদের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ৩৯ জন বাংলাদেশি নিখোঁজ হন।

সর্বশেষ তিন সপ্তাহ ধরে তিউনিসিয়ার সাগরে নৌকায় ভাসা ৬৪ বাংলাদেশির মধ্যে ১৭ জন দেশে ফিরেছেন গত শুক্রবার। বিদেশ গমনেচ্ছুদের দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। মৌখিক প্রচারণায় বলা হয় শিপ দিয়ে তারা ইউরোপের মানবাধিকার দেশ ইতালিতে পাড়ি জমান। বাস্তবতা হলো, শিপ নয় এ যেন মৃত্যুর এক ফন্দির নাম প্লাস্টিকের বোর্ড।

প্রত্যক্ষদর্শী এমন অনেকেই আছেন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে জীবন ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশযাত্রা রোধে ও দালাল প্রতারকদের দৌরাত্ম্য কমানোর ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় জনশক্তি রপ্তানির উদ্যোগ বেশ আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু তা কাক্সিক্ষত মাত্রায় কার্যকর না থাকায় এসব অবৈধ তৎপরতা থামেনি।

অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রা রোধ ও বিদেশে নিরাপদ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বৈধ পথে কম খরচে প্রবাসে কর্মসংস্থানের সরকারি উদ্যোগে গতি আনা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করা জরুরি। প্রায় সাত বছর ধরে কোনো বাংলাদেশি অভিবাসী ইতালিতে বৈধভাবে প্রবেশ করতে পারছে না।

ইতালির শ্রমবাজার নতুন করে উন্মুক্ত করার ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। আগামীতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে অভিবাসী ও উদ্বাস্তু সংক্রান্ত বৈশ্বিক চুক্তি করার ব্যাপারে বাংলাদেশকে কণ্ঠ সোচ্চার রাখতে হবে নিজেদের স্বার্থেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App