×

সাময়িকী

কামাল লোহানী আমার অহংকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০১৯, ০৭:১৪ পিএম

কামাল লোহানী আমার অহংকার
কামাল লোহানী আমার অহংকার
কামাল লোহানী আমার অহংকার

“জীবনে পথ চলতে লোহানীকে দেখেছি নির্মেদ শরীর থাবা দিয়ে সে ধেয়ে আগে চলে যায়। কেবলই মহেন্দ্র নিন্দিত কান্তির জন্যই তা হতে পেরেছে। শ্যামা নৃত্যনাট্যে সুন্দরী শ্রেষ্ঠা শ্যামা তো লোহানীকে অর্থাৎ বজ্রসেনকে উদ্দেশ্য করেই গেয়ে উঠেছিল, আহা, মহেন্দ্র নিন্দিত কান্তি, উন্নতদর্শন। তা দেবতাদের ঘি খাওয়া শরীরে চর্বি একটু থাকেই, লোহানীর তা ছিল না। কঙ্কালের ওপর চামরার একটা চাদর পরানো ছিল মাত্র। এখনকার সবাই কি জানে লোহানী বজ্রসেন নাচতো? কিন্তু গান সে গাইতো না। আবার সমস্ত গা গরম করা গণসঙ্গীত ওর ঠোটস্থ ছিল। ইসবার লড়াই লাড়নেওয়ালা বাঁচকে না যানে পায়েগা বলে কি হুংকারটাই না দিত।”

আমার বাবা সম্পর্কে সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক ওয়াহিদুল হক এভাবেই বর্ণনা দিয়েছিলেন। তাঁর কথা ধার করেই বললাম, কথাটা যে আমাদেরও। জ্ঞান হওয়া অবধি এভাবেই দেখেছি তাঁকে আমরা। আজো এর ব্যতিক্রম নেই। অধিকার হরণের প্রতিবাদে, আদায়ের সংগ্রামে, তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন যেমনই তেমনই বিজয়ের গৌরবে মেতে ওঠেন যুবকের মতো। আমরাও তাল রাখতে কখনো কখনো হিমশিম খাই। তিনি কিন্তু এই ৮৬ বছর বয়সেও আগের মতোই তেজি মনে, শরীর কখনো বাদ সাধে বটে কিন্তু সেও ক্ষণিকের জন্য। তাইতো যুদ্ধাপরাধী নির্মূলে, ’৭২-এর সংবিধান পুনর্বহালের দাবিতে কিংবা শাহবাগের গণজাগরণে যেখানেই সংগ্রামী জনতার মিছিল, যেখানেই মানুষের মুক্তির আকুতি সেখানেই সবার আগে জাজ্বল্যমান উপস্থিতি তাঁর।

বাবা কামাল লোহানী নামে পরিচিত হলেও পারিবারিক নাম তাঁর ‘আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী’। সবাই ডাকতো ‘দুলাল’ নামে। আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী ও রোকেয়া খান লোহানীর দ্বিতীয় সন্তান হলেও শৈশবেই হারান বড় ভাইকে। আমাদের আদি দাদা-বাড়ি ছিল যমুনা পাড়ে, খাস কাউলিয়ায়। ধারণা করা হয় ৪০০ বছর আগে ইসলাম খাঁর ঢাকা বিজয়কে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে এ অঞ্চলেই ঘাঁটি গেড়েছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। আগ্রাসী যমুনা-গর্ভে বাড়িঘর জমি-জিরেত চলে যাওয়ার পর আমার দাদা সিরাজগঞ্জেরই উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। আর এই সনতলা গ্রামেই ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন আমাদের বাবা কামাল লোহানী জন্মগ্রহণ করেন।

মাত্র ৬ বছর বয়সে মার মৃত্যুতে তাঁর বাবা তাঁকে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেন নিঃসন্তান ফুফুর কাছে। সেখানে তিনি বেড়ে উঠতে লাগলেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের এক বিভীষিকাময় দুর্যোগের মধ্যে কখনো ঘরে, কখনো বা ট্রেঞ্চে। সেই কৈশোরেই বাবা শুনেছিলেন যুদ্ধের সাইরেন, দেখেছিলেন জাপানি বোমা, মানুষের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তর, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।

দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে পাবনা চলে এলেন। জিলা স্কুলে ভর্তি হলেন। ১৯৫২ সাল, মাধ্যমিক পরীক্ষার বছর। ৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারির রক্ত ফিনকি দিয়ে যখন পাবনা পৌঁছল, তখন বিশ্বযুদ্ধ, সা¤্রাজ্যবাদের থাবা, মন্বন্তর আর দাঙ্গা দেখা তারুণ্যে উদ্দীপ্ত কিশোর কামাল লোহানী ছুটে বেরিয়ে এলেন, কণ্ঠ উচ্চকিত করলেন মিছিলে, হত্যার প্রতিবাদে। রাজনীতিতে সবক নিলেন তিনি ঐ বায়ান্নর একুশ, বাইশ আর তেইশে ফেব্রুয়ারির রক্ত ধোয়া দিনগুলোর সংঘাতে।

পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ নির্বাচনে সমমনাদের নিয়ে জোট বাঁধলেন, গড়লেন ‘পাইওনিয়ার্স ফ্রন্ট’। লড়লেন নির্বাচনে এবং নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করলেন। এই ফ্রন্টের সদস্যদের সাথেই গড়ে তুললেন প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন, পাবনা জেলা শাখা। সেই সময় বেশ সক্রিয় হয়ে উঠলেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে, উপস্থাপনা, গ্রন্থনা এবং আবৃত্তিতে।

১৯৫৩ সালে ছাত্র হত্যাকারী নূরুল আমিনের পাবনা আগমন ও মুসলিম লীগ সম্মেলনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করায় বাবা পাবনার রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীদের সাথে প্রথম গ্রেপ্তার হলেন। এরপরে ১৯৫৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারিতে পাবনায় এবং ১৯৫৪ সালের ১ জুনে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হলেন বাবা এবং ঈদের দিন পাবনা জেলে ‘রাজবন্দি’ হিসেবে কারাজীবন শুরু করলেন, কিছুদিন পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার।

১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে তৃতীয় দফা কারাগার থেকে মুক্তির পর রীতিমতো রাজনীতি প্রভাবিত এবং মার্কসবাদের অনুসারী হয়ে ফিরে এলেন পাবনায়। এ যেন জিনের ধারায় প্রবাহিত হয়েই এসেছিল তাঁর মাঝে কেননা তাঁরই পূর্বপুরুষ গোলাম আম্বিয়া খান লোহানী সোভিয়েত ইউনিয়নে উপনীত হয়েছিলেন তৃতীয় আন্তর্জাতিকের সম্মেলনে। উপনিবেশ-ভারতের মুক্তি আন্দোলন সম্পর্কে গোলাম আম্বিয়া খান লোহানী ও এম এন রায়ের যৌথ মতকে লেনিন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছিলেন।

পরবর্তী সময়ে স্তালিনের নৃশংসতায় তিনি ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুবরণ করেন। সে অর্থে মার্কসবাদ কামাল লোহানীর পারিবারিক ঐতিহ্য যা আজো প্রবহমান আমাদের মাঝেও। নিয়মানুবর্তী অভিভাবকদের শাসন উপেক্ষা করে ছোট চাচা শিক্ষাবিদ তাসাদ্দুক লোহানীর কাছ থেকে মাত্র ১৫ টাকা চেয়ে নিয়ে অনিশ্চিতের পথে ঢাকা অভিমুখে পা বাড়িয়েছিলেন। তখন চোখে তাঁর বিপ্লবের ঐশ্বর্য। তাই জীবনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আর শুরু হয়েছিল তাঁর নিজের পায়ে দাঁড়াবার সংগ্রাম। চাচাতো ভাই ফজলে লোহানীর সহযোগিতায় ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে দৈনিক ‘মিল্লাত’ পত্রিকায় সহসম্পাদক হিসেবে হাতেখড়ি হলো সাংবাদিকতায়। সেই থেকে তাঁর কলমের আঁচড়ে তৈরি হতে লাগল এক একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।

১৯৫৭ সালে ন্যাপ-এ যোগ দেয়ার মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হলেন বাবা। ১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে দেশ বিপন্ন হলে, বাবা আত্মগোপন করতে বাধ্য হলেন। ১৯৬২-র ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো। কামাল লোহানীর নামে জারি হলো হুলিয়া। ১৩ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে দৈনিক ‘আজাদ’ থেকে ঘরে ফেরার পথে গ্রেপ্তার হলেন তিনি। এই সময় ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের ২৬ নম্বর সেলে শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, রণেশ দাশগুপ্ত, আবুল মনসুর আহমেদ, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, হায়দার আকবর খান রনো, অধ্যাপক রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই একসাথে ছিলেন। সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদের সাথে গড়ে ওঠা সখ্য কতটা গভীর ছিল তা আমরাও দেখেছি যা মতাদর্শগত ভিন্নতা সত্ত্বেও ১৯৭৫ পর্যন্ত অটুট ছিল। বর্তমান সময়ের বাংলাদেশের রাজনীতিতে যা বিরল।

আন্তর্জাতিক কম্যুনিস্ট আন্দোলনে চীন-সোভিয়েত বিভাজন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে তার প্রভাব ইত্যাদিতে ব্যথিত বাবা ৬০-এর দশকের মাঝামাঝি দলীয় রাজনীতি থেকে সরে এসেছিলেন ঠিকই কিন্তু রাজনীতি থেকে একটুও সরে দাঁড়াননি। সেই সময় থেকে দেখেছি দলীয় রাজনীতিতে না থেকেও কীভাবে দেশ, মাটি ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে পরিপূর্ণ যুক্ততায় আবদ্ধ রাখা যায়। দেখেছি কীভাবে নিজের আদর্শের প্রতি অবিচল থাকা যায়। তারই প্রকাশ দেখেছি পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক এবং সাংবাদিক অধিকার আদায়ের বিভিন্ন আন্দোলনে।

১৯৫২ সালে অনেকটা প্রয়োজনের তাগিদেই যে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তা ছাড়তে পারেননি আর কখনই, তাই আইয়ুবশাহীর জারি করা আইন উপেক্ষা করে উদযাপন করলেন রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ। ১৯৬২ সালে কারাবাস শেষে বাবা কম্যুনিস্ট পার্টির ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা ‘ছায়ানট’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। সাড়ে চার বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর মার্কসবাদী আদর্শে ১৯৬৭ সালে গড়ে তোললেন ‘ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী’। সাম্রাজ্যবাদী সামরিক শোষণ আর শাসনের বিরুদ্ধে ঢাকার পল্টন ময়দানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাটক, নৃত্যনাট্য, গণসঙ্গীতের মাধ্যমে গণমানুষকে করেছিলেন একাট্টা, উদ্বুদ্ধ, আলোড়িত। এই সময়ই আলতাফ মাহমুদ, আব্দুল লতিফ আর শেখ লুৎফর রহমানের সাথে গাঁটছড়ায় সৃষ্টি করেছিলেন অসংখ্য গণসংগীত।

১৯৭১ সালের মে মাসের শুরুতেই চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীনবাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব নিলেন। কিন্তু বিপ্লবী বেতারে কি আর বসে থাকা যায়। বিদ্রোহী বেতারে সবাই কর্মী এবং প্রয়োজনে সকলকে সবকিছুই করতে হয়। তিনিও সংবাদ বিভাগ সংগঠন ছাড়াও সংবাদ পাঠ, কথিকালেখা ও প্রচার, ঘোষণা, স্লোগান দেয়া ইত্যাদিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। এখানেও তিনি ভারতীয় গীতিকার গোবিন্দ হালদারের গানের খাতা উদ্ধার করে দিয়েছিলেন সমর দাস আর আপেল মাহমুদকে, এরাই সুর করেছিলেন ‘একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’-এর মতো উত্তাল গানগুলো।

১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাবা দায়িত্ব নিলেন ঢাকা বেতারের। দায়িত্ব নেয়ার পর বিধ্বস্ত বেতারকে পুনর্গঠনে ব্রতী হলেন। দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু প্রশাসনে পরিবর্তন এলো না তাই অনেকটা নীরব প্রতিবাদেই বেতারের পরিচালক পদ ত্যাগ করলেন। ১৯৭৩ সালে ২০ জানুয়ারি সাংবাদিকতায় ফিরে এলেন। বিভিন্ন সময়ে যুগ্ম সম্পাদক আর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে এবারে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হলেন।

বাকশাল সরকার ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সংবাদপত্র এ্যানালমেন্ট অধ্যাদেশ জারি করে মাত্র চারটি পত্রিকা ছাড়া সব পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ করে দিল। বাবা বাকশালে যোগদানে অস্বীকৃতি জানালেন। এ সময় চাকরি হারানোর কারণে আমাদের তিন ভাই-বোনকে নিয়ে বেসামাল আর্থিক অনটনে পড়লেন আমাদের বাবা আর মা দীপ্তি লোহানী। মায়ের সরকারি স্কুলের চাকরির সুবাদে সরকারি কোয়ার্টারের ছাদটা ছিল তাই পথে নামতে হলো না আমাদের। তবু মাথা নোয়ালেন না। ১৯৭৬-এ শুরু করলেন সামাজিক রাজনৈতিক প্রবন্ধের অনিয়মিত সংকলন প্রকাশ। এই প্রথম আমার সুযোগ হলো বাবার সাথে কাজে যুক্ত থাকার। সেই আমার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।

এই অবস্থায় ১৯৭৭ সালে ৬ জানুয়ারি সরকার রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বার্তা’র নির্বাহী সম্পাদক নিযুক্ত করলো তাঁকে। ১৯৭৮ সালে তাঁকে সম্পাদক পদে নিয়োগ দেয়া হলো। ঐ বছরেই জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকাতে অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ রাষ্ট্রপ্রধান সম্মেলনে বাংলাদেশের একজন সম্পাদক হিসেবে প্রেসিডেন্সিয়াল এনট্যুরেজের সদস্য মনোনীত হলেন। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়ার নির্দেশে চিরন্তন পরিধেয় পাজামা-পাঞ্জাবির পরিবর্তে স্যুট-কোট গায়ে চড়াতে অস্বীকার করলেন এবং বিদেশ না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন। ফলে সে বছরই তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর সাথে মতবিরোধ হলে ‘দৈনিক বার্তা’-র সম্পাদক পদ ছেড়ে দিলেন। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাবা শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ষোলো মাসের মাথায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর সাথে মতবিরোধ হওয়ায় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ ছেড়ে দিলেন।

বাবার জীবনের এই অধ্যায়টি উল্লেখ করলাম শুধুমাত্র এই জন্য যে আমরা আমাদের পরিবারের মাঝেই দেখেছি ‘আপসহীন’ একজন মানুষকে, আমার বাবাকে। তাই আজ দেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন চক্রান্তকারী-আপসকামী নেতৃত্বের নামের পাশে যখন ‘আপসহীন’ ব্যবহার করা হয় তখন খুব হাস্যকর শোনায়।

কি বলিষ্ঠ, সত্যনিষ্ঠ, আদর্শিক ঋজুতায় বলীয়ান এই মানুষটি। পাকিস্তানি রক্ত চক্ষুকেও পরোয়া করেননি তেমনি স্বাধীনতা-উত্তর স্বৈরশাসকদেরও ভ্রুক্ষেপ করেননি। প্রগতিশীল বিপ্লবী চেতনায় সঞ্জীবিত কামাল লোহানী সত্য প্রকাশে পিছপা হননি কখনো। শাসকের রোষানল পারেনি থামাতে তাঁকে। তিনি এগিয়েছেন তার অভীষ্ট পথে। আর তাই দেখি ১৯৭৬ সাল থেকে আজ অবধি তিনি ’৭১-এর ঘাতক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে দুর্নিবার উচ্চারণে, সাহসী প্রত্যয়ে দৃঢ়।

তিনি আমাকে বা আমার ছোট দুই বোনকে কখনই লেখাপড়া থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক এমনকি রাজনৈতিক জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করেননি, চাপিয়ে দেননি তার চিন্তাভাবনা। আমাদের বাড়তে দিয়েছেন আপন শক্তিতে, চিন্তা আর চেতনায়। আজ জীবনের এতটা পথ পেরিয়ে এসে দেখি আমাদের চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন বলেই আমরা নিজেদের চিনেছি, আমাদের সব বাঁধ খুলে গেছে। আমরাও হয়েছি প্রত্যয়ী, দৃঢ়চিত্ত।

পেশায় সাংবাদিক কিন্তু নেশায় সাংস্কৃতিক কর্মী প্রাণবান, উদার কামাল লোহানী দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য শর্তহীন ভালোবাসায় নিবেদন করেছেন নিজেকে। তাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে সত্য ভাষণ যা তিনি প্রায়ই উচ্চারণ করেন-

“এ দেশ আমার গর্ব এ মাটি আমার কাছে সোনা আমি করে যাই তারই জন্মবৃত্তান্ত ঘোষণা”

তাঁর ৮৬তম জন্মদিনে তাই তাঁকে বলতে চাই, বাবা হিসেবে তোমায় পেয়ে আমরা সত্যিই হয়েছি ধন্য, তোমার মতো পিতার সন্তান হিসেবে আমরা হয়েছি উদ্দীপিত, হয়েছি গর্বিত, হয়েছি অহংকারী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App