×

খেলা

সেমির সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখল পাকিস্তান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০১৯, ০১:০০ এএম

সেমির সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখল পাকিস্তান
পাকিস্তান সহজ ম্যাচ কঠিন করে হারতে পারে আবার অবিশ্বাস্য কঠিন ম্যাচও খুব সহজে জিততে পারে। আর এ কারণে ক্রিকেটের আনপ্রেডিক্টেবল টিম বলা হয় সরফরাজদের। গতকাল পাকিস্তান নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেতায় বাংলাদেশের লাভ হলো না ক্ষতি হলো? টাইগার সমর্থকদের কাছে এমন প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খেয়েছে। বার্মিংহামের এজবাস্টনে কিউইদের ৬ উইকেটে হারিয়ে সেমির স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে ইমরান-ওয়াসিম আকরামের উত্তরসূরিরা। কেউ কেউ পাকিস্তানের এ দলটির মধ্যে ১৯৯২ সালের দলটির ছায়া দেখছে। ’৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বে প্রথম চার ম্যাচে হেরে পরবর্তী ৫ ম্যাচে জিতে সেমিতে জায়গা করে নিয়েছিল পাকিস্তান। তার পরের ইতিহাস তো সবার জানা। দ্বাদশ বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ শেষে ৭ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থান থেকে ছয়ে ওঠে এসেছে মিকি আর্থারের শিষ্যরা। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়ে মাশরাফি বাহিনী রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে। পরের ম্যাচে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ দুর্বল আফগানিস্তান। শনিবার বাবর-আমিররা জিততে পারলে তাদের পয়েন্ট হবে ৯। অন্যদিকে ২ জুলাই বাংলাদেশ খেলবে ভারতের বিপক্ষে। ৫ জুলাই টাইগাররা পাকিস্তানের মোকাবেলা করবে। সেমির স্বপ্ন জোড়ালো করতে গতকাল পাকিস্তানের সামনে জয়ের বিকল্প ছিল না। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩৮ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১০.২ ওভারে ৪৪ রানে দুই ওপেনারকে হারায় পাকিস্তান। ট্রেন্ট বোল্টের বলে গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওপেনার ফখর জামান। দলীয় ১৯ রানে ফখর জামান আউট হওয়ার পর বেশি দূর এগোতে পারেননি অন্য ওপেনার ইমাম-উল-হক। লুকি ফার্গুসনের বাউন্সারে গাপটিলের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন ইমাম-উল। এরপর তৃতীয় উইকেটে মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে ৬৬ রানের জুটি গড়েন বাবর আজম। ৫০ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৩২ রান করে আউট হন সাবেক অধিনায়ক হাফিজ। এর পর চতুর্থ উইকেটে বাবর আজম হারিস সোহেলের সঙ্গে জুটি বেঁধে পাকিস্তানকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ ব্যাটিং করে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩ হাজারি ক্লাবের সদস্য হন বাবর। ৬৫ বলে ফিফটি রান পূর্ণ করেন পাকিস্তানের এই তারকা ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিন হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বাবর আজম। পাকিস্তানের এ তারকা ব্যাটসম্যানের ৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে গতকাল প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৯ রান। মিসেল স্যান্টনারের বলে সিঙ্গেল রান নেয়ার মধ্য দিয়ে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন বাবর। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭০তম ম্যাচে তিন হাজারি ক্লাবের সদস্য হন তিনি। পাকিস্তানের ২০তম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন হাজারি ক্লাবের সদস্য হন বাবর। কিউইদের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশ সেঞ্চুরি তুলে নিতে ১২৪ বল খেলেছেন তিনি। চাপের মধ্যে দলকে সেঞ্চুরি উপহার দেয়ায় ম্যাচসেরা হন বাবর। পাকিস্তানের বিপক্ষে হারায় ৭ ম্যাচ শেষে ১১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে নিউজিল্যান্ড। জিতলে তাদের সেমির পথ প্রস্তত হতো। অস্ট্রেলিয়া সমান ম্যাচ থেকে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। ৯ পয়েন্ট নিয়ে ভারত তৃতীয় এবং ৮ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইংল্যান্ড। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যেসব দলকে হট ফেভারিট ভাবা হচ্ছিল সেগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ড একটি। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও উইন্ডিজের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে ফেভারিট তকমার প্রমাণটা বেশ ভালোভাবেই দেয় কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন দলটি। একের পর এক জয় পেলেও কিউইদের দুর্বলতা যে একেবারেই নেই, তা কিন্তু নয়। দলটির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ব্যাটিংলাইন আপ। ওপেনার মার্টিন গাপটিল ফর্মে নেই। ভরসা কেবল রস টেইলর ও কেন উইলিয়ামসন। টেইলরের ব্যাটও এবার খুব একটা হাসছে না। এর পরও উইলিয়ামসন রান পাওয়ায় ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা নজরে আসছিল না কারও। নিজেদের ব্যাটিং দুর্বলতা গতকাল বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড। দ্বাদশ বিশ^কাপে এ দিন ১৯৯২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় গত আসরের রানার্সআপরা। সরফরাজ আহমেদের দলের পেসারদের সামনে এ দিন নাজেহাল হয়ে পড়েন কিউই ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ৮৩ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারানো দলটি শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ করে ২৩৭ রান। বার্মিংহামের এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি নিউজিল্যান্ডের জন্য ছিল সেমিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মিশন। আর পাকিস্তানের জন্য শেষ চারের দৌড়ে টিকে থাকার লড়াই। তাই পুরো ক্রিকেট বিশ্ব উন্মুখ হয়ে তাকিয়েছিল ম্যাচটির দিকে। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ শুরু হতে ১ ঘণ্টা বিলম্ব হয়। টস জেতেন উইলিয়ামসন। বৃষ্টিভেজা পিচের সুবিধা নিতে টস জিতে আগে বোলিং নেবেন কিউই দলপতি এমনটিই ধারণা ছিল সবার। কিন্তু না, সবাইকে অবাক করে আগে ব্যাটিং বেছে নেন তিনি। এর মাশুলটা দ্বিতীয় ওভারেই দিতে হয় নিউজিল্যান্ডকে। ম্যাচের প্রথম ওভারে অবশ্য চমক উপহার দেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। শুরুতেই তিনি বল তুলে দেন স্পিনার মোহাম্মদ হাফিজের হাতে। ওই ওভার থেকে আসে মাত্র ৫ রান। দ্বিতীয় ওভার করার জন্য বোলিংয়ে আসেন মোহাম্মদ আমির। প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন এই বাঁ-হাতি পেসার। আমিরের অফসাইডের বলটিতে কাভার ড্রাইভ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিল, হয়ে যান বোল্ড। আগের ম্যাচগুলোর মতো এ দিনও আস্থার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হন আরেক ওপেনার কলিন মুনরো। তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১২ রান। শাহিন আফ্রিদির বলে হ্যারিস সোহেলের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর অভিজ্ঞ রস টেইলর ও টম লাথামকেও দ্রুত সাজঘরের পথ দেখান আফ্রিদি। মাত্র ৮ রানের ব্যবধানেই টেইলর ও লাথামের উইকেট তুলে নেন তিনি। টেইলর ৩ ও লাথাম ১ রান করেন। দলের বিপর্যয়ে আবারো ত্রাতা হিসেবে আবিভর্‚ত হন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। দ্বাদশ বিশ্বকাপে আগের ম্যাচগুলোতে ২ সেঞ্চুরি ও ১ হাফসেঞ্চুরি করা কিউই দলপতি এ দিনও বড় ইনিংস খেলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু সফল হননি। তাকে সাজঘরে ফিরতে হয় ব্যক্তিগত ৪১ রানে। পাকিস্তানি স্পিনার সাদাব হোসেনের ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে উইকেটকিপার সরফরাজের হাতে ক্যাচ দেন উইলিয়ামসন। কিউইদের সংগ্রহ তখন ২৬.২ ওভারে ৫ উইকেটে ৮৩ রান। এর পরের গল্পটা জেমস নিশাম ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের। ষষ্ঠ উইকেটে ১৩২ রানের জুটি গড়েন তারা। রান আউটের ফাঁদে পড়ার আগে ৭১ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ৬৪ রানের দায়িত্বশীল এক ইনিংস খেলেন গ্র্যান্ডহোম। তবে আক্ষেপ হতেই পারে নিশামের! মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৯৭ রানে। এটি তার ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফসেঞ্চুরি। নিশাম-গ্র্যান্ডহোমের দৃঢ়তায় নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩৭ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানের পক্ষে ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন শাহিন আফ্রিদি। ১টি করে উইকেট নেন আমির ও ওয়াহাব রিয়াজ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App