×

মুক্তচিন্তা

কবে রেলপথ নিরাপদ হবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০১৯, ০৯:৫০ পিএম

রেলসেতু ভেঙে যাওয়া বা দেবে যাওয়ার এমন ঘটনা নতুন নয়। ৩ হাজার ৩৩৬ কিলোমিটার রেলপথে লাইনচ্যুতের ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। সর্বশেষ রবিবার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় সাতজনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা মর্মান্তিক। বাংলাদেশ রেলওয়ের অধিকাংশ সেতুই নির্মিত হয়েছে ব্রিটিশ আমলে। এসব সেতুর বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ-জরাজীর্ণ।

জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা এসব সেতুর ওপর দিয়েই চলছে ট্রেন। ফলে একটু উনিশ-বিশ হলেই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঢাকা-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে গত দেড় বছরে ৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ৭০ থেকে ১০০ বছরের কিংবা তারও বেশি পুরনো সেতুগুলো শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, চরম আতঙ্কেরও বটে। এ ছাড়া স্টিল কিংবা লোহার ব্রিজগুলো আরো ঝুঁকিপূর্ণ। দুই অঞ্চলে (পূর্ব-পশ্চিম) কেপিআইভুক্ত সেতু রয়েছে প্রায় ৪৫টি।

সেতুগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশেরই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কুলাউড়ার দুর্ঘটনা কেন ঘটেছে- এর কারণ হিসেবে কেউ কেউ যে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠার কথা বলছেন, তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। বরং রেল সচিব যে দুটি সম্ভাব্য কারণ নির্দেশ করেছেন, তা বাস্তবোচিত। তার মতে, হয় রেললাইনে ত্রুটি ছিল, নয়তো দুর্ঘটনাকবলিত বগির চাকায় সমস্যা ছিল। জানা গেছে, ১৯১৫ সালে সিলেট-কুলাউড়া রেল সেকশন নির্মাণ করা হয়।

শতবর্ষী এ রেলপথে স্লিপার, ব্যালাস্ট (পাথর) সঠিক মানে নেই। অনেক অংশে পাথরই নেই। ফিসপ্লেট নেই অনেক জায়গায়। এ কারণে রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। একই অবস্থা সেতু ও কালভার্টগুলোর। প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প গত এপ্রিলে অনুমোদন পায়। এই কারণে রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্টরা অমনোযোগী ছিল।

এ ছাড়া সিলেট-কুলাউড়া ঝুঁকিপূর্ণ পথে রেলচলাচল ধীর গতি রাখার জন্য চালকদের প্রতি নির্দেশনাও ছিল। চালকরা বিষয়টি মানছেন কিনা সেটাও তদন্তের বিষয়। কারণ অধিকাংশ সময়ে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে চালক, গার্ড, স্টেশন মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের ভুলের কারণে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানোর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। লাইনের সংস্কার সময়মতো করা হয় কিনা, সে নিয়ে কোনো জবাব মেলে না।

লাইনে পাথর না থাকা, সিগন্যাল ব্যবস্থার ত্রুটি, লাইন ক্ষয়, স্লিপার নষ্ট, লাইন ও স্লিপার সংযোগস্থলে লোহার হুক না থাকা ইত্যাকার নানা কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। কুলাউড়া দুর্ঘটনার কারণ ও দায় খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষেও প্রকাশ জরুরি।

তাতে করে জবাবদিহি বাড়বে। আগে বিভিন্ন সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটির ভাগ্যে যা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। বিশ্বের সর্বত্র রেলওয়ে পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ যান হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের রেলপথ দ্রুতই তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক, এটাই প্রত্যাশা করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App