×

জাতীয়

ফের বাড়ছে গ্যাসের দাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০১৯, ১০:১৭ এএম

ফের বাড়ছে গ্যাসের দাম
আবারো বাড়ছে গ্যাসের দাম। যে কোনো সময় ঘোষণা আসছে। সরকারের পক্ষ থেকেও সম্মতির বিষয়টি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) জানিয়ে দেয়া হয়েছে। গণশুনানিতে পক্ষে-বিপক্ষে আসা যুক্তি ও বাস্তব অবস্থার ভিত্তিতে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করবে বিইআরসি। এদিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণির মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ালে শিল্প-কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাড়তি দাম জনগণের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। এতে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য দেখা দেবে। আর বিভিন্ন পেশাজীবীরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ালে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হবে সাধারণ মানুষকে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, যে কোনো সময় গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হতে পারে। কিছু প্রক্রিয়া বাকি আছে। এই প্রক্রিয়াগুলো শেষ হওয়ার পর দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসবে। এলএনজি যুক্ত হওয়ার পর ভর্তুকি বেড়ে গেছে। ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে হলে গ্যাসের দাম ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। কিন্তু এই হারে গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না। সরকার কি পরিমাণ ভর্তুকি দেবে এবং কি হারে বাড়ানো হবে তা নিয়েই আলোচনা চলছে। আবার গ্যাসের দাম না বাড়াতে গণশুনানিতে অংশ নেয়া ভোক্তা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের যুক্তিগুলোও বারবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে দাম বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে সম্মতি পাওয়া গেছে। বিইআরসির একজন সদস্য জানান, বাংলাদেশে এলএনজি একেবারেই নতুন সংযোজন। মূলত এলএনজির কারণেই সব শ্রেণির গ্যাসের দাম পুনঃনির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্তের শুরুতেই গ্যাসের ওপর থাকা সব ধরনের কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যদিকে শুনানিকালে ভোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যও আমরা শুনেছি। তাদের বক্তব্যও বিবেচনায় রাখা হবে। সব দিক বিবেচনায় রেখেই যে কোনো সময় দাম পুনঃ-নির্ধারণের ঘোষণা দেয়া হতে পারে। এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর বক্তব্যেও শিগগিরই গ্যাসের দাম বাড়ানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তিনি জানান, ভর্তুকি কমানোর জন্যই গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হবে। এতে আমাদের সমর্থন আছে। এলএনজি আমদানির পর এখন পর্যন্ত সরকারের ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আরো ১৪ হাজার কোটি টাকা দরকার। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম সমন্বয় করা না হলে ভর্তুকি আরো বাড়বে। এ জন্যই গ্যাসের দাম সমন্বয় করা জরুরি। এ ব্যাপারে আমাদের সম্মতির বিষয়টি কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছি। শিল্প ও আবাসিক সব ক্ষেত্রেই দাম কিছুটা সমন্বয়ের জন্য বলেছি। জানা গেছে, গত বছরের শুরুতে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর গুঞ্জন শুরু হয়। ব্যয়বহুল এলএনজির সঙ্গে খনিজ গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গড়ে ৭৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। তবে কোনো কোম্পানিই আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেনি। তখন বিইআরসি গণশুনানির আয়োজন করে। ওই বছরের ১১ জুন থেকে প্রায় সপ্তাহব্যাপী গণশুনানির পর বিইআরসি গঠিত কারিগরি কমিটি গ্যাসের দাম ১৪৩ ভাগ বাড়ানোর সুপারিশ করে। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আর গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। চলতি বছরে আবারো গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের পর বিইআরসি আবারো গণশুনানি শুরু করে। ১১ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো দুই চুলা ১ হাজার ৪৪০, এক চুলা ১ হাজার ৩৫০ টাকা, সিএনজি প্রতি ঘনমিটার ৪০ টাকা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১৪২ শতাংশ দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, সরকার গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই। কিন্তু তারপরও সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। লোকশান কমাতে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তিতাস গ্যাসে ৬ শতাংশ দুর্নীতিতে মাসে ১ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন হতো না। কমিশনে শুনানির সময়ও আমরা দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেছি। আদালতে পর্যন্ত গিয়েছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App