দেশীয় বাজারে দাম কমছে চায়ের
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০১৯, ১২:৪৪ পিএম
চলতি নিলাম মৌসুমের শুরু থেকে দেশের বাজারে চায়ের দাম বাড়তির দিকে ছিল। তবে যত দিন যাচ্ছে দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিলামে পানীয় পণ্যটির দাম কমে আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেশীয় নিলামে চায়ের গড় দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। চায়ের দরপতনের পেছনে অনুক‚ল আবহাওয়াকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের বাগানগুলোয় পানীয় পণ্যটির উৎপাদন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। নিলামে চায়ের সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে বাগানগুলো। বাড়তি সরবরাহের জের ধরে কমতে শুরু করেছে চায়ের দাম।
এ পরিস্থিতি বজায় থাকলে এবারের মৌসুমে চা উৎপাদনে রেকর্ডের সম্ভাবনা দেখছে চা বোর্ড। আর বাড়তি উৎপাদন ও সরবরাহ বাজারে চায়ের দাম কমিয়ে দিতে পারে। গত ১১ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছে চলতি মৌসুমের ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক চা নিলাম।
ওই নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ২০১ টাকা। সর্বশেষ মৌসুমের সপ্তম নিলামে পণ্যটির গড় দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। নিলামে চাহিদার তুলনায় চায়ের সরবরাহ বেশি ছিল। এ কারণে পানীয় পণ্যটির দাম কমতির দিকে রয়েছে।
তবে দেশের বাগানগুলো থেকে সরবরাহ বেশি থাকলেও নিলামে ভালো মানের চায়ের সরবরাহ তুলনামূলক কম ছিল বলে জানিয়েছেন নিলামে অংশ নেয়া ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠান ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশনের (বিটিটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত নিলাম মৌসুমের প্রথম আন্তর্জাতিক নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ২১৯ টাকা। চলতি মৌসুমের প্রথম নিলামে তা বেড়ে দাঁড়ায় কেজিপ্রতি ২৬৯ টাকায়। অর্থাৎ বাড়তি দামের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল চলতি নিলাম মৌসুম। এরপর যত দিন গেছে, ততই চায়ের গড় দাম কমেছে। কেজিপ্রতি ২০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে।
পানীয় পণ্যটির দরপতনের মূলে রয়েছে বাড়তি সরবরাহ। সর্বশেষ নিলামে ৫১ হাজার ৫৪১ প্যাকেটে সব মিলিয়ে ২৮ লাখ ২৪ হাজার ৪৪৭ কেজি চা বিক্রির প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের বছরের একই নিলামে ২৮ হাজার ৫২ প্যাকেটে মোট ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪২১ কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে একই নিলামে অতিরিক্ত ১৩ লাখ কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। আগাম বৃষ্টিপাত চায়ের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বাগানগুলোয় সব মিলিয়ে ৮৬ লাখ ৩৬ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে দেশে সব মিলিয়ে উৎপাদন হয়েছিল ৫৪ লাখ ৩০ হাজার কেজি চা। মাসভিত্তিক হিসাবে গত এপ্রিলেই দেশের বাগানগুলোয় ৬১ লাখ ১০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের একই মাসে দেশে ৩৫ লাখ ৫ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। বছরের প্রথম চার মাসে উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি বজায় থাকায় নিলামঘরে চাহিদার তুলনায় বাড়তি চা সরবরাহ করা হয়েছে। কমে গেছে চায়ের দাম। সা¤প্রতিক নিলামগুলোয় বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা চায়ের ৩০-৩৫ শতাংশ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে দেশের বাগানগুলোয় ৭ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল সব মিলিয়ে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার কেজি চা। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় চলতি বছর ৭ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বছরের বাকি সময়ে আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এবারো লক্ষ্যের তুলনায় চায়ের উৎপাদন বাড়তে পারে। এর আগে ২০১৭ সালে ৭ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার কেজি লক্ষ্যের বিপরীতে দেশে ৭ কোটি ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল।