×

মুক্তচিন্তা

সমাধানের পথ বের করাও জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০১৯, ০৮:৪৭ পিএম

অর্থনীতি ও উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংকিং খাতে বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা। চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় গত শনিবার জাতীয় সংসদে ব্যাংক খাতের শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৭০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। গত এপ্রিলভিত্তিক বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেজ থেকে এ তথ্য নেয়া হয়েছে।

ব্যবসা পরিচালনার নামে দেশের তফসিলি ব্যাংক থেকে এ বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে হজম করে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। যেহেতু ব্যাংকিং খাতের টাকা জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের আমানত, তাই এ খাতের দুর্বৃত্তদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার অবকাশ নেই। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে আরো জানান, গত তিন বছর দুই মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এ সময়ে ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ হাজার ৪৩৬ জন।

দেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির তালিকা ছাড়াও ২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ কোটি টাকার ওপরে ঋণ নেয়া ১৪ হাজার ৬১৭ জনের পৃথক তালিকাও প্রকাশ করেন তিনি। অর্থমন্ত্রীর প্রকাশিত তালিকার নামগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এদের বেশিরভাগই সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ হাতিয়ে নিয়েছে। বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণগুলো নেয়া হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও আমাদের সব উচ্ছ্বাস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল। বিষয়টি সবাইকে বিব্রত করে, এ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন মহলে এবং ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, রাজনৈতিক ছত্রছায়া, উচ্চ আদালতে রিট, সর্বোপরি বিচার না হওয়ার কারণেই অর্থ আত্মসাৎ ও ঋণখেলাপির ঘটনা বাড়ছে।

এমনকি নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতা, রাঘব-বোয়ালদের বাঁচাতে উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ এবং তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করার কারণে আর্থিক খাতের লুটেরারা উৎসাহিত হচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া অর্থ আত্মসাৎ সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্র ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়াই এর প্রমাণ। ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হলে প্রথমেই ঋণখেলাপিসহ প্রতিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-পরিচালকদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের সম্পদ জব্দ করে জনগণের শ্রম-ঘামের আমানত উদ্ধার করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App