×

খেলা

ভারতকে কাঁপিয়ে হারল আফগানরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০১৯, ১২:৩৫ এএম

ভারতকে কাঁপিয়ে হারল আফগানরা
গৌবরময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। গতকাল সাউদাম্পটনে ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচটি ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টিয়েছে। উত্তেজনাকর ম্যাচে ১১ রানে জিতেছে ভারত। এ জয়ের ফলে ৫ ম্যাচ থেকে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে ওঠে এলো কোহলিরা। সমান ম্যাচ থেকে কিউইরা ৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে। অস্ট্রেলিয়া ৬ ম্যাচের ৫টিতে জিতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে। শেষ চারের পথে এ তিন দল বেশ এগিয়ে। স্বাগতিক ইংল্যান্ড ৬ ম্যাচ থেকে ৮ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এর পরে শ্রীলঙ্কা পঞ্চম এবং বাংলাদেশ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। আগামীকাল টাইগাররা আফগানদের হারাতে পারলে শ্রীলঙ্কার ওপরে চলে আসবে। লড়াই করেও হেরে গেল আফগানিস্তান। ভারতকে হারানোর মোক্ষম সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি নবী-রশিদ খানরা। তীরে গিয়ে তরী ডুবে আফগানদের। অভিজ্ঞতার অভাবে আবারো হেরে গেল আফগানরা। গত বছর এশিয়া কাপেও ভারতের বিপক্ষে জয়ের দুয়ারে গিয়ে হোঁচট খেয়েছিল আফগানিস্তান। সেই ম্যাচটি টাই হয়। এবার ১১ রানের হার। বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে অংশ নিয়ে এখনো পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারেনি আফগানরা। নবী-রশিদরা ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ২২৪ রানে বেঁধে ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল। বোলারদের দাপটের এ ম্যাচে ভারতের বোলারদের বুদ্ধিমত্তাকে প্রসংশা করতেই হয়। মোহাম্মদ শামি, বুমরাহ, পান্ডিয়া এবং চাহাল আফগান ব্যাটসম্যানদের রান ক্ষুধায় বাধা হয়ে দাঁড়ান। শেষ ওভারে জয়ের জন্য আফগানিস্তানের প্রয়োজন ১৬ রান। এ সময় অধিনায়ক বিরাট কোহলি বল তুলে দেন পেসার শামির হাতে। ওভারে প্রথম বলে নবী শামিকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪তম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করলে অনেকে এ বোলারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারে তৎপর হয়ে ওঠেন। এ বাজে বোলারকে কেন বল দিল কোহলি। ৫ বলে ১২ রান। এ তো অনায়সে হবে। চার দিকে যখন এমন মন্তব্য তখনই ক্রিকেট বিশ^কে অবাক করে দিয়ে পর পর তিন বলে নবীকে ক্যাচআউট করার পর আফতাব এবং মুজিব উর রহমানকে বোল্ড করে দ্বিতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেন মোহাম্মদ শামি। এর আগে ১৯৮৭ সালে চেতন শর্মা ভারতের হয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ৯.১ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন শামি। ৩৯ রানে ২ উইকেট নেয়া জাসপ্রিত বুমরাহ ম্যাচসেরা হন। ২৭ জুন ভারত উইন্ডিজের মোকাবেলা করবে। বর্তমানে বিশে^র সেরা ব্যাটিং লাইনআপ কোন দলের- এই প্রশ্নের উত্তরে বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমীই বলবে ভারতের নাম। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, লুকেশ রাহুল, বিজয় শঙ্কর, এম এস ধোনির মতো বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের নিয়ে গড়া ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ আসলেই বিশ্বসেরা। কিন্তু বিশ্বসেরা এই ব্যাটিং লাইনআপই গতকাল চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে আফগান বোলারদের সামনে। কোহলি, রোহিত, ধোনিদের এ দিন যেন মাটিতে নামিয়ে আনেন আফগান বোলাররা। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী, গুলবাদিন নাইব, মুজিব-উর রহমান ও আফতাব আলমদের নিয়ে গড়া আফগান বোলিং অ্যাটাকের সামনে ভারতের কোনো ব্যাটসম্যানই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। অধিনায়ক বিরাট কোহলির ৬৭ রানের ইনিংসটিই সর্বোচ্চ। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২২৪ রানেই থামে ১৯৮৩ ও ২০১১ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ইনিংস। এ দিন আফগানিস্তানের চারজন স্পিনার ৩৪ ওভার বল করে মাত্র ১১৯ রান দিয়েছেন। তাই বলা যায়, মূলত আফগান স্পিনেই নাকাল হয়েছেন ভারতের ব্যাটসম্যানরা। র‌্যাঙ্কিংয়ে এখন আফগানিস্তানের অবস্থান ১০ নম্বরে, আর ভারত আছে দ্বিতীয় স্থানে। দ্বাদশ বিশ্বকাপেও দুদল ছুটছে বিপরীতমুখী পথে। দ্বাদশ বিশ^কাপে গতকালের ম্যাচের আগে ৪ ম্যাচের ৩টিতেই জয় পায় ভারত। একটি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। অন্যদিকে আফগানিস্তান হারে তাদের ৫ ম্যাচের সবগুলোতে। দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়াকে হারানো ভারত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছন্নছাড়া বোলিং করা আফগান বোলারদের তুলোধুনো করবে, মেতে উঠবে রান উৎসবে, এমনটিই ধারণা ছিল সবার। কিন্তু খেলাটা যে ক্রিকেট। এখানে এমন অনেক কিছুই ঘটে, যা কারো ভাবনাতেই থাকে না। গতকালের ম্যাচেও এমনটিই হয়েছে। সাউদাম্পটনের রোজ বোলে এ দিন টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। উইকেটের আচরণ বুঝে শুরুতেই স্পিনার মুজিবের হাতে বল তুলে দেন আফগান দলপতি গুলবাদিন নাইব। তাকে খেলতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন আগের ৩ ইনিংসে ২ সেঞ্চুরি করা ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা। ১০ বলে ১ রান করে মুজিবের অসাধারণ এক ইনসুইং ডেলিভারিতে বোল্ড হন রোহিত। শুরুর চাপটা সামাল দেন কোহলি ও আরেক ওপেনার লুকেশ রাহুল। কিন্তু ক্রিজে সেট হয়েও রাহুল তার ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি। মোহাম্মদ নবীর বলে বাজে শট খেলে ব্যক্তিগত ৩০ রানে আউট হন তিনি। আউট হওয়ার আগে কোহলির সঙ্গে ৫৭ রানের জুটি গড়েন এই ওপেনার। স্পিনারদের সফলতা দেখে রহমত শাহকে আক্রমণে আনেন আফগান দলপতি। সেটা কাজে লেগে যায়। রহমত শাহর বলেই এলবিডব্লিউ হন ক্রিজে সেট হওয়া বিজয় শঙ্কর। তিনি করেন ২৯ রান। তবে কোহলি ও কেদার যাদব ছিলেন বেশ সাবলীল। ভারতের অধিনায়ক টানা তৃতীয় ফিফটি তুলেন নেন। নবীর বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তিনি খেলেন ৬৭ রানের এক ইনিংস। এটি কোহলির ক্যারিয়ারের ৫২তম অর্ধশতক। কেদার যাদবও অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন। তার ব্যাট থেকে আসে ৫২ রান। ২৮ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস উপহার দেন ধোনি। আফগানিস্তানের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন গুলবাদিন নাইব ও মোহাম্মদ নবী। এ ছাড়া মজিব, আফতাব, রশিদ ও রহমত শাহ নেন ১টি করে উইকেট। ভারতকে অল্প রানে অলআউট করার ম্যাচে আফগানদের জন্য দুঃসংবাদ হয়ে আসে লেগ স্পিনার রশিদ খানের ইনজুরি। ভারতের ইনিংসের ৪৯তম ওভারে বাউন্ডারি লাইনের পাশে ফিল্ডিং করার সময় ক্যাচ নিতে গিয়ে চোট পান তিনি। অনেকটা সময় মাঠেই পড়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ ছাড়েন এই লেগ স্পিনার। তবে দলের প্রয়োজনে ব্যাট করে ১৪ রানে আউট হন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App