×

জাতীয়

বোর্ডের তথ্যবিভ্রাট দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০১৯, ১১:৫৭ এএম

বোর্ডের তথ্যবিভ্রাট দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে উল্লিখিত রাজধানীর হোম ইকোনমিক্স কলেজের বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার জন্য প্রথম দফায় আবেদন করেছিলেন সিলেটের এক মেধাবী ছাত্রী। তবে ফল ঘোষণার ঠিক আগের রাতে বোর্ডের এক কর্মকর্তা ফোনে তাকে নিশ্চায়নের জন্য পুনরায় আবেদন করতে বলেন। পুনরায় আবেদনের পর ওই ছাত্রী জানতে পারেন কলেজটিতে মৌল বিজ্ঞানের কোনো বিষয়ই নেই। তাকে সেখানে পড়তে হলে নিতে হবে হোম সায়েন্স। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, ওই কলেজে বিজ্ঞান বিষয়ই নেই। বোর্ডেও এ ভুলের পরিণতিতে বিপাকে পড়েছেন ওই শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। একইভাবে প্রথম দফায় কলেজ নিশ্চায়ন করতে গিয়ে অনুরূপ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন রাজধানীর জুরাইনের এক ছাত্রী। কলেজটি বাসা থেকে অনেক দূরে হওয়ায় অভিভাবকরা তার নিশ্চায়ন বাতিলের জন্য ধরনা দিচ্ছেন বোর্ডে। তবে নীতিমালায় নিশ্চায়ন বাতিলের কোনো ধারা না থাকায় বিব্রত বোধ করছেন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, বেশি শিক্ষাব্যয়ের কলেজে ভর্তির নিশ্চায়ন করায় যাত্রাবাড়ীর মারিয়া নামের এক ছাত্রীর পড়ালেখা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন তার বাবা। নিরুপায় ছাত্রী বাবা-মাকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে অনুনয় বিনয় করছেন। এমন ঘটনা এখন শুধু ঢাকা শিক্ষাবোর্ডেই সীমাবদ্ধ নেই। সারা দেশের ভর্তিচ্ছুদের অনেকেই পড়েছেন এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের মতো অনেক নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পছন্দের পাঠ্যবিষয় না থাকলেও ভুল করে নিশ্চায়ন করা হয়েছে। বোর্ডের ওয়েবসাইটে কলেজের তথ্যে ভুল থাকায় এমন বিভ্রান্তিতে পড়েছেন কেউ কেউ। এতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ভুল করে ওয়েবসাইটে বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে সংশোধন করা হয়েছে। এদিকে, আগের বছরে এসব সমস্যা সমাধানে ম্যানুয়ালি সুযোগ রাখা হলেও এবার অসহায় বোধ করছেন শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারাও। তারপরেও তারা বিপাকে পড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ লিখিত আকারে গ্রহণ করছেন। সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দিচ্ছেন। তবে শেষ অবধি পছন্দের কলেজে পছন্দের বিষয়ে পড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না। এর আগে ২১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা ভর্তি নীতিমালার ভিত্তিতে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইন ও টেলিটক মোবাইল থেকে এসএমএসের মাধ্যমে প্রথম দফায় ১২ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজে ভর্তির আবেদন গ্রহণ করা হয়। তবে ১০ জুন ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সারা দেশে ১৩ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মনোনীত হলেও নিশ্চায়ন করেননি সোয়া তিন লাখ শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে খোদ ঢাকা বোর্ডেই আছে প্রায় ৮৫ হাজার শিক্ষার্থী। গতকাল শনিবার দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ভর্তির জন্য আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে সারা দেশে কলেজবঞ্চিত হয়েছেন ৫৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। যার মধ্যে শুধু ঢাকা শিক্ষাবোর্ডেই নিশ্চায়ন করেননি ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। সারা দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডসহ একাদশে ভর্তির জন্য গতকাল পর্যন্ত নিশ্চায়ন না করা হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভাগ্যে কী ঘটবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ভর্তি হলেও তারা কাক্সিক্ষত কলেজে পছন্দের বিষয় পাবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরে এসএসসি পাস ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য সারা দেশে ২১ লাখের বেশি আসন আছে। সে কারণে ভর্তিতে কোনো সমস্যা হবে না। জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর ড. হারুন-অর রশীদ ভোরের কাগজকে বলেন, আবেদনকারীদের চেয়ে কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা অনেক বেশি। শিক্ষার্থীরা যেন পছন্দের কলেজে কাক্সিক্ষত বিষয়ে পড়তে পারেন এ জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, যেসব সমস্যা নিয়ে ভর্তিচ্ছুরা শিক্ষাবোর্ডে আসছে তাদের সব সমস্যারই সমাধান দেয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা শতকরা ৯৯ ভাগ সমস্যার সমাধান করেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App