×

অর্থনীতি

বাজেট পাসের আগে কেন বাড়ল মোবাইলের খরচ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০১৯, ০৩:১১ পিএম

বাজেট পাসের আগে কেন বাড়ল মোবাইলের খরচ
বাজেট পাস হওয়ার আগেই বেড়েছে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ। গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করার পরপরই মোবাইল ফোন অপারেটররা ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ শুল্কহার কার্যকর করে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রশ্ন দেখা দিলেও মোবাইল ফোন অপারেটর সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ীই তারা এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন। রবির গ্রাহক ইকরাম উল্লাহ জানান, গত ১৪ জুন সকালে তার মোবাইলে একটি এসএসএম আসে যাতে বলা হয়, ‘জাতীয় বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আপনার সকল মোবাইল সেবার ওপর কার্যকর করা হয়েছে। রবির সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।’ একই ধরনের এসএমএস পাওয়ার কথা জানান সব অপারেটরের গ্রাহকরাই। মধ্যবাড্ডার কর্মজীবী নারী রিটা আহসান জানান, বাজেট ঘোষণার আগে তিনি ১৯৯ টাকায় গ্রামীণফোনের ৩৫০ মিনিটের প্যাকেজ কিনতে পারতেন। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর ওই প্যাকেজে পাওয়া যাচ্ছে ৩৪০ মিনিট। এ প্রসঙ্গে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা তৈমুর রহমান জানান, মোবাইল ফোন সেবার ওপর নতুন যে শুল্কহার প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর করতে অর্থবিলে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছ থেকে নির্দেশনাও পেয়েছেন তারা। তিনি বলেন, আমরা বরং একটু বিপাকে পড়ে গেছি। কারণ হঠাৎ করে নতুন সেবামূল্য নির্ধারণ করা জটিল বিষয়। তড়িঘড়ি করে গ্রাহকের কিছু প্যাকেজে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু অপারেটরদের ঠিকই হিসাব করে রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে। এতে অপারেটরদের লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এনবিআরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৯-২০ সালের অর্থবিলের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা থাকায় বাজেট প্রস্তাবের দিন থেকেই তা কার্যকর করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রভিশনাল কালেকশন অব ট্যাক্সেস অ্যাক্ট ১৯৩১ এর সেকশন ৩ অনুযায়ী এনবিআরকে এই ক্ষমতা দেয়া আছে। অর্থবিলের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ২ থেকে ১০ এবং ৭১ ও ১০৭ নম্বর দফায় যেসব পণ্য ও সেবার ওপর নতুন করহার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে, ওই দিন থেকেই সেগুলো কার্যকর বলে গণ্য হবে। এর মধ্যে মোবাইল ফোনের সেবা, সিগারেট, জর্দা-গুল ইত্যাদি পণ্য রয়েছে। আর বাকি পণ্য সম্পর্কিত দফাগুলো ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। বাজেট পাসের সময় যদি করহার পুনঃনির্ধারণ করা হয়, তবে কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি কর কমানো হয় তবে করদাতা তা ফেরত পাবেন। আর বাড়ানো হলে করদাতাকে সে অনুযায়ী পরিশোধ করতে হবে। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোনের সেবা মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া নতুন সিমের কর ১০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা ও স্মার্টফোন আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। অর্থবিল অনুযায়ী, ফোন আমদানির শুল্ক বাজেট পাস হওয়ার পর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হলেও সেবামূল্য ও নতুন সিমের প্রস্তাবিত শুল্কহার বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হলো। নতুন শুল্কহারে গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বেড়ে গেছে। এ জন্য গ্রাহকদের বছরে প্রায় ১৩শ কোটি টাকা বাড়তি গুনতে হবে বলে মনে করছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব। আগের মতো ব্যবহার করেও এখন প্রতি গ্রাহককে গড়ে ৮১ টাকা বেশি দিতে হবে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির গত এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে সচল সিমের সংখ্যা ১৬ কোটি প্রায়। প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর হলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ১ শতাংশ সারচার্জ, ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং অন্যান্য মিলে মোট কর দাঁড়াবে ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। যা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি। মোবাইল ফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের এক হিসেবে দেখা গেছে, সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোয় ১০০ টাকার বিনিময়ে মূলত ৭৮ দশমিক ২৮ টাকার সেবা পাবেন গ্রাহক। বাকি ২২ দশমিক ৭২ টাকা যাবে সরকারের পকেটে। আগে ১০০ টাকার বিনিময়ে ৮২ টাকা ১৩ পয়সার সেবা পাওয়া যেত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App