×

জাতীয়

আটকে আছে ৫ শতাধিক গুরুতর মামলার কার্যক্রম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০১৯, ০১:১৮ পিএম

আটকে আছে ৫ শতাধিক গুরুতর মামলার কার্যক্রম
রাজধানীর আদাবরে ২০১৭ সালে সৎ বাবা কর্তৃক ধর্ষিত হয় ১৩ বছরের একটি শিশু। এ ঘটনায় ওই বছরের ১৭ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদাবর থানায় একটি মামলা হয়। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর এসআই ফরিদা ভিকটিম ও আসামির ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) স্থাপিত ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পাননি তিনি। এসআই ফরিদা বলেন, সব ধরনের তদন্ত সম্পূর্ণ করা হলেও শুধু ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়ায় মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। আদালতের চাপ থাকা সত্তে¡ও চার্জশিট দিতে পারিনি। শুধু আদাবর থানার আলোচিত এ মামলাটিই নয়, ন্যাশনাল ডিএনএ ল্যাবের প্রধান মেশিনটি (জেনেটিক এনালাইজার) গত সাড়ে পাঁচ মাস ধরে নষ্ট থাকায় আটকে আছে এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৫ শতাধিক মামলার কার্যক্রম। সূত্র জানায়, এসব মামলার অধিকাংশই ধর্ষণের ঘটনার। অথচ শুধু ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়ায় স্পর্শকাতর এ মামলাগুলোর চার্জশিট দেয়া যাচ্ছে না। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য তাগিদপত্র নিয়ে প্রতিনিয়তই ন্যাশনাল ডিএনএ ল্যাবে এসে ধরনা দিচ্ছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু রিপোর্ট না পেয়ে হতাশ হয়েই ফিরে যাচ্ছেন তারা। ফলে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা যেমন বাড়ছে, তেমনি ভিকটিমকে বিচারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে। গত ১১ জুন দুপুরে ডিএনএ রিপোর্টের জন্য খুলনা বিভাগের বিভিন্ন থানার ১০টি মামলার তাগিদপত্র নিয়ে ন্যাশনাল ডিএনএ ল্যাবে আসেন খুলনা সদর থানার এসআই শাহনেওয়াজ। কিন্তু ডিএনএ রিপোর্ট না পেয়ে হতাশ হয়েই ফিরে যান তিনি। সে দিন এসআই শাহনেওয়াজ ভোরের কাগজকে বলেন, যে ১০টি মামলার ডিএনএ রিপোর্ট চেয়ে ল্যাব কর্তৃপক্ষকে তাগিদপত্র দেয়া হয়েছে এর সবগুলোই ২০১৮ সালের এবং অধিকাংশই ধর্ষণ মামলার। গত বছরের বিভিন্ন সময় এসব মামলার আসামি ও ভিকটিমের নমুনা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। কিন্তু বারবার তাগিদ দেয়া সত্তে¡ও আমরা রিপোর্ট পাইনি। আদালত ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপ থাকা সত্তে¡ও শুধু ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়ায় চার্জশিট দেয়া যাচ্ছে না। রিপোর্টের জন্য যখনই আসি ল্যাব থেকে বলা হচ্ছে ল্যাবের মেশিন নষ্ট। আজও খালি হাতে ফিরে যেতে হলো আমাকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এবং ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, গত জানুয়ারি থেকে ডিএনএ ল্যাবের ‘জেনেটিক এনালাইজার’ মেশিনটি নষ্ট; এটা সত্য। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি, সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। ল্যাবের ইক্যুপমেন্ট প্রায় ১২ বছর আগে কেনা, এগুলো এখন রিপেয়ারিং করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। সরেজমিনে জাতীয় ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে গিয়ে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মোট ৪৮০টি চাঞ্চল্যকর মামলার ভিকটিম ও আসামির নমুনা ন্যাশনাল ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। তার মধ্যে ৩০২টি মামলার আলামত ডিএনএ ল্যাবে পরীক্ষাধীন রয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের প্রথম চার মাসে মোট ২০৮টি মামলার নমুনা পরীক্ষাধীন রয়েছে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে মোট ৫১০টি মামলার নমুনা এখনো পরীক্ষাধীন। ল্যাব কর্মকর্তারা জানান, প্রায়শই দেশের বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মকর্তারা ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য তাগিদপত্র নিয়ে আসেন। আবার কেউবা মোবাইল ফোনে রিপোর্টের জন্য তাগিদ দেন। কিন্তু মেশিন নষ্ট থাকায় তারা নিরুপায়। এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, চাকরি স্থায়ী না হওয়া, পদোন্নতি না হওয়া, জনবল বৃদ্ধি না করাসহ নানা জটিলতার কারণে ন্যাশনাল ডিএনএ ল্যাবের বিশেষজ্ঞ বা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ। এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. আবুল হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App