×

মুক্তচিন্তা

আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ দরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০১৯, ০৯:০১ পিএম

বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় প্রমাণিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য অনতিবিলম্বে বাজার থেকে সরাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এই আদেশ কার্যকর করে আগামী ২৩ মের মধ্যে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। ধার্য তারিখে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হলে আদালত তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাজার থেকে ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর বিএসটিআই ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। এর মধ্যে ৫২টি পণ্য ভেজাল ও নিম্নমানের বলে প্রমাণ পাওয়া যায়, যার মধ্যে দেশের অনেক নামি-দামি ব্র্যান্ডের তেল, ঘি, সেমাই, নুডলস, মসলা, পানি ইত্যাদি পণ্য রয়েছে। ভোরের কাগজের গতকালের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিম্নমানের পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দোকানিরা।

জাতীয় মান নির্ধারণকারী সংস্থা বিএসটিআইয়ের নির্দেশনানুযায়ী অধিকাংশ দোকানিই নিম্নমানের ২২ পণ্য দোকান থেকে সরিয়ে ফেললেও তা ফিরিয়ে নিতে গড়িমসি করছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা তাদের নিয়োজিত সরবরাহকারী এজেন্টরা। ফলে নিষিদ্ধ হওয়া পণ্য সরিয়ে ফেলতে চাইলেও পারছেন না দোকানিরা। এসব পণ্য দোকানে তোলার জন্য সরবরাহকারীকে যে টাকা দিয়েছিলেন তাও আটকে আছে।

দেশে খাদ্য ব্যবসায়ে জড়িত কিছু অতি মুনাফাশিকারি এবং ভেজালকারীচক্রের দৌরাত্ম্য ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। উচ্চ আদালতকেও এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়। আমরা দেখতে চাই, আদালতের এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ও খাদ্যপণ্যের বাজারে ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে দেশে ন্যায্য ব্যবসার পরিবেশ বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যে সুশাসনের ঘাটতিও ক্রমাগতই বাড়ছে।

নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ এখনো পুরোপুরি সচেতন নয়। বারডেম পরিচালিত এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল- খাদ্যে ভেজাল ও রাসায়নিক বিষের কারণে দেশে প্রতি বছর অন্তত ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্যান্সার, ২ লাখ ২০ হাজার ডায়াবেটিস, ২ লাখ কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও প্রায় পৌনে ৩ লাখ মানুষ ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও পেটের পীড়া, লিভার, অ্যালার্জিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের লাখ লাখ মানুষ।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরার কেউ নেই। ইচ্ছামতো তারা ভেজাল করে পণ্য বাজারজাত করছে। ভেজালের এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে বের হওয়ার উপায় কি? আইন প্রয়োগ করে, জেল জরিমানা করে কি শুধু সম্ভব। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা শুধু একজন কর্মকর্তা হিসেবে নন, একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে জনগণের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন বলে আদালত প্রত্যাশা করছে।

এ জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ও সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে সরকার খাদ্যপণ্যে ভেজাল রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- এমনই প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App