স্বাগতিকদের কাছে পাত্তাই পেল না আফগানিস্তান
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০১৯, ১২:৪৬ এএম
যত দিন গড়াচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ততই জমে উঠছে। সমর্থকদের মধ্যে এখন শেষ চারের হিসাব-নিকাশ চলছে। বিশেষ করে টাইগার সমর্থকরা সেমিফাইনালে সাকিব-মাশরাফিদের দেখতে মরিয়া। এ মুহূর্তে স্বাগতিক ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া ৫ ম্যাচ থেকে ৮ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালের পথে এক পা বাড়িয়ে রেখেছে। অবশিষ্ট চার ম্যাচ থেকে দুটি জয় পেলে তাদের শেষ চারে প্রবেশ অবধারিত। নিউজিল্যান্ড এবং ভারত ৪ ম্যাচ থেকে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে। পঞ্চম স্থানে থাকা টাইগাররা আগামীকাল অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে তাদের সেমির সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল হবে। গতকাল
ওল্ড ট্রাফোর্ডে আগানিস্তানকে নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠে ইংল্যান্ড। না উঠে উপায় আছে! র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা দলটির সামনে তলানিতে থাকা আফগানরা যে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না তা তো আগে থেকেই অনুমেয়। দুর্বল রশিদ-নবীদের পেয়ে মরগান-জো রুটরা এবার বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৩৯৭ রানের ইনিংসটি খেলে নিয়েছে। ইংলিশদের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৭ রান সংগ্রহ করে আফগানরা। ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়ী এ ম্যাচে ইংল্যান্ড অধিনায়ক মরগান মাত্র ৭১
বলে ১৪৮ রানের কাব্যিক ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন। শুক্রবার হেডিংলিতে শ্রীলঙ্কার মোকাবেলা করবে ইংল্যান্ড।
অসংখ্য কিংবদন্তি ক্রিকেটারের জন্ম দিয়েছে ইংল্যান্ড। অ্যালান নট, গ্রাহাম গুচ, ইয়ান বোথাম, কেভিন পিটারসেন, এন্ড্রু ফ্লিনটফ, অ্যালিস্টার কুক, জেমস এন্ডারসন, মাইকেল ভনসহ অনেক বিশ্বসেরা ক্রিকেটারের জন্ম দেয়া ইংল্যান্ড এখনো পর্যন্ত একবারও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সেই আক্ষেপটা এবার ঘুচাতে চায় ইংলিশরা। ঘরের মাঠে চলমান দ্বাদশ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে চায় দলটি। অবশ্য শিরোপা জেতার মতোই শক্তিশালী দল নিয়ে বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে তারা। ইয়ন মরগানের নেতৃত্বাধীন দলটি ব্যাটিং-বোলিং সবদিক থেকেই দারুণ ভারসাম্যপূূর্ণ। হট ফেভারিট হিসেবেই দ্বাদশ বিশ্বকাপে খেলছে তারা। কেন তাদের শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার বলা হচ্ছে, সেটার প্রমাণ গতকাল আরো একবার দিয়েছেন ইয়ন মরগান, জো রুটরা। বিশ্বকাপের গতকালের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করে ৩৯৭ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করায় স্বাগতিকরা। যা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ সংগ্রহ, আর সামগ্রিকভাবে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এটি ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। ইংল্যান্ডের টপঅর্ডারের ব্যাটসম্যানরা যেন এ দিন আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের ব্যাটিং শেখানোয় মেতে উঠেন। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবী, দওলাত জাদরানরা পাত্তাই পাননি স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানদের সামনে।
আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে এখন শীর্ষে আছে ইংল্যান্ড আর আফগানিস্তানের অবস্থান ১০ নম্বরে। স্বাভাবিকভাবে ম্যাচে ফেভারিট ছিল ইংলিশরা। জয় তাদের এক প্রকার নিশ্চিতই ছিল। দ্বাদশ বিশ্বকাপে নিজেদের আগের সব ম্যাচেই রান উৎসব করেছে ইয়ন মরগানের দল। সেই ধারাবাহিকতা আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ধরে রাখে তারা।
ইনজুরির কারণে ২ ম্যাচের জন্য ছিটকে গেছেন ফর্মে থাকা জেসন রয়। তার জায়গায় ইংল্যান্ডের একাদশে সুযোগ পান জেমস ভিনসে। উদ্বোধনী জুটিতে জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি গড়ে আউট হন তিনি। ভিনসের ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান। মুজিবের ক্যাচ বানিয়ে তাকে সাজঘরে ফেরান দওলাত জাদরান। ম্যাচে আফগানদের স্বস্তি বলতে কেবল এতটুকুই। দ্বিতীয় উইকেটে ১২০ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় স্কোরের ভিত তৈরি করে দেন জো রুট ও ওপেনার বেয়ারস্টো। সেঞ্চুরি থেকে ১০ রান দূরে থাকতে বেয়ারস্টো আউট হন।
এরপর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক ইয়ন মরগান। ইনজুরির কারণে এই ম্যাচে খেলারই কথা ছিল না তার। আর মরগানই এ দিন রশিদ-নবীদের নিয়ে মেতে উঠেন ছেলেখেলায়। ব্যাট হাতে ২২ গজে ঝড় তুলে ৭১ বলে ১৪৮ রানের দর্শনীয় এক ইনিংস খেলেন তিনি। যেখানে চারের চেয়ে ছক্কার মারই বেশি। তার ইনিংসে ১৭টি ছক্কা ও ৪টি চারের মার রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন এক রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসেও এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড এখন তার দখলে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এক ম্যাচে সর্বাধিক ছক্কা মারার রেকর্ডটি আগে একই সঙ্গে তিনজনের দখলে ছিল। তারা হলেন ভারতের রোহিত শর্মা, উইন্ডিজের ক্রিস গেইল ও দক্ষিণ আফ্রিকার এ বি ডি ভিলিয়ার্স। তিনজনের নামের পাশেই আছে সমান ১৬টি করে ছক্কা। এর মধ্যে গেইল ও ডি ভিলিয়ার্স দুজনই ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে এই কীর্তি গড়েন। মরগান তার ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরির দেখা পেলেও ১২ রানের জন্য শতক বঞ্চিত হন রুট।
এদিন যেন কলবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে আফগান বোলারদের ওপর। পুরো ম্যাচে মোট ২৫টি ছক্কা মেরেছেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। যা কোনো দলের এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড। এর আগেও অবশ্য রেকর্ডটি ইংলিশদেরই দখলে ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উইন্ডিজের বিপক্ষে ৪১৮ রান করার পথে ২৪টি ছক্কা মেরেছিলেন তারা।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৯৭ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করায় ইয়ন মরগানের দল। আফগানিস্তানের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন দওলাত জাদরান ও গুলবাদিন নাইব।
এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তিন স্পিনার রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবী। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে জোরেশোরে হুঙ্কারও ছেড়েছিলেন তারা। কিন্তু রশিদ-নবীদের সব দম্ভ মাটিতে মিশিয়ে গেছে গতকাল। রশিদ খান ৯ ওভারে দেন ১১০ রান। যা বিশ্বকাপের এক ম্যাচে বল হাতে সবচেয়ে বেশি রান দেয়ার রেকর্ড। এর আগে এই বাজে রেকর্ডটি নিউজিল্যান্ডের মার্টিন স্লেডেনের দখলে ছিল। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে ১২ ওভারে ১০৫ রান দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া গতকালের ম্যাচে নবী ৯ ওভারে ৭০ রান দেন।