×

অর্থনীতি

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বেশি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০১৯, ১১:২৯ এএম

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বেশি
খেলাপি ঋণে জর্জরিত ব্যাংকিং খাত। যার প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে। খেলাপির লাগাম ধরতে হিমশিম খাচ্ছে স্বয়ং সরকারও। চলতি বছরের জুন মাস শেষে সরকারি-বেসরকারি কিংবা বিদেশি সব খাতের ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতেই খেলাপি ঋণের আধিক্য বেশি। খেলাপি ঋণের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। জুন শেষে এ ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ৪ লাখ ৮ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার মধ্যে ২১ হাজার ৪১০ কোটি টাকাই রয়েছে খেলাপি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ সব তথ্য জানা গেছে। বেসরকারি খাতের মধ্যে ঋণখেলাপির শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। তিনমাসে ব্যাংকটির খেলাপি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে নাম পরিবর্তন করা পদ্মা ব্যাংকের তিন মাসে খেলাপি বেড়েছে ৪০০ কোটি টাকা। মূলত, নিয়মিত খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ায় এবং চাহিদা অনুযায়ী আমানত সংগ্রহ করতে না পারায় বেশিরভাগ ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, এই সংকট মোকাবেলায় অনেক ব্যাংক ১০ শতাংশের বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করতে চাইলেও গ্রাহকদের সাড়া মিলছে না। ফলে ব্যাংকে সুদের হার ১৬/১৭ শতাংশে পৌঁছে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ঘটনাই ঋণখেলাপি হওয়ার মূল কারণ। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করেন তারা। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও চাহিদামতো ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ করতে না পারায় ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। ফলে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা বা ১৮ শতাংশ। এর বাইরে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবলোপনের মাধ্যমে ব্যাংকের হিসাবের খাতা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে নিট ৪০ হাজার ১০১ কোটি টাকা। এ ঋণ যোগ করলে দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিল এক ধরনের হিসাব জালিয়াতি। এসব ঋণ আদায় হয় না। সর্বোচ্চ কিছুদিন লুকিয়ে রাখা যায়। সূত্র জানায়, এদিকে খাতওয়ারি হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়ই মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেক রয়েছে। খেলাপি ঋণের শীর্ষ তালিকায় আছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২১ হাজার ৪১০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপির ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সম্প্রতি এই ব্যাংকেরই ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৫ হাজার কোটি টাকা ও অ্যাননটেক্স গ্রুপের প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। এ টাকা উদ্ধারে বিভিন্ন ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে বলে জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে সোনালী ব্যাংকে। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকের ৮ হাজার ৮০৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাকের ৬ হাজার ১৪৭ কোটি ১১ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ৩৮০ কোটি ও বিডিবিএলের ৯০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হয়েছে। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ৩ হাজার ৫৭৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের রয়েছে এক হাজার ২১১ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। গত তিন মাসে ব্যাংকটিতে খেলাপি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মার্চ শেষে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৮. ৮৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৪.৩১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের তিন মাসে খেলাপি বেড়েছে এক হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৪৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স) মোট খেলাপি ৩ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। তিন মাস আগে ব্যাংকটির খেলাপি ছিল ৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যারা ঋণখেলাপি, তাদেরও যথেষ্ট রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আছে। কাজেই ইচ্ছে করলেই ব্যাংক এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। অডিট কমিটির স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা থাকলেও তারা তা করতে পারছে না। এ ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইনের যে দুর্বলতা রয়েছে, তা দূর করে দ্রুতগতিতে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে ঋণখেলাপি সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া যাবে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এবারেই খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে। গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১.৮৭ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে। এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা হয়েছিল। ২০১৬ সালে তার আগের বছরের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। ওই বছর ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৪ ও ২০১৫ খেলাপি ঋণ ছিল ৫০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা ও ৫৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App