×

খেলা

কঠিন সমীকরণে দুদলই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০১৯, ১১:০৫ এএম

কঠিন সমীকরণে দুদলই
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত উইন্ডিজকে একবারও হারাতে পারেনি। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে দুদল এ পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে চারবার। এর মধ্যে তিনবারই জয় পেয়েছে ক্যারিবীয়রা। আর অন্য ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে বৃষ্টির কারণে। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৃশ্যপট পাল্টেছে। বিশ্বের যে কোনো দলকেই এখন হেসে খেলে হারাতে পারে টাইগাররা। এই তো মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই আয়ারল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ওই সিরিজে উইন্ডিজকে টানা ৩ ম্যাচে হারিয়েছে স্টিভ রোডসের শিষ্যরা। দ্বাদশ বিশ্বকাপের আজকের ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ সেই উইন্ডিজই। শেষ চারে যাওয়ার দৌড়ে টিকে থাকার লড়াইয়ের ম্যাচে আজ মুখোমুখি হবে দুদল। ম্যাচটির ভেন্যু টনটনের দ্য কুপার অ্যাসিয়েটস কাউন্টি গ্রাউন্ড। এই ম্যাচে হারলে বিশ্বকাপের সেমিতে যাওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে উঠবে মাশরাফির দলের জন্য। কেননা উইন্ডিজকে হারাতে না পারলে জিততে হবে পরের ৪ ম্যাচের সবকটিতেই। তাই এই ম্যাচটিকে টাইগারদের বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়া যায়। ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে চলমান দ্বাদশ বিশ্বকাপের শেষ চারে যেতে হলে জিততে হবে অন্তত ৫টি ম্যাচ। প্রোটিয়াদের হারিয়ে আগেই একটি জয় তুলে নিয়েছে মাশরাফি বাহিনী। যেসব দলকে অবশ্যই হারানোর লক্ষ্য নিয়ে টাইগাররা ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছে সেগুলোর মধ্যে উইন্ডিজ একটি। তাই আজকের ম্যাচটি জেতা আবশ্যক মাশরাফির দলের জন্য। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশের দুরন্ত ক্রিকেটাররা। ম্যাচটিতে প্রোটিয়াদের ২১ রানে হারিয়ে নিজেদের অভিযান শুরু করে মাশরাফি বাহিনী। পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় হাবিবুল বাশার-আকরাম খানদের উত্তরসূরিরা। শ্বাসরুদ্ধকর ওই ম্যাচটি টাইগাররা হারে ২ উইকেটে। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ। আর মাশরাফির দলের পরের ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। ৪ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে এখন টেবিলের ৮ নম্বরে আছে টাইগাররা। অন্যদিকে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করে ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উইন্ডিজ। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৫ রানে হেরে যায় তারা। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয় বৃষ্টির কারণে। চতুর্থ ম্যাচে ক্যারিবীয়দের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ক্রিস গেইল, আন্ড্রে রাসেলরা জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হওয়ার ম্যাচটি ৮ উইকেটে হেরে যায় জেসন হোল্ডারের দল। ক্যারিবীয়দের অবস্থান এখন পয়েন্ট টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে। পয়েন্ট টেবিলের অবস্থান বলছে বাংলাদেশ ও উইন্ডিজ উভয় দলের জন্যই আজকের ম্যাচটি জেতা জরুরি। গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন ম্যাচ জয় ভিন্ন আর কোনো কিছুই ভাবছেন না তিনি। অন্যদিকে উইন্ডিজ দলপতি জেসন হোল্ডারের লক্ষ্যও যে কোনো মূল্যে ম্যাচ জেতা। তিনি বলেন, বিশ্বকাপে আমরা এখনো নিজেদের সামর্থ্যরে খুব অল্প কিছুই দেখিয়েছি। নিজেদের পক্ষে কি করা সম্ভব তা আমরা খুব ভালোভাবেই জানি। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত আমার দলের খেলোয়াড়রা। বাংলাদেশ ও উইন্ডিজ এ পর্যন্ত ৩৭টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে ক্যারিবীয়দের ২১ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ জিতেছে ১৪টি ম্যাচ। এ ছাড়া অবশিষ্ট ২টি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছে। অতীত রেকর্ডে পিছিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে এগিয়ে আছে টাইগাররাই। দুদলের মধ্যকার শেষ ১০ ম্যাচের ৭টিতেই জিতেছে মাশরাফির দল। আর উইন্ডিজ জিতেছে কেবল ৩টি ম্যাচে। আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে একটি পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। টনটন মাঠ হিসেবে বেশ ছোট। তাই একাদশে ফিরতে পারেন দেশের সবচেয়ে দ্রæতগতির পেসার রুবেল হোসেন। সে ক্ষেত্রে কপাল পুড়তে পারে মোহাম্মদ মিঠুনের। উইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে নিজেদেরকেই ফেভারিট মানছেন বাংলাদেশ দলের ওপেনার তামিম ইকবাল। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নিকট অতীতে আমরাই তাদের চেয়ে বেশি জিতেছি। তাই আমি মনে করি বাংলাদেশই ফেভারিট। শেষ চারের পথে এখন কঠিন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে আছে টাইগাররা। তবে সমীকরণ নিয়ে মোটেই ভাবছেন না বলে জানিয়েছেন তামিম। এদিকে ক্রিস গেইল, শাই হোপ ও আন্ড্রে রাসেলকে থামানোটা কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। তার মতে, হোপ বাংলাদেশের বিপক্ষে সবসময় ভালো খেলে। বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজেও দুর্দান্ত ব্যাট করেছে সে। তাই তাকে থামানোর পরিকল্পনা সাজাচ্ছি আমরা। গেইল ও রাসেলকে দ্রুত ফেরাতে হবে। কেননা তারা ব্যাট হাতে ঝড় তুললে ম্যাচ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। টাইগার ভক্তদের জন্য সুখবর মুশফিকুর রহিমের ইনজুরি তেমন গুরুতর নয়। অভিজ্ঞ এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের চোট নিয়ে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, এক্স-রে রিপোর্টে দেখা গেছে, হাড়ে কোনো চিড় নেই। তার খেলার সম্ভাবনাই বেশি। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বল হাতে সামর্থ্যরে প্রমাণ দিতে পারেননি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এ জন্য অনেকেই মেতে উঠেছেন তার সমালোচনায়। তবে মাশরাফির পাশে আছেন কোচ স্টিভ রোডস। তিনি জানান, যারা ম্যাশের সমালোচনা করছেন তারা অতীত ভুলে গেছেন। সে একাই বাংলাদেশ দলকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। ইনজুরি তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় বাধা। এরপরও সে অনুশীলনে অন্য সবার মতোই সময় দেয়। তার ওপর আমার শতভাগ আস্থা আছে। আশা করি, উইন্ডিজের বিপক্ষেই বল হাতে ছন্দ ফিরে পাবে ম্যাশ। সাবেক টাইগার ক্রিকেটারদের বিশ্বাস, সামর্থ্যরে সেরাটা দিতে পারলে উইন্ডিজকে হারানো সাকিব-তামিমদের জন্য খুব একটা কঠিন হবে না। মোহাম্মদ রফিক, আকরাম খান, রাজিল সালেহ, খালেদ মাসুদ পাইলট সবারই আস্থা আছে মাশরাফির দলের ওপর। মাশরাফি বাহিনী সেই আস্থার প্রতিদান কতটা দিতে পারে, সেটাই এখন দেখার পালা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App