×

সাহিত্য

নাচ-গান-কবিতায় বর্ষাবরণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০১৯, ১১:৩৫ এএম

নাচ-গান-কবিতায় বর্ষাবরণ
সকালের আকাশে ছিল আষাঢ়ের গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। এরই মাঝে নাচ-গান-কবিতায় প্রাণের ঋতু বর্ষাকে স্বাগত জানাল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ও বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে বর্ষাবরণের এ দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকালে শিল্পী ইবাদুল হক সৈকতের সেতারে মেঘ মল্লার রাগ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে শুরু হয় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর বর্ষা উৎসব। এরপর একে একে পরিবেশিত হয় দলীয় নৃত্য, দলীয় ও একক সঙ্গীত ও আবৃত্তি। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নেয় উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ, বহ্নিশিখা, স্বভূমি, ভাওয়াইয়া সঙ্গীত সংগঠন এবং উদীচী বাড্ডা, কাফরুল, মিরপুর, গেন্ডারিয়া, সাভার শাখা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী পরিচালিত শিল্পকলা বিদ্যালয় বিশ্ববিণার বেহালা শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সেঁজুতি বড়ুয়া, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, নাহিয়ান দুরদানা সুচী, মায়েশা সুলতানা উর্বী, মুনমুন খান, রবিউল হাসান, মারুফ ইসলাম, অনিকেত আচার্য। নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন, স্বপ্নবীনা শিল্পকলা বিদ্যালয় ও উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। বর্ষা উৎসবের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ও গবেষক ড. সফিউদ্দিন আহমেদ, সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা, সংস্কৃতিজন শংকর শাওজাল, উদীচী ঢাকা মহানগরের সভাপতি নিবাস দে ও সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান ও বর্ষা উৎসব আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক তমিজউদ্দিন। ড. সফিউদ্দিন বলেন, বর্ষাঋতু আমাদের প্রাণের মাঝে নানাভাবে শান্তির স্পর্শ আনে। আকাশ মেঘে ঢেকে যায়, উবে যায় তীব্র গরম। আমাদের সংস্কৃতি ও সঙ্গীতে বর্ষা চিরকালই নতুন জাগরণ ঘটায়। মুক্তির অন্বেষণে প্রকৃতি সাজে সবুজের সমাহারে। আমরা কৃত হই এই ঋতুর বহতায়। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি পর্যায়ে বর্ষা কথন পাঠ করেন উদীচী ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। অনুষ্ঠানে অংশগ্রণকারী শিল্পীদের গাছের চারা দেয়া হয়। অন্যদিকে আষাঢ়ের প্রথম সকালে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় নগরের বুকে সবুজায়নের প্রত্যয়ে বর্ষাকে স্বাগত জানায় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শুরুতে সঙ্গীত সংগঠন সুরবিহার সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘বাদল বাউল বাজায় বাজায় রে’। সুরতীর্থ পরিবেশন করে রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘ধরণীর গগনের মিলনের ছন্দ’, স্বভ‚মি লেখক শিল্পীকেন্দ্র পরিবেশন করে লোকসঙ্গীত ‘কলকল ছলছল নদী করে টলমল’। বহ্নিশিখা পরিবেশন করে নজরুল সঙ্গীত ‘মেঘেরও ডমরু ঘন বাজে’। সম্মেলক গীত পরিবেশনের পর বকুলতলার মঞ্চে হয় বর্ষা কথন পর্ব। এ পর্বের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, প্রকৃতি আমাদের নানা সম্পদ দিয়েছে। সেই প্রকৃতির যত্ন করতে হবে, সদ্ব্যবহার করতে হবে প্রকৃতির নানা উপাদানের। আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা এক অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি করে যাব। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলায় বাবা-চাচাকে দেখতাম, আষাঢ় এলে বৃক্ষরোপণ করতে। এখনো বলছি, চলুন একটি গাছ লাগাই সবাই। পরিবেশকে সুন্দর রাখতে বৃক্ষরোপণ এখন একরকম বাধ্যতামূলক। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি নিগার চৌধুরী বলেন, আজ আহ্বান করি, যে যেখানে সুযোগ পান, সেখানে একটি করে গাছ লাগান। আজকে একটা গাছ লাগাবেন, আগামী বছরে সে গাছ থেকে একটা ফুল পাবেন, অথবা ফল পাবেন। যদি তাও না পান, তাহলে অক্সিজেন পাবেন। আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, প্রকৃতিবান্ধব হওয়ার জন্য আমাদের ঋতুর কাছে ফিরে যেতে হয়। প্রত্যেক ঋতুর আলাদা করে বৈশিষ্ট্য আছে। আমরা চাই, ঋতুর বৈশিষ্ট্য তার মতো করে থাকুক। পরে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন, বাফা, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন। একক সঙ্গীত পর্বে শামা রহমান গেয়ে শোনান রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘আবার এসেছে আষাঢ়’, সঞ্জয় কবিরাজ শোনান নজরুল সঙ্গীত ‘রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে’, প্রিয়াংকা গোপ শোনান নজরুল সঙ্গীত ‘শাওন আসিল ফিরে’। আবৃত্তিশিল্পী নায়লা তারান্নুম কাকলী শোনান জয় গোস্বামীর ‘মেঘ বালিকা’, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল শোনান নির্মলেন্দু গুণের ‘সদরঘাটে পৌঁছাতেই’। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে উদয়ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে ফুল ও ফলদ বৃক্ষের চারা তুলে দেন আয়োজকরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App