×

জাতীয়

অপশাসনের সুবিধাভোগীদের পক্ষে গেছে বাজেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০১৯, ০১:২৩ পিএম

অপশাসনের সুবিধাভোগীদের পক্ষে গেছে বাজেট

রাজধানীর লেকশোর হোটেলে গতকাল সিপিডি আয়োজিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনায় বক্তব্য রাখেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য -ভোরের কাগজ

খাতওয়ারি বরাদ্দের দিক থেকে বাজেট ভারসাম্যহীন ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তাদের পর্যালোচনায় উল্লেখ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে ধনীদের বেশি সুবিধা দেয়া হয়েছে। যার ফলে অপশাসনের সুবিধাভোগী ধনী শ্রেণি বাজেটের বেশি সুবিধা ভোগ করবে। অন্যদিকে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য গতানুগতিক ভালো কথা ছাড়া অভিনব কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০ নিয়ে সিপিডির পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিশ্লেষণ তুলে ধরেন সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বাজেট অপশাসনের সুবিধাভোগীদের পক্ষে গেছে। অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলোকে বাজেটে তুলে ধরা হয়নি এবং সমাধানের কোনো আভাসও নেই। ব্যাংক খাতের সমস্যা নিয়ে বাজেটে আলোচনা আছে কিন্তু কর্মপরিকল্পনা নেই। ব্যাংকিং খাতের সমস্যাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। অন্যদের মধ্যে সিপিডির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ছাড়াও সংস্থাটির অন্য কর্মকর্তা ও গবেষকরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে গরিব মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তার প্রতিফলন এ বাজেটে দেখছেন না বলে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয়। তিনি বলে, এ বাজেট সচ্ছল উচ্চ আয়ের মানুষকে অনেক বেশি সুবিধা দিচ্ছে। গরিব মানুষের জন্য প্রান্তিকভাবে এক ধরনের একটা ব্যবস্থা থাকছে। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত, বিকাশমান মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত- এ থেকে খুব বেশি উপকৃত হবে না। ধনী ও গরিবের বৈষম্য বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলে, দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে কিন্তু গরিব মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সক্ষমতা বাড়ছে না। বরং আয় বৈষম্য, সম্পদের বৈষম্য, ভোগের বৈষম্য বাড়ছে। এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখন যে চাপের মধ্যে আছে বাজেটে তার কোনো স্বীকৃতি নেই। যে কারণে এই সমস্যা কাটানোর জন্য অর্থমন্ত্রী কোনো অভিনব কৌশল খোঁজেননি। মুদ্রানীতির ভেতরে, বাণিজ্যনীতির ভেতরে অথবা ভর্তুকি বিতরণের ক্ষেত্রে, কোনো ক্ষেত্রেই সেই ধরনের অভিনবত্ব নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। দেবপ্রিয় বলেন, প্রতি বছরই বাজেটে গৎবাঁধা কিছু ভালো কথা থাকে, সেই কথাগুলো আছে। তবে সেগুলোর আবার কর্মসূচি নেই। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী ৩ কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনার কথা বলেছেন। কিন্তু কোন খাতে, কত দিনে, কতজন করে কাজ পাবে- তার কোনো প্রাক্কলন বাজেটে নেই। বাজেটে বলা হয়েছে করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করা হবে। কিন্তু কত বছরে, কীভাবে তা হবে এবং তার মাধ্যমে কত টাকা রাজস্ব আসবে সে বিষয়ে কোনো রূপরেখাও বাজেটে নেই। তিনি এই পরিস্থিতিকে বাতাসের ভেতরে কিছু আশ্বাসের বাণীর সঙ্গে তুলনা করে বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই বলে মন্তব্য করেন। বাজেটের আকার বৃদ্ধি এবং রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, বাজেটের আকার টাকার অঙ্কে বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে বাড়েনি। লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে বাস্তবায়নের পার্থক্য বেড়ে যাচ্ছে। বাজেটে ঘাটতি ৫ শতাংশের উপরেই আছে। এবার সেটা বাড়বে কিনা রাজস্ব আহরণের ওপর নির্ভর করবে। আর্থিক খাতের সংস্কার বিশেষ করে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর কোনো উদ্যোগ বাজেটে নেই উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, ব্যাংকিং খাতের ভূমিকার ক্ষেত্রে নতুন কিছু পাচ্ছি না। ব্যাংকিং খাতের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সময়ক্ষেপণের ভেতরে চলে গেল আর কি। এ খাতের কোনো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃতিতে আসেনি। অনেক প্রকল্প অসমাপ্ত রেখে প্রস্তাবিত বাজেটে শত শত নতুন প্রকল্প না ঢোকানো, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে উন্নয়ন ব্যয় ৭ শতাংশ রাখায় অর্থমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানান সিপিডির ফেলো। পুঁজিবাজারের জন্য নেয়া পদক্ষেপ নিয়েও প্রশ্ন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে সুশাসন ছাড়া পুঁজিবাজারের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। ভ্যাট আইনে জরুরি সেবা ও পণ্যে ছাড় দেয়ার বিষয়টিও ঠিকই আছে বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু সারচার্জের ক্ষেত্রে সম্পদশালীদের যে ছাড় দেয়া হয়েছে তা সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে মেলে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা এবং ভবন নির্মাণে বিনিয়োগের মতো অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রেও বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, সে বিষয়েও কথা বলেন দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, অঘোষিত আয় ও বেআইনি আয়কে আলাদা করার সময় এসেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App