×

সাময়িকী

একজন সেলিনা হোসেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০১৯, ০৪:১৫ পিএম

একজন সেলিনা হোসেন
বাংলাদেশের মানুষ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাঁর লেখার মূল উপজীব্য। ঔপনিবেশিক শাসন আমল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সকল বঞ্চনা, শ্রেণি বৈষম্য, অবদমন, সংগ্রাম অর্জন সবই স্থান পেয়েছে তাঁর বিভিন্ন রচনায়। দেশ এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে স্থান পেয়েছে তাঁর লেখা। অনূদিত হয়েছে বেশ ক’টি ভাষায়। পেয়েছেন দেশ-বিদেশের অনেক পুরস্কার। তিনি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। ১৪ জুন, ১৯৪৭-এ রাজশাহীতে তাঁর জন্ম। সেলিনা হোসেনের লেখার বিষয় বহুমাত্রিক। আমাদের ভাষা আন্দোলন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তাঁর লেখায় কেবল অনুপুঙ্খভাবে ফুটে ওঠেনি পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। সেলিনা হোসেন নির্ভীক, স্পষ্টবাদী, আত্মবিশ্বাসী এক কথাসাহিত্যিক। তাঁর উপলব্ধিজাত অনুভ‚তিতে বাংলা কথাসাহিত্য হয়েছে সমৃদ্ধ। বিশ্লেষণধর্মী সাহিত্য সৃষ্টিতে প্রবহমান জীবন তাঁর সাহিত্য প্রেরণার মূল স্তম্ভ হয়ে কাজ করেছে। সমাজ সভ্যতার ওপর দাঁড়িয়ে খেটে খাওয়া জীবনের স্বপ্নচারী জনগোষ্ঠীর ওপর ছিল তাঁর অসীম মমত্ববোধ। পরম সূ²তায় নিজের যুক্তিকে তিনি উপস্থাপন করেছেন বাংলা সাহিত্যে। সমাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমগ্রতাই তাঁর শিল্পসত্তার মূল উপাদান হয়ে কাজ করেছে। বিংশ শতাব্দীর ষাট-সত্তর দশকের আন্তর্জাতিক মন্দা, নানামুখী অরাজকতা, অস্থিরতা ও দেশের ঔপনিবেশিক জাঁতাকলে পিষ্ট মানুষের ক্রমে নিঃস্ব হয়ে আসা, পাশাপাশি সমাজ জীবনের নানামুখী সংকট ও অস্তিত্বহীনতা তাঁর মনোজগতে প্রতিনিয়ত ভাঙন ধরিয়েছে। সমাজের মূল সত্যের অনুসন্ধান করাই তাঁর ছিল মানসিক প্রবণতা। মধ্যবিত্ত জীবন সংগ্রামে তাঁর আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াই ছিল লক্ষণীয়। সমাজবাদী চিন্তা-চেতনা, বিশ্লেষণধর্মী আত্মজিজ্ঞাসা তাঁর সাহিত্য সাধনার মূল সুর হয়ে কাজ করেছে। জীবনের নৈরাশ্যবাদ যেমন তাঁকে যন্ত্রণাদৃত করেছে আবার জীবনের আশাবাদও তাঁর সাহিত্য সাধনার জারকরস হয়ে কাজ করেছে। পৃথিবীর সভ্যতাকে সমৃদ্ধকরণে তাঁর আকণ্ঠ মনোনিবেশ আমাদের চমৎকৃত করে। তিনি কখনো প্রবৃত্তির দাসত্বকে মেনে নেননি, বরং মানবিক অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। সাহিত্য শিল্পকর্মের মৌলিকতায় বাংলা আধুনিক সাহিত্যে বিশিষ্ট জায়গা করে নিয়েছেন সেলিনা হোসেন। গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও লড়াকু জীবনের অনুসন্ধান আজীবন তাঁর সাহিত্য ভাণ্ডারকে গৌরবান্বিত করেছে। তাঁর উপলব্ধিজাত অনুভূতি শুধু কথা সাহিত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি শাণিত ও শক্তিশালী গদ্যের প্রকাশে প্রবন্ধের আকারেও উপস্থাপন করেছেন। তাঁর উপন্যাসে যেমন সনাতন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বাংলার লোক পুরাণের ঐতিহ্য ধারণকারী চরিত্র দেখেছি তেমনি দেখেছি সমকালের সমসামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংকটের নানামুখী বিস্তার। সেলিনা হোসেনের শৈশব কেটেছে বগুড়ায়। উন্মুক্ত উদার প্রকৃতির সাথে তাঁর বেড়ে ওঠা, উদারনৈতিক পারিবারিক পরিবেশ মানসিক ঔদার্যবোধের মনোবৃত্তি ধারণ করা বাবা-মা ও পারিবারিক পরিবেশে তিনি বেড়ে উঠেছেন। কখনো দলবেঁধে মাঠে-ঘাটে অবাধ বিচরণ, কখনো নদীতে ঘুরে বেড়ানো, গাছে চড়া, স্কুলে যাওয়া, রেশম চাষের এলাকা একজন সেলিনা হোসেন চষে বেড়ানো সবই ছিল নিত্যদিনের অভ্যাস। ছোটবেলা থেকেই উন্মুক্ত উদার প্রকৃতি আর অবাধ স্বাধীনতা তাঁর মনোভ‚মিকে সমৃদ্ধ করেছে। সেলিনা হোসেন কেবল তাঁর রচনার মাধ্যমে আমাদের সমৃদ্ধ করেননি বঞ্চিত নারীদের অধিকার রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁর রয়েছে সম্পৃক্তি। সেলিনা হোসেনের বিশাল সাহিত্য সম্ভার আলোচনা একটি লেখায় অসম্ভবই শুধু নয় একটি অবাস্তব প্রয়াস। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’সহ বেশ কয়েকটি উপন্যাস। হলদী গায়ের কিশোরী বুড়ির বিপ্নেীক চাচাত ভাই গফুরের সাথে বিয়ে হয়। তার কোল জুড়ে এক সন্তান জন্ম নেয়। সে সন্তান প্রতিবন্ধী। মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে পাক বাহিনীর হাতে সে তাঁর নাড়ি ছেঁড়া ধন তুলে দেয়। সে সন্তানের জীবনের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা ফিরে আসে। তাঁর রচিত ‘গেরিলা ও বীরাঙ্গনা’ মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত। ’৭১ সালে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্র্যাক প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযান চলছে। আর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বন্দি নারীদের ওপর চলছে অকথ্য নারী নির্যাতন। সেই নির্যাতিতদের উজ্জ্বল বিন্যাস আমরা বিস্ময়াভূত হয়ে লক্ষ করেছি। ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ (১৯৮২) উপন্যাস অষ্টম থেকে দশম শতাব্দীর সমকালীন চর্যাপদের সময়কালের পটভূমিতে লেখা। সে সময়কার অনেক সমসাময়িক নিদর্শন আমরা পেয়েছি এ উপন্যাসে। ‘পোকামাকড়ের ঘর বসতি’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। বাংলা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ জেলে সম্প্রদায়কে নিয়ে এক উল্লেখযোগ্য রচনা। সেলিনা হোসেন তাঁর এই রচনায় নাফ নদী তীরের সাহসী লড়াকু স্বপ্নতাড়িত জনগোষ্ঠীর জীবনধারা তুলে ধরেছেন। অসীম সাহস, লড়াকু জীবন, স্বপ্নচারী ও প্রেমময় মানুষ প্রবাহমান নদীর মতোই ভৌগোলিক সীমা পেরিয়ে যেন বুনে যায় স্বপ্ন। যে স্বপ্ন রামধনু পাখা মেলে উড়ে চলে জীবনের সাথে জীবন যোগ করে। যে স্বপ্নের মাঝে দাবানলের তীক্ষ্ণ ঘুড়িওয়ালা দুপুর এসে বিষাদের গান শুনিয়ে যায় না শুনিয়ে যায় নতুন জীবন স্বপ্নের স্বর্ণ খচিত ইতিহাস। ‘কাঁটাতারের প্রজাপতি’ নাচোলের তেভাগা আন্দোলনের ওপর রচিত উপন্যাস। ঐতিহাসিক চরিত্র ইলামিত্রের সাহসী জীবনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা, আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশা ব্যর্থতায়, সফলতায় তারা ঐশ্বর্যমণ্ডিত এক একটা মানুষ। যারা লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূর থেকে জীবন জয়ের ইতিহাসকে স্পর্শ করে। সময়ের পাঁজরে দুঃখের আগুনে পোড়া ভালোবাসার নূড়ি পাথর এসব মানুষেরা। যাদের স্বপ্নসাধে জড়িয়ে আছে নত্রলোকের জীবনের স্বাদ। ‘কালকেতু ও ফুল্লরা’ উপন্যাস ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত কবি কঙ্কন মুকুন্দরামের চণ্ডী মঙ্গল কাব্যের নায়ক-নায়িকা কালকেতু ও ফুল্লরার কাহিনী অবলম্বনে রচিত। ‘টানাপড়েন’ উপন্যাস ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত। জগৎ ও জীবনের জটিল মনস্তাতত্ত্বিক উপন্যাস এটি। মানুষের জীবনের যন্ত্রণা, স্বপ্ন, চাওয়া-পাওয়া, শ্রম, ঘাম, দুঃখ-কষ্ট আক্ষেপ টিকে থাকার লড়াই-এর উপজীব্য। জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া মানুষের অস্তিত্বের পীড়নে টিকে থাকার যুদ্ধই এ উপন্যাসের মূল আকর্ষণ। ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ বাংলাদেশ ও বাঙালি জীবনের অখণ্ড ভূখণ্ড। যে ভূখণ্ড নিয়ে বাঙালি জাতির বারোমাসি স্বপ্নবোনা। প্রতি সন্ধ্যায় মানুষের মঙ্গলধ্বনি বাজে যে মাটিতে। যে ভূখণ্ডে জাতির স্বপ্ন সাধে জড়িয়ে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি বাঙালিকে গৌরব উদ্দীপ্ত স্বপ্ন দিয়েছেন দিয়েছেন বেঁচে থাকার আকষ্ঠ সাহস। সে স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দেয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে। ‘যমুনা নদীর মুশায়রা’-সেলিনা হোসেনের আরেক অনবদ্য রচনা। ইতিহাস আর সাহিত্যের এক চমকপ্রদ যুগলবন্দি এই রচনা। আবু সায়ীদ আইয়ুবের ভাষায় তিনি উর্দু ভাষায় দূর হতম কবি। সেই মীর্জা গালিব এই লেখার মূল। মীর্জা গালিবকে নিয়ে বহু কবিতা, গবেষণা রচিত হয়েছে বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ভাষায়। ‘যমুনা নদীর মুশয়রা’ অন্য এক গালিবকে পাঠকদের সামনে তিনি উপস্থাপন করেছেন। ‘লারা’ উপন্যাস ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়। হৃদয়ের রক্তরণ, স্বপ্নসাধ, নাড়ি ছেঁড়া ধন লারার সাথে আত্মার প্রতিটি সূত্র তন্ত্রী যেন লেখকের অনুভূতিমিশ্রিত বেদনার্ত অধ্যায়। যে অনুভব মানুষকে প্রতিনিয়ত দগ্ধ করে, দ্রোহ করে, করে দহন। এ পীড়ন নিয়েই প্রতিদিন তিনি জীবনযাপন করে যান। যে লারা তাঁর বুকের মানিক আত্মবিশিষ্ট ধন। এ পীড়নের যে কোনো মুক্তি নেই লেখকের বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে তার নির্যাস আমরা দেখি। তাঁর প্রতিটি রচনা সমাজের এক একটা আয়না। যে আয়না সমাজের আলোকিত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকগুলোকে চিহ্নিত করে। পরম মানবিক চেতনাশ্রয়ী জীবনের অধিকারী তিনি। যে মানবিকতা দেশের সীমা ছাড়িয়ে সর্বকালের সব মানুষের সম্প্রতির কথা বলে। জীবন ও জগতের গভীর উপলব্ধির প্রকাশকে সেলিনা হোসেন শুধু কথা সাহিত্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি, তাঁর শানিত ও শক্তিশালী প্রবন্ধ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক রচনায় সমৃদ্ধ হয়েছে আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি। ‘কাঠ কয়লার ছবি’ উপন্যাসের পটভ‚মি একটি যুদ্ধশিশু ও চা বাগানের মানুষ। যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পায়নি জীবনমুক্তির কোনো পারিশ্রমিক। শুধু আজীবন উৎপাদন করে গেছে চা। শতাব্দীর পর শতাব্দী এভাবেই চলেছে শোষণ, শাসন। এদের মাঝে হঠাৎ এক যুদ্ধ শিশু এসে দাঁড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন নারীর গর্ভে যার জন্ম। সে শিশুর পিতা একজন পাকিস্তানি সৈনিক, জন্মের পরই সেই শিশুটিকে তার অসুস্থ মার কাছে না দিয়ে এক বিদেশি দম্পতিকে দিয়ে দেয়া হয়। তারা পরম মমতায় তাকে মানুষ করেন। একদিন সে বাংলাদেশে আসে নাড়ির টানে মায়ের খোঁজে। ‘মোহিনীর বিয়ে’ উপন্যাস ২০০২ সালে বের হয়। আমাদের চিরচেনা মায়ের গল্প এটি। সমাজ সত্য জীবনের গভীর আকুতি ও বেঁচে থাকার লড়াই আমরা এ কাহিনীতে দেখেছি। যে অস্তিত্বের শেকড় অনেক গভীরে। এ উপন্যাসে রমজান তার ভালোবাসাকে রক্তাক্ত করে প্রেমিকাকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়। রমজান সংসারী হয়ে পাঁচ কন্যার বাবা হয়। পতিতালয়ে প্রাক্তন প্রেমিকাকে গর্ভবতী দেখে আবার প্রতারণা করে বলে সে, তার স্ত্রীও গর্ভবতী। দুজনের সন্তান হবে একই সময়ে। সে বলে, তার ছেলে হলে লুকিয়ে তাকে দিয়ে দিতে। তার বংশ রক্ষা হবে। প্রেমিকা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য চরম যন্ত্রণা আর ক্ষোভে বলে, তার প্রেমিকের কন্যা হলে তাকে দিতে হবে। কারণ পতিতালয়ে কন্যা হলে সে হবে সোনার হরিণ। এভাবেই জীবনের টানাপড়েন ‘মোহিনীর বিয়ে’ উপন্যাসকে শাশ্বত ও মর্যাদাবান করেছে। ‘মর্গের নীল পাখি’ উপন্যাস আমাদের জীবনের সত্যনিষ্ট উচ্চারণের অনন্য দলিল। এ উপন্যাসে উচ্চারিত হয়েছে বেঁচে থাকা স্বপ্নের কথা। মৃত্যুর পর মর্গে শব হয়ে ঢুকতে হয় সে মৃত্যু কখনো আর স্বাভাবিক মৃত্যু থাকে না। আইনের কাছে বিক্রি হয়ে যায় আমাদের জীবনের জন্য। তাই ব্যবচ্ছেদ হয় শব। একদল ছেলেমেয়ে মর্গের অভিজ্ঞতা লালন করে নিজেদের মধ্যে। নিজেদের এক সময় বয়স্ক হতে দেখে তারা। রাষ্ট্রই যেন বেওয়ারিশ লাশ বহনকারী আনঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের গাড়ি। এর মাঝেই বেঁচে থাকার লড়াই করে যায় তারা। সেলিনা হোসেনের লেখা বৈচিত্র্যময়। হেনরিক ইবসেনের ২৬টি নাটকের ১৩০টি নারী চরিত্রের বিশ্লেষণ রয়েছে তাঁর ‘ইবসেনের নারী’ গ্রন্থে। আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, নারীর অধিকার, সাঁওতাল বিদ্রোহ, বইমেলা, বইপড়া সবই স্থান পেয়েছে তাঁর রচনায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App