×

জাতীয়

ফিরতি পথেও বাসে বেশি ভাড়া আদায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০১৯, ১২:১৮ পিএম

ফিরতি পথেও বাসে বেশি ভাড়া আদায়
কাগজ প্রতিবেদক : ঈদ শেষে এখনো ঢাকায় ফিরছে মানুষ। বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে উপচে পড়া ভিড়। পথে পথে আছে নানা ভোগান্তিও। সড়ক ও লঞ্চের যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ঝালকাঠি থেকে ঢাকাগামী এমভি টিপু লঞ্চ বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ এলাকার নদীর চরে আটকে যাওয়ায় ৩ হাজার যাত্রীর ভোগান্তি ছিল চরমে। ফেরিঘাটগুলোতেও মানুষ ও যানবাহনের ভিড়ে এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। ঈদের ৫ দিন পরও রেলের শিডিউল বিপর্যয়ের অবসান হয়নি। ঈদের ছুটি শেষে এখন সড়ক পথে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়েছে। সড়কে যানজট না হলেও কোথাও কোথাও ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। সব সড়কেই এখন ঢাকাগামী যানবাহনের ভিড়। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে ঢাকায় ফেরার জন্য হাজার হাজার যাত্রী বাসের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। এই সুযোগে পরিবহন কোম্পানিগুলো প্রকাশ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে। সাকুরা পরিবহনে পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় আসতে ৫০০ টাকার বাসভাড়া ৮০০ টাকা পর্যন্ত নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে ঢাকায় আসার পথে সব পরিবহন কোম্পানি নিজেদের ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোহাগ পরিবহন ও তিশা পরিবহনের বাসে টিকেটপ্রতি ৫০ টাকা বেশি নেয়া হয়। উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। বগুড়া থেকে ঢাকায় আসতে ৩৫০ টাকার টিকেট ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এই রুটের যাত্রী শাকিল আহমেদ। মাওয়া থেকে গুলিস্তানগামী সব বাসের ভাড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার পরও বাসগুলো রাস্তায় থামিয়েও অতিরিক্ত যাত্রী তুলছে। তাদের কাছ থেকেও ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবদুল আজিম জানান, বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়ার পর কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া রুটের বাস কোম্পানিগুলোকে ফোনে সতর্ক করা হয়েছে। চালক ও হেলপারদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা অভিযোগ অস্বীকার করে। বাস মালিকদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। বাস মালিকরা দাবি করেছেন, বাড়তি ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, চাঁদাবাজরা যাত্রী ধরে বাসে তুলে দিয়ে চালকের হাতে ভাড়া ধরিয়ে দিচ্ছে। আর বাকি টাকা তারা নিয়ে যাচ্ছে। মালিকরা কোনো বাড়তি টাকা পাচ্ছে না। এদিকে নৌপথে ঢাকায় ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিটি লঞ্চের ছাদ কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। ঝালকাঠি-ঢাকা রুটের এমভি টিপু লঞ্চটি নদীর চরে ১২ ঘণ্টা আটকা থাকার পর উদ্ধার করা হয়েছে। ওই লঞ্চের যাত্রী মানসী পারমিতা দে জানান, গত রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় এমভি টিপু লঞ্চটি প্রায় ৩ হাজার যাত্রী নিয়ে ঝালকাঠি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। লঞ্চটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল। লঞ্চের চালকের অদক্ষতার কারণে রাত ১০টার দিকে লঞ্চটি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ এলাকার নদীর চড়ায় আটকে যায়। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জোরালো কোনো উদ্ধার তৎপরতা না নেয়ায় সারারাত লঞ্চটি সেখানেই আটকা থাকে। লঞ্চের খাবার ও পানি ফুরিয়ে যায়। একপর্যায়ে লঞ্চের স্টাফদের সঙ্গে যাত্রীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে ওই কোম্পানির অন্য একটি লঞ্চ পাঠিয়ে আটেকে পড়া লঞ্চটি টেনে নামানোর পর আবার ঢাকায় উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে এবং বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সদরঘাটে পৌঁছে। এই লঞ্চের যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হয়েছে। এদিকে যানবাহন ও যাত্রীর চাপে ফেরিঘাটগুলোতেও এখন মানুষের ভিড়। কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটেও ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল নেমেছে। এই রুটে গতকাল সকাল থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোটে ওঠার জন্য যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে ফেরিগুলোতে যাত্রীদের চাপ থাকলেও যানবাহনের তেমন একটা চাপ ছিল না। বিআইডবি্লউটি কাঁঠালবাড়ী ঘাটের অতিরিক্ত পরিচালক শাহাদাত হোসেন জানান, যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ১৮টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ ও দুই শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে। গত রবিবার থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার শুরু হয়েছে। তবে মোটরসাইকেল ও সাধারণ যাত্রীদের সংখ্যাই বেশি। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া ঘাটেও ঢাকাগামী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীর চাপ সামলাতে ঘাট কর্তৃপক্ষ এখন হিমশিম খাচ্ছে। ফেরিঘাটে যাত্রীসহ প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের চাপ রয়েছে। রাস্তায় যানবাহনের লাইনও দেখা গেছে। আগামীকাল থেকে এই চাপ আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তীব্র গরমে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা মানুষের ভোগান্তি ছিল চরমে। দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এই নৌরুটে ছোট-বড় ২০টি ফেরি ও ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করছে এবং ৬টি ফেরিঘাটের সবকটিই সচল রয়েছে। এদিকে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় এখনো অব্যাহত রয়েছে। গতকালও ঢাকা ছেড়ে যাওয়া ও ঢাকায় ফেরা ট্রেনের শিডিউলে গড়বড় হয়েছে। কোনো কোনো ট্রেন নির্ধারিত সময়ের বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। ওই ট্রেনগুলো ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বিলম্বে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে। ফলে ঢাকায় ফিরতেও চরম ভোগান্তিতে পড়েন ট্রেনের যাত্রীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App