×

জাতীয়

আনন্দ বেদনায় রোহিঙ্গাদের ঈদ উদযাপন, স্থানীয়দের বিড়ম্বনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০১৯, ১০:২৫ পিএম

আনন্দ বেদনায় রোহিঙ্গাদের ঈদ উদযাপন, স্থানীয়দের বিড়ম্বনা
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় আশ্রিত রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আনন্দ বেদনার মধ্য দিয়ে পালন করছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। পালিয়ে আসা সহায় সম্বলহীন এসব রোহিঙ্গারা প্রায় দুই বছরেও মিয়ানমারে সৃষ্ট সহিংসতা ভুলতে পারেননি। ঈদ এলে মাতৃভূমি থেকে দূরে থাকা ও স্বজন হারানো বেদনা বিদূর আরো বাড়িয়ে তুলে তাদের। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঈদের কেনাকেটা ব্যতীত নিরানন্দে কাটছে তাদের ঈদ। আবার অনেক ধনী রোহিঙ্গা ও শিশু কিশোররা উৎসব মূখর পরিবেশ ও আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করছেন। ঈদ উদযাপন করতে গিয়ে স্থানীয়দের মিশে যাওয়ায় বিড়ম্বনা প্রকাশ করেছে অধিবাসীরা। প্রশাসন বলছে, স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় রোহিঙ্গারাও ক্যাম্পে নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করছে। সরেজমিন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,মিয়ানমারে সৃষ্ট সহিংসতায় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়। ৩০ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প গড়ে তুলে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে এবার সহ ঈদুল ফিতর দুই বার পালন করছেন রোহিঙ্গারা। অনেক ক্যাম্পে ঈদ উৎসবের তেমন আমেজ নেই। ২০১৭ সালের আগেই যাদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করেছিলেন, এবার তাদের অনেকে শুধু স্মৃতি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনে প্রাণ হারানো সেই স্বজনদের দুঃসহ স্মৃতি মনে করেই পালন করেন রোহিঙ্গারা। পাশাপাশি অপ্রতূল ত্রাণ ব্যতীত তাদের পর্যাপ্ত সেমাই চিনি, কাপড় চোপর ও ঈদ সামগ্রী ছাড়া নিরানন্দে ঈদ উদযাপন করছেন বেশিরভাগ রোহিঙ্গা। আবার একেবারেই ঈদের আমেজ নেই তা নয়, যে সব রোহিঙ্গা ধনী ও মধ্যপ্রাচ্যে যাদের আত্মীয় স্বজন রয়েছে, তারা উৎসবম মূখর পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছেন। শহর বন্দরে তেমন যেতে না পারলেও স্থানীয়দের মতো হাট বাজারে গিয়ে ভীড় করে কেনাকাটা শেষে ঈদ উদযাপন করেছে। তাদরে মতে মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশে ঈদ উদযাপন অনেক শ্রেয়। মিয়ানমারে ঈদ উদযাপন করলেও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা দূরূহ ব্যাপার ছিল। পাশাপাশি আনন্দে উৎসবে ভাসছে রোহিঙ্গা শিশু কিশোররা। তারা নাগরদোলা ও বিনোদন কেন্দ্রে অনাবিল আনন্দে সময় পার করছেন রোহিঙ্গার শিশুরা। সেই সাথে শিশু কিশোর যুবক মিলে মিনি সিনেমা হলে ভীড় করতে দেখা যায়। একাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু জানান, ঈদ সামগ্রী ছাড়া ও অনেকেই যতসামান্য কেনাকেটা করে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছি। পাশাপাশি এখনো আমরা মিয়ানমারে সেই নির্যাতন ভুলতে পারেনি। মিয়ানমারে স্বাধিনভাবে ঈদ উদযাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হতো। এখানে তা নেই। তাই বেশ ভালো আছি। চাকমারকূল ক্যাম্প (২১) মাঝি আব্দুল করিম জানান, রেশন ব্যাতীত ঈদ উপলক্ষ্যে কোনো উপকরণ বা সেমাই চিনি জামা কাপড় কোনো প্রতিষ্ঠান দেয়নি। তবে অনেকে ত্রাণ বিক্রি করে অল্পস্বল্প কেনাকেটা করেছে। আবার যারে বিদেশে রয়েছে তাদের অর্থায়নের কেনাকেটা করে অনেকেই ভালো ঈদ কাটিয়েছে। তানিয়া কোলিং কর্ণারের স্বত্বাধিকারী মোঃ ইসহাক জানান, রোহিঙ্গারা ঈদ করতে স্থানীয়দের সাথে মিশে গিয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছেনা কে রেহিঙ্গা, কে বাংলাদেশী চিহ্নিত দূস্কর হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের পরিবেশ পরিস্থিতি মারাত্বক বিপর্যয়ে ফেলছে। কিন্তু আমাদের চলাফেরা সহ সামগ্রীকভাবে বিঘ্ন ঘটনো দুঃখের বিষয়। মেডিকেল কলেজের ছাত্র শাহ নেওয়াজ চৌধুরী সুশান জানান, তারা ঈদ করছে তা বেশ আনন্দের কথা। তারা তাদের গন্ডি পেরিয়ে আমাদের অস্থিতিশী করে তোলা তা কখনো কাম্য হতে পারেনা। বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ তাহের জানান, ঈদের বেশ কিছুদিন আগ থেকে স্থানীয়দের সাথে একাকার হয়ে কেনাকেটা ও ঈদ পালন শেষে নির্দিষ্ট সীমানা পার হয়ে জন স্রোতের সাথে মিশে গেছে। যা স্থানীয়দের মাঝে কষ্টের কারণ হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসান জানান, সরাসরি জামা কাপড় পৌঁছাতে না পারলেও ঈদ উযাপনের পরিবেশ তৈরীর করে দেয়া হয়েছে। পাশাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারী সংস্থার উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App