×

বিশেষ সংখ্যা

পাখির ঠোঁটে প্রজাপতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০১৯, ০৩:৩১ পিএম

পাখির ঠোঁটে প্রজাপতি
মর্গের গেটে রিকশা থেকে নামলে শুদ্ধর মনে হয় দম আটকে আসছে। অথচ রুচিরার লাশের কী ব্যবস্থা হলো তা জানার জন্য প্রচÐ উদ্বেগ নিয়ে এসেও একদম থিতিয়ে যায় এখন। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করবে না বলে রিকশা ভাড়াটা হাতের মুঠোয় নিয়ে রেখেছিল। মুঠিভরা টাকাটা রিকশাঅলার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, টাকাগুলো দুমড়ে গেছে, কিন্তু যা চেয়েছিলে তাই আছে। নাও। গেটের দিকে দু’পা ফেলতেই দেখতে পায় রাকিব আর প্রমিতাকে। কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা ওদের ঘনিষ্ঠ ভঙ্গি দেখে ও আঁচ করে যে দুজনের সম্পর্কে দানা বেঁধেছে, অর্থাৎ ভালোবাসার কথা বলা হয়ে গেছে। তাই দুজনেরই এমন হাসিখুশি উজ্জ্বল চেহারা। লাশের গন্ধভরা এই মৃত্যুপুরীতে ওরা জীবনীশক্তির সন্ধান পেয়েছে। শুদ্ধ দ্রæত ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রাকিব ওর হাত ধরে বলে, আর যেও না। রুচিরাকে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের গাড়িতে তুলে দেয়া হয়েছে। শুদ্ধ চেঁচিয়ে ওঠে, কেন? কারণ ওকে শনাক্ত করার কেউ নেই। প্রমিতার কণ্ঠে ঝাঁঝ। তোমরা শনাক্ত করলে না কেন? আমরা তো ওকে অস্বীকার করার জন্য এই শহরে দিন কাটাচ্ছি না। আমরা তো বেঁচেই আছি। তোমাদের কি হয়েছিল? দুজনে চুপ করে থাকে। পরস্পরের দিকে তাকায়। দুজনেরই বুকের ভেতর একই বোধ, তাই তো! আমরা কি করলাম। আমরা কেন সাহসী হলাম না! শুদ্ধ আবার তীক্ষè কণ্ঠে চেঁচিয়ে ওঠে, চুপ করে আছ যে? আমরা তোমার মতো বাহবা নিতে চাইনি। প্রমিতা ব্যঙ্গ করে। বাহবা? শুদ্ধ ভুরু কুঁচকায়। ওর রাগ বাড়ে। এই সামান্য কাজে বাহবা? শহরটাই এখন এমন। কেউ কারো দায়িত্ব নেয় না। শুদ্ধ আমরা সবাই যে কোনো সময়ে এই দেশে রেওয়ারিশ লাশ হবো। সময় এমন যে আমাদের কারো কারো লাশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা কেউ কেউ গুলি খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবো মাঠেঘাটে-পথে-প্রান্তরে। বাহ্, বেশ তো বক্তৃতা দিতে শিখেছো। শুদ্ধের কণ্ঠের ধার দুজনের বুকে বেঁধে। কিন্তু ওরা আর বিতর্ক বাড়াতে চায় না। শুদ্ধরও দম ফুরিয়েছে। কার সঙ্গে লড়াই? রাকিব আর প্রমিতা তো ওর প্রতিপক্ষ নয়। ওকে উদ্দেশ্য করে যে কথাগুলো বলছে সে পর্যন্ত ওর কণ্ঠস্বর কখনো পৌঁছাবে না। রাকিব হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, হাত মিলাও বন্ধু। তারপর রাকিব আগ বাড়িয়ে বলে, আরো খবর আছে এবং তা মৃত্যুর খরব নয়। সে জন্য তোমাদের চেহারা এমন অন্যরকম ঝকঝকে হাসিখুশিতে উজ্জ্বল। শুদ্ধ ওর হাত ছাড়ে না, বাম হাতটা প্রমিতার দিকে বাড়িয়ে বলে, তোমার হাতটাও ধরতে দাও। আমিও তোমাদের অনুভব নিজের মধ্যে গ্রহণ করি। প্রমিতা হাত বাড়িয়ে দিলে শুদ্ধ আঁকড়ে ধরে। ওর মনে হয় ওরা দুজনে ঘর পেয়েছে। ওরা বেওয়ারিশ হবে না। এই শহরে সবাই কেন বেওয়ারিশ হবে, কেউ না কেউ তো বেওয়ারিশের দায় মুছে দেয়ার জন্য এগিয়ে আসবেই। আচমকা হেসে ওঠে দুজনে। রাকিব বলে, আমাদের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা নাটকের দৃশ্যের মতো। শুদ্ধ হাসতে হাসতে বলে, তাহলে তোমরা নাটকের পর্দাটা উন্মোচন কর। আমি ঘটনাটা জানি। আমরা দুজনে দুজনকে ভালোবাসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই মর্গে দাঁড়িয়ে?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App