×

বিশেষ সংখ্যা

ঈদের আনন্দে সবাই নিরাপদ থাকুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০১৯, ০৩:৫৬ পিএম

ঈদের আনন্দে সবাই নিরাপদ থাকুন
ঈদ অর্থ আনন্দ। কিন্তু জীবনধারণের বাস্তবতায় আমরা কি সব সময় সবাই সে আনন্দ উপভোগ করতে পারি? না পারি না। দেশে যখন বিরাজ করে নানা প্রকট সংকট তখন জীবনযাত্রার চলমান গতি মুখ থুবড়ে পড়ে। এইতো ধরুন না, শহরের যানজট কিংবা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমরা কি আজো এগুলোকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি? শুধু যানজট আর দ্রব্যমূল্যের কথাই বলি কেন, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ এমনকি ময়লা আবর্জনার স্তূপ ও তা থেকে ছড়িয়ে পড়া বিষাক্ত দুর্গন্ধ, আমাদের জীবনকে কি প্রত্যহ সংকটাপন্ন করে তুলছে না?... সব ব্যবসায়ীর মুনাফার লোভ, ছোট কি বড় সবার মধ্যেই এই সময় প্রবল হয়ে ওঠে। কিন্তু কেন? আমরা যদি মানুষ হই এবং সমাজে বাস করি তবে আমাদের মধ্যে ভালো মন্দের বোধশক্তি কেন থাকবে না। কিংবা দেশের প্রচলিত নিয়ম অথবা সরকারের নির্দেশ সর্বোপরি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা কেন আদৌ বিবেচনায় আনতে পারি না। এসব সময়ে অর্থাৎ ঈদে-বকরি ঈদে এই বিভিন্ন পেশায় সংযুক্ত মানুষগুলো কেন এই অতিলোভের প্রবণতা থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ব্যবসায়ী মাত্রেই মনে করে, এইতো সুযোগ, এখন যে কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিলে ক্রেতা তো কিনতে বাধ্য থাকবেই। এইযে ক্রুর মানসিকতা কি যে হিংস্র এবং মানুষকে বিপদে ফেলে নিম্ন থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সবাই সেটা উপলব্ধি করতে পারেন। রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব থাকার কথা, তা কেবল মুখের বুলিতেই সীমাবদ্ধ থাকে, কঠোর বাস্তবায়ন হতে দেখি না। ফলে সাধারণ অর্থাৎ অধিকাংশ জনগণকেই বিপাকে আর দুশ্চিন্তায় কাল কাটাতে হয়। শেষ পর্যন্ত এমনও হয় এই আনন্দ উৎসবে মানুষ তাদের নিজেদের বা সন্তান-সন্ততিদের যে আনন্দ-ভাবনা ‘নির্মাণ’ হতে দেখেছিলেন, তাকে কোনোভাবেই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত করতে পারেন না। তাহলে ঈদের ‘মাজেজা’ রইলো কোথায়? তাইতো ঈদ কেবল বিত্তশালীদের বৈভব প্রকাশের ‘প্রদর্শনী’তে পরিণত হয়। ধর্মের বিধান তো এমন বলে না। অভিজাত শ্রেণি এবং রাষ্ট্র বা সরকার যদি খানিকটা মানবিক হতে পারতো, তাহলে আমাদের হয়তো ভেদাভেদের এই চালচিত্র প্রত্যক্ষ করতে হতো না। কিন্তু দুঃখ কি জানেন, আমাদের দেশটাতে সামাজিক ন্যায়বিচার কিংবা সমতার কথা ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ এমনই এক পরিণতিতে গিয়ে পৌঁছোয়। আর সে কারণেই আমরা দেখি এমন আনন্দ উদ্যোগের দিনগুলোতে মাঠে ময়দানে আয়োজিত জামাতের পাশে কি বিশাল সারি দরিদ্র জনগণের। ওরা হাত পেতে থাকেন ‘জামাতে’ আশা ওইসব ‘ধর্মপ্রাণ’ মানুষগুলোর কাছে, যদি ওদের ছিন্নবস্ত্র পরিহিত এই মানুষদের প্রতি করুণা হয়! হ্যাঁ, করুণার একটি বিধান ইসলাম ধর্মেতে আছে। একমাস রোজার পর যে ঈদ সব মানুষের জন্য আনন্দ বয়ে আনে, তার ‘ফিতরা’ দেয়ার একটা বিধান রয়েছে। নির্দিষ্ট পরিমাণে এই ফিতরা দেবেন, যাদের সাধ্য আছে তারাই। সুতরাং জামাতে আসা এই মানুষগুলোর করুণা খানিকটা এই বিধান থেকেই উৎসারিত হয় এবং পকেট থেকে কড়কড়ে টাকা ‘মিস্কিন’দের হাতে দেন। এদিনে, যাদের গাড়ি আছে তারা কেউ কেউ ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে নিজেই চালিয়ে মাঠে আসেন। কিন্তু অনেকেই আছেন গাড়ির চালককে এমন উৎসবের দিনেও তার সন্তান-সন্ততি বা পরিবার পরিজনের সাথে আনন্দে কাটাতে দিতে চান না। এখানেও স্বার্থপরতার ইঙ্গিত মেলে। যে গাড়ি চালকরা বাধ্য হন পেটের তাগিদে নেয়া চাকরি রক্ষা করতে, তিনি উচ্চমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে অভিজাত শ্রেণির মানুষদের এই দিন উপলক্ষে আত্মীয় কিংবা বন্ধুর বাড়ি নিয়ে গিয়ে উৎসবকে আরো আনন্দময় করে তোলেন। গাড়ি চালক তাদের নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে অপেক্ষা করতে থাকেন, গৃহ অভ্যন্তরে আনন্দ উল্লাসের জৌলুশে সে কথা হয়তো ভুলে যান গাড়ির মালিক। তবে যখন ভ‚রিভোজের টেবিল সাজানো হয়, তখন হয়তো কেউ কেউ গাড়ির মালিক কিংবা যে বাড়িতে গেছেন তারাও জিজ্ঞেস করেন ড্রাইভারের কথা। হায়রে ভাগ্য! এমন সব উৎসবের দিনে পরিবহন সমস্যা থাকে বৈকি। আর এই সংকটের সুযোগ নিয়ে নি¤œবিত্তের কিছু মানুষ যারা রিকশা চালান বা অন্যকিছু, তাদের সংখ্যা খুবই কম থাকার কারণে এই গরিব চালকরাও ভাড়া ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দেন। যারা চাপেন এইসব পরিবহনে তারা প্রচণ্ড বিরক্ত হন ভাড়া বৃদ্ধিতে। কিন্তু চালকের যুক্তি থাকে, ‘এতো ঈদ স্যার একটু বেশি পয়সা দেবেন না?’ আর এই স্যারেরা অনেকেই হয়তো তখন মহৎপ্রাণ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য কিছুটা দরকষাকষি করে নিয়মিত ভাড়ার চাইতে খানিকটা বেশিই দেন। তাতে উভয়েরই তৃপ্তি। ঈদে যেকোনো মানুষের নিজ পরিবার পরিজনের সাথে নামাজ আদায় এবং আনন্দ উৎসবের আয়োজনে একত্রিত হওয়ার প্রত্যাশা প্রবল থাকে। তাই চাকরির সুবাদে যারা বিভিন্ন শহরে থাকেন, তারা এই দিনগুলোতে পরিবার পরিজনের সাথে আনন্দে কাটাবার জন্য সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে নিজ গ্রামে চলে যেতে চান। আর সে জন্যই দেখি দেশের রেল, বাস আর লঞ্চ-স্টিমারে কী উপচে পড়া ভিড়! যত ভিড়ই হোক না কেন তাকে যে মা-বাবার কাছে পৌঁছতেই হবে আর ছেলেমেয়েদের বায়না ‘দাদা-দাদির সাথে ঈদ করবো’ এ দুয়ের কারণে যে পথে যতই বাধা আসুক না কেন, মনের বাসনা পূরণ করার জন্য অতিরিক্ত পয়সা দিয়ে হলেও টিকেট কেনা, জানমালের ঝুঁকি হলেও যাত্রা নিশ্চিত করা এটা যেন তাদের পবিত্র কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। প্রিয় পাঠক আমরা তো দেখি প্রতি বছরই নানা সতর্কতা সত্তে¡ও ট্রেনের ছাদে অগণিত মানুষের ভিড়। ওরা টিকেট করেছেন কিনা সেটি আমার প্রশ্ন নয়। আমার প্রশ্ন এই যে বিপদকে মাথায় নিয়ে মৃত্যু ঝুঁকিতে শেকড়ের টানে ছুটে যাওয়া, এর কি বিকল্প কোনো পরিবহন ব্যবস্থা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেয়া সম্ভব নয়? রেল ছেড়ে দিলাম, বাসের কথা যদি ভাবি, তাহলে দেখবো বাস চালকেরা, মালিকের হুকুমে হোক বা না হোক, তারা ভাড়া বৃদ্ধির যে ফাঁদ পাতে নানা কৌশলে, তা কেন আজো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। আবার নদীপথে লঞ্চ-স্টিমারে চলতে গিয়েও এই দিনগুলোতে যাত্রীরা যেমন বারণ মানেন না তেমনি লঞ্চ মালিকরাও ফায়দা লুটতে ছাড়েন না। আর কি দুর্ভাগ্য বছর বছর এ ধরনের যাত্রাপথে লঞ্চডুবিতে অগণিত মানুষের মৃত্যুর খবর দেখে আমরা চমকে উঠি কিন্তু মালিকদের শিহরণ জাগে না। অবশ্য গত দু-এক বছর এমন উৎসবের আগে কোনো লঞ্চডুবির খবর আমাদের শুনতে হয়নি। ধন্যবাদ জানাই নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে যে তারা এই মৃত্যু ঝুঁকি এড়িয়ে লঞ্চগুলোকে চলতে শিখিয়েছেন।... ট্রেনের টিকেট কেনাবেচার ব্যাপারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট করে সময় ক্ষণ বেঁধে দিলেও যাত্রা শুরুর বড় স্টেশনগুলোতে যে প্রচণ্ড ভিড়ের মহড়া দেখি, তাতেই আমরা ঘরে বসে ভাবি, এত কষ্ট করে যাওয়ার আদৌ কি প্রয়োজন আছে? কিন্তু তারপরও বিনিদ্র রজনী কমলাপুর স্টেশনে কাটিয়ে চারটে টিকেট হাতে পেলে কী যে আনন্দ হয় প্রাপকের তা তার উচ্ছলতাই বলে দেয়। কিন্তু ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মধ্যেও সুদক্ষ বাজিকরদের তৎপরতায় অনেক সময় টিকেট উধাও হয়ে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App