×

সাময়িকী

সুুস্থ সংস্কৃতি : বাঁশি ও শিল্পকলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০১৯, ০৪:২৬ পিএম

সুুস্থ সংস্কৃতি : বাঁশি ও শিল্পকলা
বাঁশি মর্মভেদী আদিম সঙ্গীত যন্ত্র। এই উপমহাদেশে বাঁশির প্রচলন সেই আদিকাল থেকে অব্যাহত আছে। বাঁশির সুর নিরাকার শক্তি। সত্যপথে যে জ্ঞানের ভিতর চৈতন্য আছে। বোধের মাধ্যমে এ নিরাকার শক্তিকে বুঝতে হয়। প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ধর্মগান পরিবেশনের সঙ্গে বাঁশি ব্যবহার করতো। অমরাবতীর ভাস্কর্য এবং অজন্তা ও ইলোর গুহার দেয়াল চিত্রেও বাঁশির নিদর্শন পাওয়া যায়। দ্বাপর যুগের ঠাকুর শ্রীকৃষ্ণ বাঁশি বাজাতেন। যিনি মুরুলীধর কৃষ্ণ নামেও পরিচিত। তিনি জ্ঞানসুর বাজিয়ে লীলা করতেন। তাই বাঁশির সৃষ্টিকর্তা হিসেবে তাকেই মানা হয়। আর সুর হচ্ছে সুধা। সৃষ্টিকর্তা যার মধ্যে থাকে। বিশ্বখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ভাই ফকীর আফতাব উদ্দিন বাঁশি বাজাতেন। এই উপমহাদেশের কিংবদন্তি বংশীবাদক বরিশালের পান্নালাল ঘোষ। যিনি বাঁশিতে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। তিনি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর মন্ত্রশিষ্য ছিলেন। বাংলাদেশে আমিনুর রহমান যিনি ভারতীয় কিংবদন্তি বংশীবাদক পান্নালাল ঘোষের মন্ত্রশিষ্য। তাঁর সুযোগ্য পুত্র ব্যারিস্টার তৌফিক নেওয়াজ বাবার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে ঘরানার ঐতিহ্যকে অক্ষু্ণ্ণ রেখেছেন। খ্যাতিমান বংশীবাদক বারী ছিদ্দিকীও আমিনুর রহমানের কাছে শিখতেন। তিনি মারা যাবার পর বারী ছিদ্দিকী এবং আমি তৌফিক নেওয়াজের কাছে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় শিক্ষা ও দীক্ষা নিতে থাকি। বারী ছিদ্দিকী যখন বংশীবাদক এবং কণ্ঠশিল্পী হিসেবে খ্যাতির শীর্ষে-তখন কিছুদিন গুরু হিসেবে তাঁর কাছেও আমি বাঁশি শিখেছি। আমার বাজনার ঐতিহ্য পরম্পরায় দূর অতীতের ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ঘরানার বাদনের সঙ্গে এক শৃঙ্খলে আবদ্ধ। গুরু তৌফিক নেওয়াজের সাহায্যপুষ্ট হয়ে আমি সে বাজনার বৈশিষ্ট্যে ওই উচ্চাঙ্গ-ছন্দের মিশ্রণ ঘটানোর চেষ্টায় নিয়োজিত আছি। আমি জানি যে, উপমহাদেশে সুরের সুমহান ঐতিহ্যের পুনর্জীবনের জন্য একজন সত্যিকারের গুরুর সাহচর্য ও নির্দেশনা প্রয়োজন, যার অস্তিত্ব আমি খুঁজে পেয়েছি ব্যারিস্টার তৌফিক নেওয়াজের ব্যক্তিত্বে। উপমহাদেশের বাঁশির ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং উচ্চতর করার মানসে আমার সাধনাকে অব্যাহত রাখার সংকল্প নিয়েছি। শিল্পের সেবক হিসেবে, সুন্দরের পূজারি হয়ে বাঁশি শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে যাবো- এই হলো আমার অঙ্গীকার। বর্তমানে পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া বাঁশির মাধ্যমে বিশ্বখ্যাত হয়েছেন। তিনিও আলাউদ্দিন খাঁর মেয়ে অন্নপূর্ণার মন্ত্রশিষ্য। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও বাঁশি বাজাতেন। বাংলাদেশের বাঁশি শিল্প, সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে মিশে আছে। বাঁশিকে কেন্দ্র করে কবি, সাহিত্যিক, অসংখ্য গল্প, কবিতা, গান লিখেছেন। বাঁশির সুরে প্রেম, বিরহ, দুঃখ, আনন্দের যে অনুভ‚তি তা হৃদয়কে দোলা দেয়। বাঁশি আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। বাঁশির সুর গানের বাণীকেও ফুটিয়ে তোলে। লোক সঙ্গীতের ক্ষেত্রে বাঁশি বিশেষ ভ‚মিকা রাখে। জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, ঘেটু, কবি গানে বাঁশির ব্যবহার চমৎকারভাবে ফুটে উঠে। মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ-মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে পারে বাঁশি। বাঁশি সর্বস্তরের মানুষকে আকুল করে। মানুষের মনের অস্থিরতা প্রশমিত করার যন্ত্র হলো বাঁশি। বাঁশির সুরের মূর্ছনায় আত্মার অন্তস্থলে যে অপূর্ব দ্যোতনা সৃষ্টি করে তা মানুষের দুঃখ বা একাকিত্বের অবসান ঘটিয়ে অখণ্ড ও চিরন্তন স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সংযোগ সেতু তৈরি করার পাশাপাশি চিন্তা ও দর্শনের দরজা খুলে দেয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অজস্র গদ্য-পদ্যে, নাটকে বাঁশির বর্ণনা করেছেন। শান্তি নিকেতনে বাঁশিতে তালিম দেবার জন্য তিনি সুশিক্ষিত বংশীবাদক রেখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন ‘বাঁশির মধ্যে রয়েছে এক অন্তর্নিহিত ধন। প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোমান্টিকতা, সৌন্দর্যচেতনায় বাঁশির সুর- নিয়ে যান অতীন্দ্রিয় জগতে। অপার রহস্যময় মাদকতাময় এক যন্ত্রের নাম বাঁশি। বাঁশির সুর একজন মানুষকে অন্তরমুখী ও বিনয়ী মানুষ হবার অনুপ্রেরণা যোগায়। নৈতিক অবক্ষয়রোধে মানবিক মূল্যবোধ জাগরণ ও সামাজিক স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং সংস্কৃতিবান আলোকিত সমৃদ্ধ প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিল্পী ও শিল্পসৃষ্টির ক্ষেত্রে বাঁশি বিশেষ ভ‚মিকা রাখতে পারে। বাঁশি হচ্ছে মানসিক উৎকর্ষতার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। বাঁশির মধ্যে বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্রবোধ ও জাতি সত্তার পরিচয় ফুটে উঠে। সুস্থ মানবিকবোধ ও চেতনা বিকাশের পাশাপাশি পরিশীলিত সমাজ বিনির্মাণে অবদান রাখে। সংস্কৃতি চর্চায় উজ্জ্বলতম স্বতন্ত্র এক শিল্প মাধ্যম বাঁশি। ‘সামজিক অবক্ষয় রোধে-বাঁশি হোক জাগরণের হাতিয়ার।’ মানুষের কল্যাণের জন্য বাঙালির নিজস্ব যন্ত্রের এবং সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায়, মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ৬৪ জেলায় ও উপজেলায় বাংলাদেশের বাঁশির ঐতিহ্যকে রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে হবে। বাঁশির সুরের মধ্যে যে সত্য ও সৌন্দর্য রয়েছে নির্মোহচিত্তে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। একখণ্ড বাঁশ থেকে বাঁশি তৈরি হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, এর আবেদন অনেক বড়। বাঁশির মধ্যে শিল্পের শেকড় রয়েছে। সবাই বাঁশির সুরকে ভালোবাসে। সম্প্রীতি রক্ষার ক্ষেত্রেও বাঁশি বিশেষ ভ‚মিকা রাখে। দুরদর্শিতার সঙ্গে বাঁশির ব্যবহারিক বিষয়টি কুশলতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে পারলে- মানব-মানবীর জীবনের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাঁশি অদ্ভুত মাধ্যম হতে পারে। তাছাড়া একজন মানুষ সুরের সাগরে ডুবে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষার বিকাশ ঘটিয়ে কুচিন্তা, টেনশন থেকে মুক্ত হয়ে সুন্দরভাবে জীবনের পথ খুঁজে পেতে পারে। বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই সুর ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। এ মাটি ও মানুষের আলাদা একটা শক্তি রয়েছে। শুধু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ বাঁশির বিকাশ ঘটেনি। রাষ্ট্রীয় সুদৃষ্টি পাওয়ার আশায় শিল্পকলায় চেষ্টা শুরু করি। বাঁশির মধ্যে যে সত্য, সুন্দর বিষয়টি রয়েছে দশ পৃষ্ঠার একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ এবং বাঁশির প্রথম পাঠ বইটিসহ ২০১৫ সালে শিল্পকলার মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর কাছে তা তুলে ধরি। বাঁশির কর্মশালা শুরু করার জন্য একটি আবেদনও করি। একদিন শিল্পকলার পরিচালক সোরহাব হোসেন আমাকে ফোন করলেন। আমি শিল্পকলায় এসে তার সঙ্গে দেখা করি। তিনি বাঁশির ওপর বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলেন। প্রশিক্ষণ শুরু করলে কারা উপকৃত হবে? কেন এ প্রশিক্ষণ শুরু করা দরকার ইত্যাদি। যদিও আমার লেখাতে সবকিছু উল্লেখ ছিল। তবুও বললাম- ‘সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত হবে। ঐতিহ্য ও বাঙালির নিজস্ব যন্ত্রের উন্নয়ন হবে। নতুন প্রজন্ম পথ খুঁজে পাবে। বাঁশি শেখার একটা জায়গা পাবে। এছাড়া বাঁশি নিয়ে আমার ভাবনার কথা তুলে ধরলাম। সবকিছু শোনার পর তিনি একটি বাজেট দিতে বললেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই বাজেট দিলাম।’ বাঙালির ৬শ রকমের নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস থাকা সত্তে¡ও পাশ্চাত্য যন্ত্রের দাপটে আমাদের ঐতিহ্যবাহী দেশীয় বাদ্যযন্ত্রগুলো ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। যা আমার কাছে ছিল যন্ত্রণাদায়ক। সুন্দরের পূজারী, শিল্পের সেবক হয়ে বাঁশির মাধ্যমে, মানুষের মানসিক উন্নয়ন বিকাশে, দেশের কল্যাণে-তিন বছরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে এ মহৎ কর্মের কাজটি শুরু হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত-মানবিক মূল্যবোধ, সামজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায়, সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশে, নৈতিক অবক্ষয় রোধে, শিল্প ও শিল্পী সৃষ্টির লক্ষ্যে-বাঙালির মর্মভেদী ঐতিহ্যবাহী বাঁশির প্রশিক্ষণ ১ম ব্যাচের যেদিন উদ্বোধন করে সেদিন একুশে পদকপ্রাপ্ত বংশীবাদক আমার বর্তমান গুরুজী-ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম, মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। প্রথমেই উদ্বোধনী বক্তব্যে আমি সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার পর ডিজি মহোদয় বক্তব্য রাখলেন। এরপর ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম ছাত্রছাত্রীদের এই উপমহাদেশের কিংবদন্তি বংশীবাদক পান্নালাল ঘোষের কথা সবার মাঝে তুলে ধরেন। পান্নালাল ঘোষ যেভাবে বাঁশি ধরতেন আজিজুল ইসলাম সেভাবে বাঁশি ধরে দেখালেন এবং বাজালেন। ছাত্রছাত্রীরা তাকে অনুসরণ করে। বাঁশি শুনে সবাই করতালির মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানায়। এভাবেই ১ম ব্যাচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হয়। বাংলাদেশের বাঁশি আমাদের শিল্প, সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে মিশে আছে। বিশ্বের সব জনগোষ্ঠীর প্রিয় যন্ত্র হলো বাঁশি। সেই গুরুত্বকে বিবেচনা করে বাংলাদেশ শিল্পকলার প্রশিক্ষণ বিভাগ-ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁশির ঐতিহ্যে উদ্ভাসিত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এ কর্মশালা শুরু করে এক ইতিহাস তৈরি করে। আমি মনে করি আগামী প্রজন্মের জন্য এ কর্মশালা সুফল বয়ে আনবে। বাংলাদেশের বাঁশি আমাদের বিবেক, মূল্যবোধ এবং আত্মপরিচয় নির্মাণে বিশেষ ভ‚মিকা রাখতে পারে। তাই সচেতন তরুণ প্রজন্মের হাতে বাঁশি তুলে দেয়ার লক্ষ্যে ৬ মাস পর ২য় আবর্তের কর্মশালার আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি যে ভ‚মিকা রাখল তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আগ্রহীরা আনন্দের সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন করে শিল্পকলায় বাঁশির ক্লাসে ভর্তি হয়। প্রথম ব্যাচে একশত এবং দ্বিতীয় ব্যাচে আরো একশত মোট দুইশত ছাত্রছাত্রী দারুণ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ক্লাস শুরু করে। আনন্দে আমার মনটা ভরে উঠলো। আমাদের দেশ সুর ও সঙ্গীতে ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। শেকড়ের সন্ধানে, দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে একসময় মুক্তনাটক আন্দোলন করেছি-নাট্যগুরু নাট্যজন মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে। সেই চেতনাকে ধারণ করে বাঙালির নিজস্ব যন্ত্রে, গড়ে উঠুক সুস্থ সংস্কৃতি। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শৈল্পিক শুদ্ধতাকে বজায় রেখে কর্মশালার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে সুস্থ সংস্কৃতির মাধ্যমে জাগরিত করা এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতির মৌলিক বিষয়গুলোকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরাই আমার মূল লক্ষ্য। আমি বিশ্বাস করি-শিল্পকলা একাডেমি শেকড় সন্ধানী যে কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে তা জাতীয়ভাবে বিশাল ভ‚মিকা রাখবে। এ ধরনের কার্যক্রম মানুষের মধ্যে সহনশীলতা এবং ইতিবাচক চিন্তা-চেতনা গড়ে উঠবে। আমি যখন কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করি পাশাপাশি শিল্পকলায় বাঙালির নিজস্ব যন্ত্রের এবং বাঁশির ৬৪ জেলার তথ্য জানার চেষ্টা করি। এক বছর ঘুরেও যখন কোন তথ্য পেলাম না, তখন তথ্য অধিকার ফরম পূরণ করে মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীকে দিলাম। তিনি এর গুরুত্ব বুঝলেন এবং তার একান্ত সচিবকে নির্দেশ দিলেন তথ্য দিতে। এর আগে তাদের কাছে ৬৪ জেলার কোন তথ্য ছিল না। জাতীয় যন্ত্র সঙ্গীতের উৎসব উপলক্ষে ৬৪ জেলার যন্ত্রশিল্পীরা যে তথ্য পাঠিয়েছে সে ফাইল থেকে মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সহযোগিতায় ৫০টি জেলার বাঁশির তথ্য সংগ্রহ করলাম। সৃজনশীল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে ১ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘নন্দনমঞ্চে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে-জাতীয় যন্ত্র সঙ্গীতের উৎসব শুরু হয়। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার যন্ত্র শিল্পীরা এ উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এতে শিল্পকলার বাঁশির প্রশিক্ষণার্থীরাও পাখোয়াজ ও তবলার সঙ্গে আঠারো মিনিট বাজিয়ে দর্শকদের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রশিক্ষক হিসেবে আমি এবং মো. মনিরুজ্জামান দুজনে বাজাই। শিল্পকলার মাধ্যমে সারাদেশে বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নে যে কাজ হচ্ছে তা আগে কখনো হয়নি। গর্বের সঙ্গে, দৃঢ়তার সঙ্গে একটি কথা বলতে চাই ‘স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে শিল্পকলায় কোনো মহাপরিচালক, লিয়াকত আলী লাকীর মতো কাজ করতে পারেননি। তিনি ব্যতিক্রম। আর এ জন্যই আমরা তার অনুসারী।’ শিল্পকলায় আমরা যে ক্লাস নেই তা অনেকেই স্মার্ট মোবাইলে ধারণ করে শিল্পকলার পেজ এ দেয়। এতে সারাদেশে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে একটা সাড়া জাগে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম বাঁশিটাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতিকে বাঁশি শুনিয়ে মুগ্ধ করে। এ ছাড়া জাতীয় স্টেডিয়ামে শিল্পকলার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রামেও তারা অংশগ্রহণ করে। দেখতে দেখতে এক বছর কেটে যায়। মহাপরিচালক মহোদয় বাঁশির ক্লাস পরিদর্শন করতে এলেন। তিনি ছাত্রছাত্রীদের কথা এবং বাঁশি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। আমি আর মনিরুজ্জামান ভাই বাঁশির কোর্স বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করলাম। লাকী ভাই তার বক্তব্যে আমাদের অবাক করে দিয়ে ৪ বছরের বাঁশির ডিপ্লোমা কোর্স খোলার ঘোষণা দিলেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রোগ্রামে ছাত্রছাত্রীদের বাঁশি শুনতে চাইলেন। আমরা করতালির মাধ্যমে সবাই তাকে অভিনন্দন জানালাম। একদিন একুশে পদকপ্রাপ্ত বংশীবাদক ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের একক বাঁশি সন্ধ্যায় লাকী ভাইয়ের কথানুযায়ী অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমিও প্রায় পনেরো মিনিট পিলু-ঠুমরী বাজালাম। এবার সমাপনী অনুষ্ঠানের পালা। সার্টিফিকেট নেবার জন্য সরোদ, সেতার, বাঁশি, দোতারা, নৃত্য সব গ্রুপের ছাত্রছাত্রীরা সঙ্গীত ও নৃত্যকলার অডিটোরিয়ামে সবাই উপস্থিত হয়। সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আনিসুর রহমানের তত্ত¡াবধানে সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান চলতে থাকে। মঞ্চে মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পাশে উস্তাদ সাহাদৎ হোসেন খান, ইউসুফ খান, মুনমুন আহমেদ, তামান্না রহমান অন্যসহ আমাকেও মঞ্চে ডাকা হয়। সব গ্রুপের ছাত্র- ছাত্রীরা পারফরমেন্স করার পর তাদের শিল্পকলার পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। সবশেষে মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী সারাদেশে শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে অনুষ্ঠান শেষ করেন। পরিশেষে যে কথাটি বলতে চাই বাঁশির এ কর্মশালা শিল্পকলা অব্যাহত রাখুক। বাঁশি আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রেও বিশেষ ভ‚মিকা রাখে। একজন নাট্যকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে যে শিক্ষা পেয়েছি তা হলো মানবিক ও সুহানুভূতিশীল হতে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে মনে করি, ব্যক্তিচিন্তা থেকে সমষ্টিগতভাবে সমগ্র জাতির মধ্যে এ শিল্পের চর্চা হউক। মানসিক দরিদ্রতা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে শৈল্পিক উপায়ে গবেষণালব্ধ ফলাফল ব্যাপক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ুক। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে, আগামী প্রজন্মের জন্য আশা করি এ বাঁশি সুফল বয়ে আনবে। বিশ্বের কাছে এদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে বাঁশি অতুলনীয়। বাঁশির সুর বিশ্বকে একই স¤প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App