ম্যাসেঞ্জার
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০১৯, ০৪:৪৮ পিএম
এবার বোধহয় অভীক হোসেনের কপাল পুড়ল। ওর প্রিয় মানুষদের অথবা বন্ধুদের কাছে থেকেও আশানুরূপ সাপোর্ট পেল না অভীক। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া অব্যাহত থাকল। তবে পজিটিভ কথা বলার লোকের সংখ্যা খুব কম। অভীক এখন কী করবে বুঝতে পারছে না। ঘটনার আকস্মিকতা ওকে স্থিতিশীল করতে পারছে না। আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে সাথে-সাথেই যেমন ভয়ানক গর্জন করে ওঠে, অভীকের বুকে ঠিক তেমনই বিদ্যুৎ চমকালো এবং গর্জন করে উঠল নীরব চিৎকারে। এই চিৎকার শোনা যায় না, অনুভব করা যায়।
অভীক হোসেন একজন প্রতিশ্রুতিশীল সঙ্গীতশিল্পী। ও বেশ অল্প বয়সেই নিজেকে নিজের মতো করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সঙ্গীতপ্রিয় মানুষের কাছে এখন ও অনেকটা পরিচিতি পেয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্টেজ শো ছাড়াও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে লাইভ প্রোগ্রাম করে। হাজার শিল্পীর ভিড়ে কে কাকে মনে রাখে অবস্থা চললেও উদীয়মান শিল্পীদের মাঝে অভীক হোসেন একটি উজ্জ্বল নাম। টিভিতে লাইভ গান করার সময় অনেক অনুরোধ আসে। দর্শক-শ্রোতার মন রক্ষা করতে সবগুলো গানই গাওয়ার চেষ্টা করে। কখনো কখনো কোনো গানের দু-এক লাইন গেয়ে শুনিয়ে শ্রোতাদের তুষ্ট করে। ইউটিউবে ওর বেশ কিছু গান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে মুক্তি পেয়েছে। শ্রোতারা কিছু কিছু গানের জন্য লাইক দেয়ার পাশাপাশি চমৎকার কমেন্টও করছেন। সম্প্রতি ‘সুহাসিনী দেব’ শিরোনামে একটি গান বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। গানের কথাগুলো বেশ আধুনিক
দেখেছি বাস কাউন্টারে
তাকাচ্ছিলে বারেবারে
হঠাৎ আমার ফোনটা নিয়ে করলে তুমি সেভ
এগারো ডিজিটের সাথে সুহাসিনী দেব।
এরকম আরও একটি গানের ভিউয়ার্স সংখ্যা পাঁচ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। ‘এলোমেলো’ শিরোনামের গানটি হলো
এই ঘর এলোমেলো বড় বেশি অগোছালো
চেনা নেই জানা নেই
হুট করে ঘরে ঢোকা দুঃসময়
কী যে কয় কী যে হয়
সময়টা এলোমেলো বয়ে যায়।
তো এই শিল্পীর যেমন ভক্ত আছে, নিন্দুকেরও অভাব নেই। হিংসা আজকাল যে-কেউ যে-কাউকে করতে পারে। এগুলো কখনো গায়ে মাখে না অভীক। কিন্তু এখন যে সমস্যাটি হয়েছে সেটা হিংসা-নিন্দারও অনেক ঊর্ধ্বে। ওর ধারণা ছিল না স্ক্যান্ডাল থেকেও বাস্তব কত কঠিন হতে পারে।
নাছোরবান্দা এক ভক্তকে কয়েক বছর আগে বিয়ে করেছে অভীক। ওদের ঘরে ফুটফুটে একটি ছেলেও আছে যার বয়স তিন বছর। অভীক ওর স্ত্রী সামিহা আর ছেলে সায়হামকে নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছিল। আজ কক্সবাজার তো কাল চট্টগ্রাম স্টেজ শো। দুদিন পরই হয়ত দিনাজপুর। এক সপ্তাহ পর খুলনা। এভাবে ব্যস্ত থাকে অভীক স্টেজ শো নিয়ে। টিভিতে ডাক পড়ে খুব কম। সম্মানীর পরিমাণও থাকে অনেক কম। ছোট একটি খাম পকেটে পুরে বাসায় ঢুকে মন খারাপ হয়। কিন্তু গান গাওয়ায় যে আনন্দ পায় তা এই খামের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।
সায়হামকে নিয়ে কয়েকদিনের জন্য সামিহা ওর বাবার বাড়ি ধানমন্ডি গেল। সেদিন একটি টিভি চ্যানেলে অভীকের লাইভ ছিল। ও বাসায় ফিরল রাত দেড়টায়, টিভি কর্তৃপক্ষের গাড়িতে। মনটা বেশ ফুরফুরে ছিল এবং শুয়ে শুয়ে মোবাইলে বন্ধুদের কমেন্টের জবাব দিচ্ছিল ধন্যবাদ জানিয়ে। কেউ লিখেছে গানগুলো অসাধারণ হয়েছে, কেউ লিখেছে সুন্দর, কেউ অসাম ইত্যাদি। হঠাৎ ইনবক্সে নিশা খন্দকার নামে একটি মেয়ে ‘হাই’ লিখে পাঠালো। অভীক লিখে দিল ‘হ্যালো’। এরপর কথা এগোতে থাকল। কেমন আছো? ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? তুমি খুব সুন্দর। তুমিও সুন্দর। এ-জাতীয় কথা।
অভীক এক ফাঁকে মেয়েটির প্রোফাইলে ঢুকে তার সম্পর্কে জেনে নিল। নিশা দৌলতখান আবু আব্দুল্লাহ ডিগ্রি কলেজে পড়ছে। বাস করে বরিশালের ভোলায়। ইংরেজিতে ‘ডিভোর্সড’ লেখা আছে। তার মানে নিশা এখন পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। তার সম্পর্কে এটুকু জেনে ইনবক্সে ফিরেই অভীক দেখল সে লিখে রেখেছে, তুমি কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন?
: তোমাকে দেখছিলাম। তোমার প্রোফাইল পিকটা দারুণ।
: তোমারটাও।
: আমি অত সুন্দর নই।
: তুমি তো মেকআপ ছাড়া। আমি মেকআপ করা। এই যে দেখ।
নিশা একটি ছবি পাঠালো। সুন্দর মুখমণ্ডল। ছবিটি দেখে অভীক মুগ্ধ হলো এবং লিখল ‘খুব সুন্দর’। ‘খুব সুন্দর’ সেন্ড করতে না করতেই আরেকটি ছবি পাঠালো নিশা। এবারে বুকসহ মুখের ছবি। বুকের কিয়দাংশ গলার কাছে উন্মুক্ত। অনেকটা আবেদনময়ী নায়িকাদের মতো। কী বলবে ভেবে না পেয়ে অভীক লিখে পাঠালো ‘মুগ্ধ’। মুগ্ধতার জন্য ধন্যবাদ না দিয়ে নিশা বলল, তোমার একটা সেলফি দাও।
অভীক বলল, আমি সেলফি তুলতে পারি না।
: মিথ্যা বলছ।
: সত্যিই পারি না।
: এই দ্যাখো কীভাবে সেলফি তুলে পাঠাচ্ছি।
এবারের ছবিটি দেখে অভীকের অজ্ঞান হওয়ার জোগাড়। শুধু বুকের ছবি। শুয়ে থাকা অবস্থায় স্তনযুগল সামান্য নুয়ে আছে এবং স্তনাগ্র দুটি ওড়না দিয়ে ঢাকা। অভীক কী লিখবে কী বলবে বুঝতে পারছে না। ছবিটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। নিশা বলল, অনেক রাত হয়েছে, আমি ঘুমাব। সকালে ক্লাস আছে। কাল আবার কথা হবে।
সাথে-সাথেই নিশা অফলাইনে চলে গেল। নিশা সব কথা বাংলা ভাষায় লিখলেও ইংরেজি অক্ষর দিয়ে বানানো ভাষা। অধিকাংশই বানান ভুল। অভীক শুতে শুতে ভাবল নিশা তো আর ভুল নয়।
পরদিন ঘুম থেকে বেশ দেরিতে উঠল অভীক। গতরাতের কথা মনে পড়ল ওর। আজ কথা হবে নিশার সাথে, কিন্তু কখন হবে সেটা জানা নেই। ও একটি ম্যাসেজ দিয়ে রাখল, কথা হবে রাত ১২টায়।
ঠিক রাত ১২টায় নিশা একটি লাভ চিহ্ন পাঠালো। অভীক লিখল, কাল সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি।
: কেন?
: তোমার ছবি দেখেছি।
নিশা ‘হা হা’ চিহ্ন পাঠিয়ে লিখল, হুম, কিন্তু তুমি তো তোমার ছবি দিলে না।
: বললাম তো পারি না। অন্যের তোলা ছবি দিতে পারি।
: দাও।
অভীক স্টেজে পারফর্ম করা অবস্থার একটি ছবি সেন্ড করল। ওর ছবির পেছনে ব্যানারে লেখা আছে নবীনবরণ অনুষ্ঠান, বাহাদুরপুর কলেজ।
নিশা বলল, ওয়াও। দারুণ লাগছে তোমাকে। এবার আমারটা দেখ।
নিশা আজ সবুজ পোশাকে। গতকাল ছিল খয়েরি। সবুজের প্রতি অভীকের খুব দুর্বলতা। নিশার ছবিটি দেখে আজ আরও মুগ্ধ হলো অভীক। কিছু লেখার আগেই নিশা আরেকটি ছবি দিল। তুলনামূলকভাবে এটি বেশ খোলামেলা।
নিশা লিখল, এবার তোমার একটা ছবি দাও না সোনা।
সোনা বলায় অভীক একটু বিচলিত হলো। দিচ্ছি বলে নিজের ছবি সম্বলিত টি-শার্টের উপর স্বর্ণের মোটা চেইনটি ঝুলিয়ে একটি সেলফি তুলল। সেন্ড করার সাথে সাথে আগের মতোই ‘ওয়াও’ লিখে পাঠালো নিশা। এবার নিশা শুধু খোলা বুকের একটি ছবি দিল। বুকটির মালিক অনুপস্থিত মনে হওয়ায় অভীক লিখল, বুক আর মুখ একসাথে দাও।
নিশা লিখল, আগে তোমার নিচের অংশ দাও।
: আগে তুমি দাও।
: ঠিক আছে দিচ্ছি সোনা। কিন্তু যদি না দাও এই শেষ।
: মানলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই নিশা একটি ছবি পাঠালো। হাত দিয়ে মাথার ওপর ওড়না ধরে রেখেছে, মুখের ও বুকের অনেকাংশ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। এত ন্যাকেট ছবি কীভাবে তুলতে পারে এরা ভেবে পায় না অভীক। নিশা লিখল, কই সোনা, তোমারটা দিচ্ছো না তো?
অভীক ভাবল, সে যখন এত আলগা হয়ে দিতে পারল, নিজে একটা ছবি দিলে ক্ষতি কী? তাছাড়া আগে কখনো নিম্নঙ্গের কোনো ছবি তোলা হয়নি। অভীক ট্রাউজার সরিয়ে পুরুষাঙ্গসহ একটি সেলফি তুলল। ততক্ষণে নিশা তাগাদা দিয়েছে, তবে কি দেবে না? ভেবেছি আজ তোমার সাথে আমার ইয়ে হবে। ছবি দাও।
অভীক ছবিটা পাঠালে আনন্দে ‘হই’ করে উঠল নিশা। তার দুই বন্ধু পড়িমড়ি করে ছুটে এসে মোবাইলটা নিয়ে অভীকের ছবিটা দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। খবির বলল এইটা একখান কামের কাম করছিস দোস্ত।
জামশেদ বলল, পাইছি এইবার দান একখান।
নিশা বলল, দাঁড়া-দাঁড়া, আগে জবাব দিয়ে নিই।
নিশা লিখল, উম্ মা। কিস কিস হাজারটা কিস।
অভীক লিখল, এবার তোমার নিচের অংশটা দাও।
: দেব দেব হাজার বার দেব। তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। আগেই তো বলেছি ম্যাসেঞ্জারে কল করলে শুনতে পাই না। আমার ফোন নাম্বার দিচ্ছি। তুমি কল করতে পারো।
নাম্বার পেয়ে অভীক কল করল। ওপাশ থেকে নিশা বলল, বলো সোনা বলো, শুনতে পাচ্ছি।
: তোমার ওখানে আওয়াজ হচ্ছে কিসের?
: টিভি চলছে তো, তাই।
: পাশে কে যেন কথা বলছে মনে হয়।
: মা বোধহয় জেগে গেছে। আমি কাল কথা বলব।
তখন হাসির শব্দ শোনা গেল। অভীক বুঝতে পারল নিশার পাশে কেউ না কেউ হয়ত ছিল।
পরদিন দুপুরে নিশা খন্দকারের কল এলো। নামটি সেভ করে রেখেছিল অভীক। ‘হ্যালো’ বলতেই নিশা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, কেমন আছো সোনা?
: ভালো। তুমি কেমন আছো?
: গতরাতে তোমার সাথে কথাই বলতে পারলাম না।
: এখন বলো।
: আমাকে কিছু টাকা দাও না সোনা। কলেজে লাগবে।
অভীকের ফোনে তখন সামিহার কল এসেছে। অভীক বলল, আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি।
: টাকা চেয়েছি বলে?
: আ রে না না। আমার একটি জরুরি কল এসেছে। আমি তোমাকে কলব্যাক করছি।
অভীক নিশার কলটি কেটে দিয়ে সামিহার কল রিসিভ করল।
সামিহা বলল, কী ব্যাপার অভীক, ফোন এত বিজি পাচ্ছি। কার সাথে কথা বলছিলে?
: আর বলো না, তোমার মতো এক পাগল ভক্ত। ফোন ছাড়ে না।
: ছেলে না মেয়ে?
: মেয়ে।
: আমি তো জানি বিয়ের পর তোমার মেয়ে ভক্তের সংখ্যা কমে গেছে। নিশ্চয়ই এটি নতুন জুটেছে? আহারে, বেচারা জানে না আমি আছি তোমার একজনই।
: হয়ত জানে।
: জানলে নিশ্চয়ই দীর্ঘ আলাপ করবে না। যাক, বাদ দাও। তুমি খেয়েছ কি না বলো।
: না এখনো খাইনি। ফ্রিজের খাবার গরম করতে আলসেমি লাগছে।
: তাহলে আমি এসে গরম করে দিই? বললাম, কটা দিন এখানে এসে থাকো, তা না ওনার সাধনায় ব্যাঘাত ঘটবে।
না খেয়ে সাধনা হয় নাকি? আগে খেয়ে নাও, আমি রাখছি।
অভীক কী করবে বুঝতে পারছে না। নিশাকে ফোন করা ঠিক হবে কি না ভাবছে। চেনা নেই জানা নেই, হুট করে টাকা চেয়ে বসল। নিশ্চয়ই নিশা ভালো মেয়ে নয়। আবার কল করল নিশা, টাকা চেয়েছি বলে তুমি রাগ করেছো সোনা?
: না না রাগ না, মানে।
: তাহলে দাও না প্লিজ।
: কত?
: আপাতত হাজার দশেক দাও। এই নাম্বারে বিকাশ করলেই হবে।
: দশ হাজার!
: তুমি শিল্পী মানুষ, তোমার তো অনেক টাকা।
: ঠিক আছে আমি দেখছি।
ফোনটি বিছানায় ছুড়ে ফেলল অভীক। ও এবার বুঝতে পারল, কোনো না কোনোভাবে ধরা খেয়ে গেছে। ওরকমভাবে ছবিটা দেয়া ওর উচিত হয়নি।
দশ হাজার টাকা হাতে পেয়ে নিশা এসএমএস দিয়ে থ্যাংকস জানাতে ভোলেনি। আরও টাকা কীভাবে আদায় করা যায় তা নিয়ে তিন বন্ধু পরামর্শ করতে বসেছে। খবির বলল, দশ লাখ চাইব একবারে।
জামশেদ বলল, বিশ লাখ।
নিশা বলল, এত টাকা একবারে না চেয়ে কিস্তিতে নিলে ভালো হয়।
খবির বলল, যদি পুলিশে খবর দেয়?
নিশা বলল, তার মানসম্মান আছে না?
জামশেদ বলল, তার ফেসবুকে ট্যাগ করে এই ছবিটা দিলে ভাইরাল হয়ে যাবে। তখন ঐ শালা বুঝবে মজা।
খ্যা-খ্যা করে হাসতে থাকে জামশেদ। খবির বলল, তুই কেমনে যে পারলি নিষাদ।
নিশার প্রকৃত নাম নিষাদ খন্দকার। তার কণ্ঠস্বর অনেকটা মেয়েদের মতো। ফলে সে নিশা খন্দকার নামে ফেক আইডি খুলে প্রতারণা করছে। খবির আর জামশেদও এই প্রতারণার সাথে যুক্ত। তিন বন্ধু একই রুমে থাকে। রুমটি ভাড়া নেয়া।
খবির ও জামশেদ ফেসবুকে মেয়ে বন্ধুদের কৌশলে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে পরে তার ছবি সংগ্রহ করে। নিষাদ সেই সংগৃহীত ছবি সেন্ড করে নিজেকে মেয়ে পরিচয় দেয়। শিক্ষিত প্রতারকের লালসার শিকার হয় অনেক সহজ সরল তরুণ-তরুণী।
যে ছবিগুলো অভীকের ম্যাসেঞ্জারে নিশা দিয়েছে সেগুলো খবির কৌশলে সংগ্রহ করেছে। শাকিলা নামের একটি মেয়ের ছবি। দীর্ঘদিন কথা বলে খবিরের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর শাকিলা ছবিগুলো তুলে তুলে তৎক্ষণাৎ দিয়েছে।
: প্লিজ শাকিলা, আমার সোনা, তুমি এখন যেভাবে শুয়ে আছ সে অবস্থায় একটি সেলফি পাঠাও না।
: দিচ্ছি বাবা দিচ্ছি।
: এই তো, খুব সুন্দর। এটা তো মুখের ছবি। বুকের একটা দাও না।
: তুমি এত অস্থির কেন? এই তো দিলাম।
: বাহ্! ফাইন। এটা কার বুক?
: কার বুক আবার? আমার।
: মুখ আর বুক একসাথে দাও না সোনা।
: যাহ্ ফাজিল কোথাকার!
: আহা দাও না?
শাকিলা ছবি তুলে পাঠালো। বলল, এই তো ন্যাও। হলো? এবার আমাকে কী দেবে?
: কাল জানাব। আজ ঘুমাই সোনা। অনেক রাত হয়েছে।
রাতেই নিশার ফোন এলো। অভীক ফোনটা রিসিভ করলে নিশা বলল, ভাইয়া তোমার টাকাটা আমার খুব উপকারে লেগেছে।
: উপকার করতে পেরে খুব ভালো লাগল।
: আরেকটু উপকার করতে হয় যে ভাইয়া।
: বলো।
: তুমি লাখ বিশেক টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারো না?
: এত টাকা কোথায় পাব?
: তাহলে দশ লাখ দাও।
: অসম্ভব!
: কিন্তু কীভাবে আদায় করতে হয় তা আমাদের জানা আছে। তোমার ছবি আই মিন উলঙ্গ ছবিগুলো ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হবে।
: প্লিজ এসব করতে যেও না, তাহলে আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।
: ক্যারিয়ারের কথা ভাবলে সুবোধ বালকের মতো টাকাটা দিয়ে দাও। আর পুলিশকে যদি জানাও তাহলে আমরা ধরা পড়লেও তুমি রক্ষা পাবে না। তোমার ছবি আকাশে-বাতাসে উড়বে, ঘুরবে। তরুণী পেলেই ফষ্টিনষ্টি করতে মন চায়, না? আমার সাথে সব কনভারসেশনের স্ক্রিন শট ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব। তুমি আমার বুকের ছবি চেয়েছ, ঐটার ছবি চেয়েছ। এসব কথা তোমার প্রিয় সবাইকে জানিয়ে দেব।
: এসব তুমি কী বলছো?
: টাকাটা দেয়ার ব্যবস্থা করো। সময় মাত্র দুদিন। একসাথে দিতে না পারলে কিস্তিতে দাও। যে মেয়েটির ছবি তোমাকে পাঠিয়েছি, সে এখনো প্রতি মাসে টাকা পাঠাচ্ছে। যে এঙ্গেলে ছবি চাচ্ছি, দিচ্ছে। সুতরাং বলো এককালীন নাকি কিস্তি?
: কোনোভাবেই কোনো টাকা দেব না।
: ঠিক আছে। আমরাও দেখি কী করতে পারি।
অভীক মোবাইল ফোনটি রেখে দুহাতে চোখ-মুখ ঢেকে বসে পড়ে। এক উৎসব থেকে আরেক মহোৎসেবের দিকে জীবন ধাবিত হয়। অভীক ফোনটি তুলে নিয়ে নিশা খন্দকারের প্রোফাইল ঘাঁটতে থাকে। বিভিন্ন রকম মেয়ের ছবি দেখতে পায়। কারো নাকফুল ডানে, কারো কারো বামে। কারো লম্বা চুল, কারো বব কাট। কেউ দাঁত বের করে হাসছে, কেউ গোমড়া মুখে। এক একটি মেয়ের চার-পাঁচ রকমের ছবি।
শত চেষ্টায়ও কণ্ঠে একটি গান তুলতে পারে না অভীক
ভালোবাসা তুমি যেখানেই যাও করব না টানাটানি
ভেবো না কখনো তোমার জন্য ঝরাব চোখের পানি।