আব্দুর রহমানের টিভি প্রোগ্রাম
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ জুন ২০১৯, ০১:৫১ পিএম
আব্দুর রহমানের জন্মের অনেক আগেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তারপরেও স্বাধীনতা নিয়ে আব্দুর রহমানের একটা ক্রোধ আছে। আর থাকাটাই স্বাভাবিক। ছোটবেলা থেকে যেখানে যায় লোকে তাকে বলে বদি রাজাকারের পোলা। এমনকি মস্ত বড় ডাক্তার হবার পরেও এলাকায় তার ওই একই পরিচিতি। মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে ডাক্তার হিসেবে এত নাম করলেও এলাকায় নিজের নাম সেই বদি রাজাকারের পোলাই থেকে যাচ্ছে।
একটু বড় হয়ে আব্দুর রহমান যখন জানতে পারে তার বাবার মতো সারা দেশে অনেকেই রাজাকার ছিল তখন তার মনে হতো সবাইকে কি এমন রাজাকারের পোলা বলে ডাকে! এ প্রশ্ন তার মনের মধ্যে অনেক দিন ছিল। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যখন কলেজে গেলো, নিজেরও গণ্ডি বাড়লো তখন সে বুঝতে পারলো আসলে তার জন্মটা বড় ভুল জায়গায় হয়ে গেছে। তার জন্মস্থানের অধিকাংশ মানুষ আওয়ামী লীগার ও কমিউনিস্ট পার্টির। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা সকলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। রাজাকার বলতে ছিল একমাত্র তার বাবা। একাত্তরের নয় মাস তার বাবা ওই এলাকায় বলা যায় রাজত্বই করেছিল। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন তার বাড়িতে পাকিস্তানি মিলিটারি আসতো। এমনকি তার মেঝ বোনটা নিয়ে নানান কথা শোনা যায়। এলাকার লোকেরা বলে, তার বাপ পাকিস্তানি মিলিটারিদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল। তবে বাড়ি থেকে তুলে না দিয়ে শহরে নিয়ে গিয়ে নিজেই দিয়ে এসেছিল। অথচ তার বাপ বলতো, পাকিস্তানি মেজর সালেক খান তার মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করে পাকিস্তানে নিয়ে গেছে। তবে আর যাই হোক ৭১-এর জুলাই মাসের পর থেকে তার মেঝ বোনকে কেউ আর কোনো দিন দেখেনি। জুলাই থেকে নভেম্বর অবধি ওই এলাকার দোর্দণ্ড প্রতাপের রাজা ছিল আব্দুর রহমানের বাপ। তাই তখন এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতেও ভয় পেতো।
তবে সে সময়েও যে বদি রাজাকারের দিনগুলো খুব ভালো যেতো তা নয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে মারার জন্যে অন্তত দুইবার অ্যাম্বুস করে। মরতে মরতে বেঁচে যায়। তবে বুদ্ধিমান ছিল বদি রাজাকার। ওই নয় মাসেই সে হিন্দু বাড়িতে লুট করে যত অর্থ পেয়েছিল তা দিয়ে ঢাকাতেই সম্পদ করে। ঢাকাতে বড় বড় দুটো ওষুধের দোকান দেয়। আর বেশ কিছু টাকা সে পাচার করেছিল করাচিতে। মনে করেছিল পাকিস্তানি মিলিটারিরা সন্তুষ্ট হয়ে তাকে কোনো বড় সম্মান টম্মান দিতে পারে। সে সম্মান নিয়ে তো আর ফরিদপুরে বাস করা যায় না। বাস যদি করতে হয় তাহলে করাচিতে করতে হবে। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস, একাত্তরের ৯ ডিসেম্বর তাদের এলাকা মুক্তিবাহিনী মুক্ত করলে পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন পালিয়ে যায় তখন সে মেজর সাহেবের পাও ধরেছিল তারপরেও তাকে জিপে নেয়নি। যে কারণে মিলিটারিরা পালিয়ে গেলে দুইদিন কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে থাকার পরে এলাকার জেলেদের হাতে ধরা পড়ে বদি রাজাকার। জেলেরা তাকে রাম ধোলাই দিয়ে আধমরা করে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে দুইদিন শহরের চার রাস্তার মোড়ে খুঁটি পুঁতে বেঁধে রেখেছিল। যে যেমনি পারে তার গায়ে থুতু, স্যান্ডেলের বাড়ি ইত্যাদি দেয়। মোটামুটি বদি রাজাকার প্রাণে বেঁচে যায় তাকে থানায় হস্তান্তর করার পরে। ওই সময়ে থানায় যে ওসি ছিল সেও ৭১-এর সাত মাস তার কাজের সঙ্গী ছিল। দুজনেই এক সঙ্গে বিভিন্ন বাড়ি থেকে মেয়ে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি মিলিটারিদের কাছে পৌঁছে দিতো। শোনা যায়, ওসি সাহেবের নিজের স্ত্রীকে নাকি ভেট দিতে হয়েছিল পাকিস্তানি মিলিটারিকে। যাহোক, ওসি বদিকে দ্রুত জেলে পাঠিয়ে দেয়। আর এই জেল থেকে মুক্তি পায় ১৯৭৫-এর নভেম্বরের পরে।
বদি যেহেতু শেখ মুজিবের আমলে জেল খেটেছে তাই ছোটবেলা থেকে আব্দুর রহমান তাদের বাড়িতে শুনে এসেছে শেখ মুজিব একজন গাদ্দার। সে পাকিস্তান ভাঙে। আর জিয়াউর রহমান একজন ফেরেশতা। সে ভারতের হাত থেকে, শেখ মুজিবের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের বন্ধু বানিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এই বিধর্মী হিন্দুরা যাতে চলে যায় সেজন্য তাদের জমি দখলের রাস্তা খুলে দিয়েছে জিয়াউর রহমান। বদি অনেক হিন্দু জমি দখলও করেছে। আব্দুর রহমানরা এখন এলাকায় ধনী লোক। সমস্যা শুধু এত ধনী হওয়া সত্তে¡ও আব্দুর রহমানকে বদি রাজাকারের পোলাই বলে সকলে। এই ক্ষোভ আর ছোটবেলা থেকে জিয়াউর রহমানকে একজন ফেরেশতা জেনে বড় হবার ফলে কলেজে এসে খুব তাড়াতাড়ি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়ার ছাত্রদলের একজন নেতা বনে যায় আব্দুর রহমান। তার বাপ বদি রাজাকারকে এলাকায় যতই রাজাকার বলুক না কেন, সেও এখন এলাকায় খালেদা জিয়ার দলের বড় নেতা।
আব্দুর রহমানের ভাগ্যও তার বাপের মতো ভালো। আব্দুর রহমান যেবার ডাক্তারি পাস করে ওই বার আবার ক্ষমতায় আসে জিয়াউর রহমানের স্ত্রীর দল। তাই অতি সহজে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পাস করে যায়। তাদের দলের শীর্ষ স্থান থেকে ও তাদের ডাক্তার নেতারা যে লিস্ট পাঠায় পাবলিক সার্ভিস কমিশনে দুই লিস্টেই নাম ছিল আব্দুর রহমানের। তাই কী লিখিত বা কী ভাইভা সবই তরতরিয়ে পাস করে যায় আব্দুর রহমান। এর পরে সাড়ে তিন বছরে তিনটি প্রোমোশন পেয়ে দ্রুতই বড় ডাক্তার হয়ে যায় আব্দুর রহমান।
ছোটবেলা থেকে তরতরিয়ে উঠলেও গত ক’বছর ধাক্কা খেতে হচ্ছে আব্দুর রহমানকে। প্রথমে ধাক্কা খেতে হলো প্রায় পাঁচ বছর তার প্রোমেশন বন্ধ। কারণ দশ ব্যাচকে সুপারসিট করে তাদের প্রমোশন দেয়া হয়েছিল। এখন সরকার বদলের পরে ওই দশ ব্যাচ আইনের আশ্রয় নেবার ফলে হাইকোর্ট আব্দুর রহমানদের প্রোমশন হেলড আপ করে। এই কেস চলে পাঁচ বছর। পাঁচ বছরে আব্দুর রহমান কোনো প্রোমোশন তো পায়নি, বরং পাঁচ বছর পরে রায়ে তার দুটি প্রোমোশন বাতিল হয়ে যায়। বেতন ফেরত দেবার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় ধরে প্রতি মাসে তার বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে নিয়ে সরকারের কোষাগারে জমা করতে হবে।
সব মিলিয়ে আব্দুর রহমানের দিনকাল খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। তারপরেও মনটাও ভালো না। পথেঘাটে যেখানে সেখানে তাকে এখন জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান শুনতে হয়। কোথাও না বেরিয়ে সে ফেসবুক নিয়ে থাকবে তারও কোনো উপায় নেই, ফেসবুকে আজকাল যে কী সব ছেলেমেয়ে হয়েছে তারা কেবল জয় বাংলা আর বঙ্গবন্ধু নিয়ে আছে। তাছাড়া জিয়াউর রহমান নিয়ে এমন সব পোস্ট দেয় তার না দিতে পারে কোনো উত্তর না পারে সইতে। তবে বদি রাজাকার যেমন জেলে গেলেও তার কপাল খুলে গিয়েছিল জেল থেকে বের হবার পরে। আব্দুর রহমানেরও তেমনি কপাল খোলা শুরু হলো টেলিভিশনের কল্যাণে।
খালেদা জিয়া পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ মেরে ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করার পরে এখন আর তার পক্ষে প্রায় কেউ কথা বলতে টিভিতে যায় না। এমন সময়ে একদিন কীভাবে যেন ডাক পেয়ে যায় আব্দুর রহমান একটি টেলিভিশন থেকে। কথা বলতে গিয়ে জিয়া ও খালেদার প্রতি তার প্রাণখোলা ভালোবাসা বেরিয়ে আসে। টেলিভিশনগুলো লুফে নেয় আব্দুর রহমানকে। তাদের কোনো দোষ নেই। খালেদার পক্ষে কথা বলার একজন লোক তো তাদের দরকার। আব্দুর রহমানের ডিমান্ড দিন দিন বাড়তে লাগলো। কোনো কোনো দিন দুটো তিনটে প্রোগ্রামেও আব্দুর রহমান ডাক পায়। এর সঙ্গে সঙ্গে টিভিতে পরিচিত হবার সুযোগে স্বাস্থ্য নিয়ে প্রোগ্রামও শুরু করে দেয় আব্দুর রহমান নানান টেলিভিশনে।
খালেদার লোক হিসেবে আব্দুর রহমান পরিচিত হয়ে ওঠে প্রায় রাতারাতি। সরকারকে সমর্থন করে এমন অনেকেও এখন আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। তাদের হিসাব পুরো গিভ এন্ড টেক। এখন তারা আব্দুর রহমানকে যতটা পারবে সুযোগ দেবে খালেদার দল ক্ষমতায় এলে আব্দুর রহমান যেন তাদের জন্যে একই কাজ করে। সব মিলিয়ে এখন আব্দুর রহমানের নিজেকে একটা হিরো হিরো মনে হয়। হিরোর মতো পোচ দিয়ে মাঝে মাঝে ফেসবুকে পোস্টও দেয়। নিজেকে এই হিরো ভাবার পরে এখন আব্দুর রহমানের মনে হয় এখন তার একটা প্রোমোশন দরকার। যদি সে এই আমলে একটা বাড়তি প্রোমশন নিয়ে নিতে পারে তাহলে শালার ওই জয়বাংলাওয়ালাদের মুখের ওপর আচ্ছা একটা জুতোর বাড়ি পড়ে। আর এ কাজটি করার জন্যে নানান ফন্দি ফিকির খুঁজতে থাকে আব্দুর রহমান।
আব্দুর রহমান যে সময়ে এই ফন্দি ফিকির খুঁজছিল ওই সময়ে হঠাৎ সে একটা সুযোগও পেয়েও যায়। একটা টিভি কর্তৃপক্ষকে রাজি করিয়ে ফেলে যে ১৪ ডিসেম্বর সে শহীদদের কোনো একজন সন্তানকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করবে। ফেসবুক ঘেঁটে ঘেঁটে শহীদদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জেনে নেয় আব্দুর রহমান। তারপরে সে খুঁজতে থাকে শহীদের সন্তান ডাক্তার নেতা কে আছে। আব্দুর রহমানের উদ্দেশ্য এখানে এক ঢিলে দুই পাখি মারা। আর এই দুই পাখি মারার জন্যে বেশ হোমওয়ার্ক করতে থাকে প্রোগ্রামটি নিয়ে। শহীদের সন্তান একজন ডাক্তারও পেয়ে যায়।
১০ ডিসেম্বর প্রোগ্রাম রেকর্ড করার আগে বেশ টেনশনে ছিল আব্দুর রহমান। বারবার রিহার্সেল দেয় বাসায়। বঙ্গবন্ধু বলতে তার জিহ্বার যে আড়ষ্টতা ছিল সেটাও বারবার বাসায় বঙ্গবন্ধু বলে বলে কাটিয়ে নেয়। আর প্রোগ্রাম রেকর্ডিংয়ের সময় তো একেবারে ফাটিয়ে দেয় আব্দুর রহমান। পাকিস্তানি হানাদারদের নারী নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে একবার সে নিজেই কেঁদে দেয়। শহীদদের সন্তান যখন তাদের পিতাকে কীভাবে রাজাকার ও আলবদররা ধরে নিয়ে গিয়েছিল ওই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখের পানি ফেলে সে সময়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে আব্দুর রহমান।
আব্দুর রহমানের ওই প্রোগ্রাম দেখার পরে অনেকেই দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। এতদিন যারা জানতো আব্দুর রহমান একজন বড় রাজাকারের ছেলে তারা যেমন বিস্মিত হয় তেমনি বিস্মিত হয় যারা তার টিভি টকশো দেখে। অত বড় বিএনপি সমর্থক হয়ে এভাবে ১৪ ডিসেম্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে যে কেউ কাঁদে সেটা তারা এই প্রথম দেখলো। যারা অতিশয় ভদ্রলোক তারা বলতে থাকেন আসলে সত্য ইতিহাস সামনে আসাতে আব্দুর রহমানের মতো অনেকেই এখন পরিবর্তন হয়েছে।
টিভি প্রোগ্রামটি সাড়া পায় ভালো। ১৪ তারিখে প্রোগ্রাম প্রচারের সাত দিন পরে ওই শহীদ সন্তানকে ফোন করে আব্দুর রহমান তার কাছে একটা অ্যাপয়নমেন্ট চায়। শহীদ সন্তানটি অত্যন্ত সাদামাটা মানুষ। সে সঙ্গে সঙ্গে আব্দুর রহমানকে অ্যাপয়নমেন্ট দেয়। আব্দুর রহমানও যথাসময়ে তার সঙ্গে দেখা করতে যায়। আব্দুর রহমান তার সঙ্গে অনেকক্ষণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করে। দেখা করার আগে গত দুই রাত ফেসবুক ও ইউটিউব ঘেঁটে সে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ওই শহীদ সন্তানের বাবার ইতিহাস যা পড়েছিল মোটামুটি সব বমি করে দেয়। শহীদের সন্তানও আব্দুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জ্ঞানে খুশি হয়। আর মনে মনে ভাবে দেশের সব মানুষ যদি আব্দুর রহমানের মতো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতো তাহলে দেশটা বদলে যেতো। এই জামায়াত-বিএনপি রাজাকারদের স্থান থাকতো না এদেশে।
এরপরে শহীদের সন্তানের কাছ থেকে উঠে আসার একটু আগে আব্দুর রহমান তাকে ছোট্ট একটা অনুরোধ করে। বলে, সে যদি একটু তাকে সুপারিশ করে তাহলে তার এবারের প্রমোশনটা হয়ে যাবে। শহীদের সন্তান মনে করে এটা আর এমন কি আব্দুর রহমানের মতো একজন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রেমিক প্রমোশন পাবে আর তার জন্য সে একটু বলবে তা আর এমন কি! শহীদের সন্তান তাই কাঁচুমাঁচু হয়ে বলে, রহমান সাহেব আপনি আমাকে লজ্জা দেবেন না। আমি আমার সাধ্যমতো করবো।
শহীদের সন্তান আব্দুর রহমানের জন্যে সত্যি সত্যি নিজের কাজ ফেলে গিয়ে দেখা করে স্বাচিবের জেনারেল সেক্রেটারির সঙ্গে। সে আব্দুর রহমানের নাম ও পদবী দিয়ে বলে স্বাচিব যখন সরকারের কাছে প্রোমশনের লিস্ট দেবে সেই লিস্টে আব্দুর রহমানের নাম থাকলে সে খুব খুশি হবে। কারণ আব্দুর রহমান সত্যি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা একজন মানুষ। স্বাচিব সেক্রেটারি অনেকক্ষণ শহীদের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপরে বলে, আপনি কি তার সম্পর্কে সঠিক জানেন? শহীদের সন্তান বলে, তিনি আমাকে নিয়ে একটা প্রোগ্রাম করেছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে। তাছাড়া যখনই দেখা হয় তখনই তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন। স্বাচিব সেক্রেটারি আব্দুর রহমানের বুদ্ধির তারিফ করেন। তারপরে ধীরে ধীর আব্দুর রহমানের ইতিহাস ও তার পারিবারিক পরিচয় তুলে ধরে শহীদের সন্তানের কাছে। শহীদের সন্তান শুধু বলে, আসলে আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক অনেক সরল এ কারণেই বারবার শয়তানদের কাছে পরাজিত হই। তারপরে স্বাচিব সেক্রেটারির কাছে রুম থেকে বের হয়।
এর পর আব্দুর রহমান বার কয়েক ফোন করেছে শহীদের ওই সন্তানকে। শহীদের সন্তান ভদ্রভাবে নানান অজুহাতে তাকে এড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে সরকারি ডাক্তারদের প্রমোশন লিস্ট প্রকাশ পেয়েছে। যাদের প্রমোশন পাবার তারাই পেয়েছে। আব্দুর রহমান বাড়তি সুযোগটি নিতে পারেনি। অথচ আব্দুর রহমানের বিশ্বাস ছিল সে যেভাবে শহীদের সন্তানকে কনভিনস করেছিল তাতে এ বৈতরণী সে সহজে পার পাবে। কিন্তু না হওয়াতে বেশ হতাশ হয়ে নিজ রুমে শুষ্ক মুখে বসে থাকে আব্দুর রহমান। এ সময়ে তারই মতাদর্শের ডা. মুস্তাফিজ তার রুমে ঢোকে। ঢুকে বলে কী দোস্ত মন খারাপ কেন? আব্দুর রহমান বলে, শালার শহীদের বেটাটাকে ধরেছিলাম ঠিকমতো। প্রোগ্রামে কাঁদিয়েও ছেড়েছিলাম। কিন্তু হারামি আমার প্রোমোশনটা করালো না।