×

জাতীয়

শেষ শুক্রবারে ক্রেতারণ্য নিউমার্কেট-গাউছিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০১৯, ০৩:০০ পিএম

শেষ শুক্রবারে ক্রেতারণ্য নিউমার্কেট-গাউছিয়া
ঈদের আগের শেষ শুক্রবারে গতকাল রাজধানীর মার্কেটগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। দিনের প্রথমভাগে প্রচণ্ড রোদ আর অসহনীয় গরমের কারণে ক্রেতা সমাগম কিছুটা কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে শুরু হয় মার্কেট অভিমুখী ঢল। সব পথ গিয়ে যেন মেশে নিউমার্কেট-গাউছিয়া-ইস্টার্ন মল্লিকায়। মৌচাক-পীর ইয়ামেনী-রাজধানী সুপার মার্কেট-গুলিস্তান হকার্স মার্কেটেও সব ধরনের ক্রেতার ভিড় ছিল লক্ষণীয়। নামিদামি শপিং মলের চেয়ে অনেক কম দামে পছন্দের পোশাক-আশাক কিনতে পারায় অনেকেই দল বেঁধে ছুটে আসেন এসব মার্কেটে। নাড়ির টানে বৃহস্পতিবার থেকেই অনেকে রাজধানী ছাড়তে শুরু করলেও গতকাল বিপণিবিতানগুলোতে তার খুব একটা প্রভাব দেখা যায়নি। প্রায় সব মার্কেট ও শপিং মলই পরিণত হয়েছিল ক্রেতারণ্যে। গতকাল বিকেল গড়াতেই বাটা সিগন্যাল মোড় থেকে গাউছিয়া পর্যন্ত ক্রেতাদের জটলার সঙ্গে বাড়ছিল যানবাহনের চাপ। মিরপুর রোডের দুই পাশও ছিল ভিড়ে ঠাসা। বিক্রেতারা বলছেন, বসুন্ধরা কিংবা নগরীর অন্য শপিং সেন্টারগুলোতে পণ্যের দাম এখানকার চেয়ে অনেক বেশি। তা ছাড়া যাতায়াতের কষ্ট তো আছেই। এখানে দরদাম করে সহনীয় দামে জিনিস কেনার সুযোগ আছে। তাই শুধু রাজধানীবাসীই নয়, সাভার-কেরানীগঞ্জ-গাজীপুর-নরসিংদী-মুন্সীগঞ্জ থেকেও ক্রেতারা ছুটে আসছেন। কথা হলো ধানমন্ডি থেকে আগত ইসলামিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক রোমেনা পারভীনের সঙ্গে। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটে শাড়ি থেকে শুরু করে বাচ্চাদের কাপড়, ঘর গেরস্থালি সাজানোর আসবাবও পাওয়া যায়। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য এই মার্কেটই পারফেক্ট। তা ছাড়া যাতায়াতেও সুবিধা। আমি এলিফ্যান্ট রোড হয়ে স্বচ্ছন্দেই আসলাম। যাবও ওই পথেই। কিন্তু বসুন্ধরা কিংবা যমুনা ফিউচারে যেতে সময়ই চলে যায় রাস্তায়। তার ওপর চড়া দাম। ইস্টার্ন মল্লিকার পালকী শাড়ি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার শাফায়েত রহমান বলেন, এখন অনলাইনে প্রচুর বিক্রি হচ্ছে, যে কারণে শুরুর দিকে বেচাকেনা একটু কম ছিল। তবে আল্লার রহমতে এখন ভালোই বিক্রি হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের চনকুটিয়া চৌরাস্তা থেকে ঈদবাজার করতে আসা গৃহবধূ লাবণী ইসরাত সেতু বলেন, বসুন্ধরা কিংবা যমুনা ফিউচার পার্কে প্রতিটি জিনিসের দাম কয়েক গুণ। অথচ ইস্টার্ন মল্লিকায় ওই সব মার্কেটের চেয়ে রিজনেবল প্রাইজে পাই। একটু কাছাকাছি হওয়ায় যাতায়াতের সুবিধাটা ভালো। জ্যাম ঠেলে যাওয়ার বিরক্তিকর প্যারাও নিতে হয় না। অন্যদিকে ইস্টার্ন মল্লিকার একশো গজ দূরেই সম্প্রতি চালু হয়েছে মার্কেট গ্রিন স্মরণিকা শপিং মল। এই মার্কেটকেও সাদরে গ্রহণ করেছে ক্রেতারা। এর অন্দরে ঢুকে দেখা গেল বেজায় ভিড়। নিচ তলার এম ডি ফ্যাশনের কর্নধার ফারহানা হোসেন বলেন, নতুন মার্কেটে আমার এই দোকানের যাত্রা শুরু দু’মাস আগে। প্রথম দিন থেকেই ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমরা মূলত রেডিমেড আইটেমই বেশি বিক্রি করি। বেশ ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। ভিড় ঠেলে এ মার্কেট থেকে বেরিয়ে গাউছিয়ার দিকে পা ফেলতেই দেখা গেল মানুষ আর মানুষ! উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত, সব শ্রেণির ক্রেতার ঢলে মার্কেটের ভেতরে এবং রাস্তার আশপাশে তিল ধারণের জায়গা নেই। কথা হলো ধানমন্ডি থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সোমার সঙ্গে। তিনি জানালেন, বড় মার্কেটে দাম বেশি, গাউছিয়া কিংবা নিউমার্কেটে রিজনেবল প্রাইজ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে পোশাক, জুতা কসমেটিকসসহ সবই পাওয়া যায় সাধ এবং সাধ্যের মধ্যেই। আর তা দরদাম করেই কেনা যায়। সবেচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ভ্যাট দিতে হয় না। তাই এ মার্কেট স্বস্তিকর। গাউছিয়ার ওপাড়েই নিউমার্কেট। ভিড় ঠেলে ওপাড়ে যেতেই হিমিশিম খেতে হলো কয়েক দফা। দোকান বা ফুটপাত, কমদামে জিনিসপত্র কেনার জন্য এই নিউমার্কেটের জুড়ি নেই বটে। এখানে শাড়ি থেকে শুরু করে বাচ্চাদের পোশাকসহ সব ধরনের পোশাক পাওয়া যায় কম দামে। তবে বিক্রেতারা সবসময়ই চড়া মূল্য হাঁকিয়ে থাকেন, তাই একটু দরদাম করেই নিতে হয়। কথা হলো লিলি স্টোরের পরিচালক কাজল মো. আলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ৪২ বছর ধরে এই মার্কেটে ব্যবসার করছে তাদের পরিবার। শিশুদের-বড়দের সবার পোশাকই তাদের কালেকশনে রয়েছে। বিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে। তবে অনলাইনে প্রচুর বেচাকেনা এবং ভারতীয় ভিসা সহজলভ্য হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। তারা টিকে আছেন নির্ধারিত ক্রেতা এবং গুডউইলের ওপর। এই দোকানে ছোটদের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫০০ টাকা মধ্যে। মেয়েদের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে ১০০০ থেকে ৩০০০ হাজারের মধ্যে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিজান মাহমুদ এসেছিলেন প্যান্ট কিনতে। তিনি জানালেন, ঈদে বাড়ি যাওয়ার আগে সব শপিং এখান থেকেই সেরে যান। কারণ এখানে সবচেয়ে কমদামে ভালো ও পছন্দসই জিনিস পাওয়া যায়। আর তার বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছে হওয়াতেও সুবিধা। ইচ্ছামতো কেনাকাটা করা যায়। আর দামটাও একেবারে সাধ্যের মধ্যে বলে তিনি কোনো ব্র্যান্ডের দোকানে যেতে চান না। প্যান্ট বিক্রেতা সাফায়েত জানালেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে নিউমার্কেটে প্যান্ট বিক্রি করে আসছেন। তার দোকানে ৩০০ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকার মধ্যে সব ধরনের জিন্স, গ্যাবার্ডিন, ফরমাল প্যান্ট পাওয়া যায়। ঈদ উপলক্ষে কেনাবেচা গতবারের চেয়ে বেশ ভালো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App