×

মুক্তচিন্তা

রাজনীতির প্রতি অনেকেই আগ্রহ হারিয়েছেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০১৯, ০৯:৫২ পিএম

বিএনপি নেতারা কেন খালেদা জিয়াকে বারবার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নিয়ে যেতে চান? তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন সেটা কি বিএনপি চায় না? বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে না পেরে বিএনপির মধ্যে ব্যাপক হতাশা আছে। অন্যদিকে বিএনপির লন্ডন প্রবাসী নেতা তারেক রহমান সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, তিনি তার স্বার্থ হাসিলের জন্য করতে পারেন না, এমন কোনো কাজ নেই। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ সম্ভব নয় মনে করে তারেকের মাথায় ভিন্ন পরিকল্পনা খেলা করলেও করতে পারে।
দেশের রাজনীতি নিয়ে রাজনীতি সচেতন মানুষও দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কোনো আড্ডায় এখন আর রাজনীতি আলোচনার প্রধান আকর্ষণ নয়। অনেকেই এখন ধরে নিয়েছেন যে, রাজনীতি যেমন চলছে, আগামী বেশ কিছুদিন সে রকমই চলবে। রাজনীতির চালকের আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন আছেন, তেমনই থাকবেন। বিরোধী দলগুলোর সুবিধাজনক অবস্থায় যাওয়ার কোনো আশা বা সম্ভাবনা দেখা যায় না। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ক্রমেই একটি বিবৃতিসর্বস্ব দলে পরিণত হচ্ছে। গণমাধ্যম ছাড়া বিএনপির উপস্থিতি মানুষ টের পায় না, পাবে না। ৩০ মে ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি ছিল না বিএনপির। জিয়াউর রহমানের কবরে কয়েকজন নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারপর উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘শাহাদাতবার্ষিকীর এই দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দর্শন ও আদর্শকে সামনে নিয়ে তাকে অনুসরণ করে আমরা শপথ করব যে, আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করব এবং গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করব।’ মির্জা ফখরুল আরো বলেছেন, ‘দেশে একটা দুঃশাসনের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটক রাখা হয়েছে।’ বিএনপি নেতারা দেশের অবস্থা অত্যন্ত নেতিবাচকভাবেই তুলে ধরেন। দেশে গণতন্ত্র নেই। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেই দেশে গণতন্ত্রও মুক্তি পাবে। এ ধরনের সস্তা কথাবার্তা এখন আর মানুষকে খুব বেশি আকৃষ্ট ও উদ্বুদ্ধ করে না। দেশে আদর্শ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ঘাটতি যে আছে সেটা ঠিক। নির্বাচন ব্যবস্থাও যে বিতর্কমুক্ত নয়, তাও হয়তো সরকারি দলের লোকরাও অস্বীকার করবেন না। তবে এ অবস্থার জন্য বিএনপি এককভাবে দায়ী করে সরকার এবং আওয়ামী লীগকে। আর আওয়ামী লীগ হয়তো মনে করে, দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য দায়ী বিএনপি। বিএনপির ভুল রাজনৈতিক নীতি-কৌশল ও কর্মসূচি সরকার তথা আওয়ামী লীগকে আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে যেতে বাধ্য করেছে। যে কোনো উপায়ে সরকার পরিবর্তনের ধারার অনুসরণ না করে বিএনপি যদি সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলত তাহলে আওয়ামী লীগও হয়তো কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতো না। ক্ষমতায় থাকতে একের পর এক আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের হত্যার বিচার না করা, মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দান, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে দেশজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো, নির্বাচন কর্মকর্তাদের হত্যা ও নির্বাচনকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া এবং মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগেই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ভয়াবহ আগুন-সন্ত্রাস চালিয়ে বিএনপি নিজেই গণতন্ত্রকে হিমঘরে পাঠিয়েছে। আজ যখন বিএনপি দেশে গণতন্ত্র নেই বলে হাহাকার করে তখন মানুষ তাতে কৌতুকবোধ করে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশে গণতন্ত্রের জয়যাত্রা শুরু হবে- এটা অনেকেই মনে করেন না। খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে গণতন্ত্রও অবরুদ্ধ থাকবে বলে যে প্রচারণা বিএনপি চালায় তার সঙ্গে সাধারণ মানুষ একাত্মবোধ করেন বলে মনে হয় না। ‘মিথ্যা মামলায়’ খালেদা জিয়াকে সরকার আটকে রেখেছে বলে যে কথা বিএনপি প্রচার করে তাও সরকার মানতে রাজি নয়। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হয়েছে এবং বিচারকাজ অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে যথাযথ সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সম্পন্ন হয়েছে। মামলা চলাকালে খালেদা জিয়া সব ধরনের আইনি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে এবং তিনি দণ্ডিত হয়ে এখন কারাগারে আছেন। বিচার কাজটি গোপনে হয়নি। সবই মানুষ দেখেছে, জেনেছে। তাই বিএনপি যখন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেলে রাখার কথা বলে তখন মানুষ তা বিশ্বাস করে না। বিএনপির বক্তব্য মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হলে বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন জোরদার হতো। একজন দণ্ডিত অপরাধীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে ওঠা সহজ কাজ নয়। বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়েও বিএনপি এক ধরনের রাজনীতি করছে বলে মনে হয়। কয়েকদিন পর পর বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতির কথা জানানো হয়। এমন অভিযোগও করা হয় যে, সরকার জেলের ভেতর খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। খালেদা জিয়া বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সর্বশেষ (২৯ মে, ২০১৯) জানিয়েছেন যে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমান্বয়ে উন্নতি হচ্ছে। তিনি যেসব শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সেগুলো ধীরে ধীরে কমছে। তার ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসের উন্নতি হয়েছে, দুর্বলতা কাটছে। শারীরিকভাবে তিনি এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। এসব সংবাদ সম্পূর্ণ ভুল। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড কিংবা বিএসএমএমইউ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করেই এ ধরনের সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা কখনোই তেমন আশঙ্কাজনক ছিল না, এখনো নেই। প্রশ্ন হলো, বিএনপি নেতারা কেন খালেদা জিয়াকে বারবার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নিয়ে যেতে চান? তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন সেটা কি বিএনপি চায় না? বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে না পেরে বিএনপির মধ্যে ব্যাপক হতাশা আছে। অন্যদিকে বিএনপির লন্ডন প্রবাসী নেতা তারেক রহমান সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, তিনি তার স্বার্থ হাসিলের জন্য করতে পারেন না, এমন কোনো কাজ নেই। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ সম্ভব নয় মনে করে তারেকের মাথায় ভিন্ন পরিকল্পনা খেলা করলেও করতে পারে। মায়ের সঙ্গে ছেলের বিভিন্ন বিষয়ে মতভিন্নতা তৈরির খবরও ইদানীং শোনা যাচ্ছে। বগুড়া উপনির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে খালেদা-তারেকের মতদ্বৈধতার কথা প্রচার হয়েছে। রাজনীতিতে কম বিনিয়োগে বেশি মুনাফার ধান্ধা তারেক রহমান করতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার সুস্থতার চেয়ে অসুস্থতাই তো তারেকের বেশি কাম্য হওয়ার কথা। তবে উল্টাপাল্টা রাজনীতি, স্ট্যান্টবাজির রাজনীতির দিন এখন আর রমরমা নেই। তাই তো বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় দলও এখন কেমন অল্প পানিতেই খাবি খেতে শুরু করেছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান রাজনীতিবিদের জন্য রাজনীতি ‘ডিফিকাল্ট’ করে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি তাতে কিছুটা সফলও হয়েছিলেন। তবে তার এই কৌশল যে এক সময় তার দলের ওপর বুমেরাং হয়ে আঘাত হানতে পারে- সেটা বোঝার মতো রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্ভবত তার ছিল না। তাই হয়তো তার মৃত্যুর এত বছর পর এখন দেশে বিএনপির জন্যই রাজনীতি করা ডিফিকাল্ট হয়ে পড়েছে। বিএনপি নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ-কৌতূহল কমতে শুরু করছে। চিরদিন কারোই নাকি সমান যায় না। তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য এখন পরিস্থিতি যতটা অনুকূল মনে হচ্ছে, সেটা সাময়িক? বিষয়টি ভেবে দেখার মতো। সময় এখন আওয়ামী লীগের পক্ষে। তবে রাজনীতিতে উত্থান-পতন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বিরোধী দলগুলো শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে হেরে গেছে। তারা এখন সাইডলাইনে। দাপটের সঙ্গে ক্রিজে আছেন শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ। এখন রাজনীতির মাঠ নিস্তরঙ্গ হলেও ক্রিকেটের মাঠে চলছে চরম উত্তেজনা। ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে চলছে ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা। সমর্থক দলের পক্ষে যুক্তিতর্কের শেষ নেই। বাংলাদেশ দল নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক আশাবাদ। কেউ কেউ এমনও মনে করছেন যে, বাংলাদেশ দল এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের শিরোপা নিয়েই দেশে ফিরবে। অনেকে আবার এবারই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন না দেখে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়ার পক্ষে। বাংলাদেশ দলের শক্তিকে ছোট করেও দেখতে চান না অনেকেই। ক্রিকেট যতটা অনিশ্চয়তার খেলা, রাজনীতি ততটা নয়। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের অনেকের যেমন এখন ফর্ম ভালো আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগ এখন ফর্মে নেই। বিভুরঞ্জন সরকার : যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App