×

মুক্তচিন্তা

অপরাধীদের যথোচিত  শাস্তি দিতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০১৯, ০৯:৪৩ পিএম

পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী শক্তিশালী চক্র দাঁড়িয়ে গেছে, যাদের কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা থেকে শুরু করে মেডিকেল, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা পর্যন্ত সর্বত্রই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা, ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা এমনকি বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ জালিয়াতির অভিযোগে বড় চক্র শনাক্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দেড় বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ছয়টি চক্রের সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এসব চক্রের ১২৫ জনকে শনাক্ত করা গেছে, যাদের ৮৭ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সিআইডির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ওই ১২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে হাজার পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করা হবে। আমরা অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে দেখতে চাই। প্রশ্নফাঁস রোধে প্রশ্নপত্র তৈরি, ছাপা এবং বিতরণ ব্যবস্থায় পদ্ধতি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার সরকারি পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়া দরকার দ্রুত। দেখা গেছে, প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সঙ্গে এক শ্রেণির অসাধু শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রী এর সঙ্গে জড়িত। এদের হাত ধরে প্রশ্নপত্র ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে যায়। দীর্ঘ পড়াশোনা করার পরও আমাদের শিক্ষার্থীরা গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে দুর্বল থেকেই যায়। এ কারণে তারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সন্ধানে থাকে। আবার উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি ও চাকরির ক্ষেত্রে উতরে যেতেও অনেকে অবৈধ পথের সন্ধান খোঁজে। চক্রাকারে এরা ফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে মাঠ পর্যায়ে প্রশ্নপত্র বিতরণ- বর্তমানের গোটা প্রক্রিয়াই ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোপূর্বে প্রশ্ন ফাঁসের দায়ে কথিত ‘নিরাপদ’ ছাপাখানার কর্মকর্তা-কর্মী যেমন অভিযুক্ত হয়েছেন, তেমনি অভিযুক্ত হয়েছেন পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক-কর্মীও। আগে শোনা যেত ফাঁস হচ্ছে উপরমহল থেকে, এখন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নফাঁস হচ্ছে উপজেলা বা কেন্দ্র পর্যায় থেকে আর এতে শিক্ষকরাও জড়িত। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের কঠিন শাস্তির বিধানসহ আইন রয়েছে। কিন্তু সেই আইনে কারো সাজা হয়েছে বলে জানা যায় না। শিক্ষক-শিক্ষাবিদরা প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন, সেগুলোও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। সরকারের সংশ্লিষ্টদের তরফে একটা প্রবণতা বরাবর লক্ষ করা যায় প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করার। কিন্তু অন্ধ হলে তো আর প্রলয় বন্ধ থাকে না। প্রশ্নফাঁস চলছেই। জাতির বৃহৎ স্বার্থে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এসব মাধ্যমে নজরদারি বাড়াতে হবে। চিহ্নিত অপরাধীদের যথোচিত শাস্তি দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা গোটা প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগত সংস্কার আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App