×

জাতীয়

মাত্র ২৪ টাকায় বাঁচানো যায় লাখো মায়ের জীবন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০১৯, ১১:৪৫ এএম

মাত্র ২৪ টাকায় বাঁচানো যায় লাখো মায়ের জীবন
দেশে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের হার বাড়লেও এখনো বেশিরভাগ মাকে জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচির আওতায় আনা যায়নি। সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৪৭ শতাংশ। এখনো ৫৩ শতাংশ প্রসব বাড়িতে হয় অদক্ষ হাতে। মাতৃমৃত্যুর ৫৪ শতাংশই হয়ে থাকে বাড়িতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রসব পরবর্তী সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মাতৃমৃত্যুর ৫৫ ভাগ মৃত্যুই হয়ে থাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনির কারণেই বেশিরভাগ মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। জরিপে বলা হয়, প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণে ৩১ শতাংশ এবং খিঁচুনিতে ২৪ শতাংশ মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। স্ত্রী ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতক্ষণ না প্রত্যেক মাকে মানসম্পন্ন সেবাকেন্দ্রে প্রসবের জন্য আনা যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ প্রসব ও জীবন রক্ষাকারী সেবা নিশ্চিত করা অসম্ভব। রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনিতে যেসব মায়ের মৃত্যু হচ্ছে তা অধিকাংশই রোধ করা সম্ভব। প্রসব পরবর্তী সময়ে প্রসূতিতে দুটি মিসোপ্রোস্টল ট্যাবলেট (মিসোপিল) খাওয়ালে উল্লেখযোগ্য হারে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায়। এই দুটি ট্যাবলেট কিনতে লাগে মাত্র ২৪ টাকা। তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেড় লাখেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী মাঠে কাজ করছে। এরপরও এই সামান্য কাজটুকু করার মতো পরিকল্পনা, উদ্যোগ, সমন্বয় কিংবা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র ১৭ শতাংশ মায়ের কাছে এই জাদুকরী ট্যাবলেট পৌঁছেছে। তবে দাম কম হওয়ায় এই ট্যাবলেট উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছে না দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো। স্ত্রী রোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ সমিতির (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, খুব সহজেই আমরা কিছু মাতৃমৃত্যু রোধ করতে পারি। একটা সিঙ্গেল ড্রাগ দিয়ে প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ রোধ করা যায়। মায়ের আঁচলে যদি এই জাদুকরী দুটি ওষুধ আমরা বেঁধে দেই এবং পরিস্থিতি বুঝে তাকে খাওয়াই তাহলে মায়ের জীবন রক্ষা পাবে। তবে সস্তা হওয়ায় এ ওষুধ উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছে না অনেক ওষুধ উৎপাদন কোম্পানি। প্রসূতির প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও খুব একটা উন্নত নয় বলে মন্তব্য করে ডা. রওশন আরা বলেন, আমরা কখনোই কেমন জায়গায় একজন মা প্রসব করবেন, সেদিকে খুব একটা নজর দেইনি। এ কারণে সেই আদিকাল থেকে ঘরে যখন প্রসব হয়, তখন সবচেয়ে নিকৃষ্ট অথবা গোপনীয় অন্ধকার জায়গাটিই বেছে নেয়া হয়। অথচ এটা গোপনীয় ব্যাপার নয়, তবে সেটি হবে স্বাভাবিক পর্দার অন্তরালে। আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সেভাবে তৈরি হয়নি। প্রসবের জন্য একটি রুম থাকলেও সেখানকার পরিবেশ খুব একটা ভালো নয়। আবার ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ক্লিনিকগুলোতে লেবার রুমই রাখা হয়নি। অথচ লেবার রুমটি হওয়া উচিত আলো-বাতাসপূর্ণ। প্রসূতি মায়েদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে উৎসাহ দিতে হলে ‘লেবার রুমটি একটি নিরাপদ জায়গা’ ও সেটি ‘প্রসূতিবান্ধব’ হতে হবে। ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী বলেন, সন্তান প্রসবের জন্য দক্ষ দাই ও সন্তান প্রসবকালে হাসপাতালমুখী হওয়ার ক্ষেত্রেও আমাদের দেশে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে বলেন, হাসপাতালে নিলেই সিজারিয়ানের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করানো হবে। তাই তারা গর্ভবতী মাকে বাড়িতে রেখে সন্তান প্রসব করাচ্ছেন। এতে প্রসব পরবর্তী সংক্রমণ ও প্রসবকালে মাতৃমৃত্যু ঘটছে। অথবা জীবনব্যাপী সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। অসচেতনতা ও অশিক্ষার কারণে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘মর্যাদা ও অধিকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতি সেবায় অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ ২৮ মে, পালিত হচ্ছে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। ১৯৮৭ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে উন্নয়ন-সহযোগীদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিরাপদ মাতৃত্ব বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন সরকার ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ওজিএসবি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে আলোচনা সভা সম্প্রচার করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App