ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্যে আমরা অসহায়
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০১৯, ০৮:৫৭ পিএম
খাদ্যপণ্যে ফরমালিন ও কার্বাইড ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েই চলেছে। এই বিষয়ে বারবার আমরা সম্পাদকীয় লিখেছি। ভেজাল নিরসনে আইনি কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সন্দেহ নেই; কিন্তু তারচেয়েও বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে আইনের প্রয়োগ খুবই সামান্য। এতে সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্যে বিষ মিশাচ্ছে তারা।
সর্বশেষ গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রাজধানীতে মহিষের মাংসে লাল রং মিশিয়ে গরুর মাংস বলে বিক্রি করছে। জনসচেতনতা ও প্রশাসনিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন ছাড়া ভেজালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা অসম্ভব। ভেজালবিরোধী অভিযান আমরা প্রায়ই দেখি। কোনোভাবে যেন এই চক্রকে দমন করা যাচ্ছে না। রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে ভারতীয় মহিষের মাংসে লাল রং মিশিয়ে গরুর মাংস বলে বিক্রি করার দায়ে দুই দোকানিকে দুই মাস করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এরপর কি তারা সতর্ক হবে? খাদ্যপণ্যে নকল, ভেজাল মেশানো আমাদের দেশের খাদ্য ব্যবসায়ীদের প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ক্ষতিকর রং এবং অস্বাস্থ্যকর উপকরণের ব্যবহার অহরহ ঘটে। এসব খাবার খেয়ে সাধারণ মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। মহাখালী পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের খাদ্য পরীক্ষাগারের তথ্যানুযায়ী, দেশের ৫৪ ভাগ খাদ্যপণ্য ভেজাল ও দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত হয়।
সারাদেশ থেকে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের পাঠানো খাদ্যদ্রব্যাদি পরীক্ষাকালে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ।
এই পরিসংখ্যানটি আমাদের ভাবিয়ে না তুলে পারে না। নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তায় আইন হয়েছে আগেই। ২০১৫ সালে গঠন করা হয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। ভেজালবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তারা কাজ করছে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেজালবিরোধী অভিযান তো আছেই। তারপরও কমছে না ভেজালের ব্যাপকতা।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা প্রয়োগ করার কোনো নজির নেই। আমরা আশা করব, ভেজালবিরোধী অভিযান কঠোর হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।
ভেজাল পণ্য ও অসাধু ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে অভিযান নিয়মিত থাকলে ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়। তবে ভেজাল ঠেকাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। আইন দিয়ে ভেজাল ঠেকানো সম্ভব নয়। এ জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।