×

জাতীয়

পুলিশ কেন জঙ্গি টার্গেট?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০১৯, ১০:৩৮ এএম

পুলিশ কেন জঙ্গি টার্গেট?
দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে ইসলামী জঙ্গিরা। খোদ রাজধানীতেই গত কয়েকদিনে পুলিশকে টার্গেট করে একাধিক বোমা হামলা চালানো হয়। এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সর্বশেষ রবিবার রাতে মালিবাগ মোড়ে পুলিশের গাড়িতে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুজন আহত হওয়ার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে আইএস। জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এ খবর দিয়েছে। এ ঘটনার পর সারা দেশে নিরাপত্তা বাড়ানোসহ বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। পুলিশের সবকটি ইউনিটে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা গতকাল এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছেন। বাড়ানোর হয়েছে গোয়েন্দা কার্যক্রম। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ছোট-বড় অনেকগুলো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটলেও এসব হামলায় সরাসরি শুধু মাত্র পুলিশকে টার্গেট করা হয়নি। কিন্তু ইদানীং কৌশল পাল্টে পুলিশের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। সে হামলার দায়ও স্বীকার করছে তারা। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশকে কেন টার্গেট করেছে জঙ্গিরা? নিরাপত্তা, সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাতার সফল অভিযানে বিপর্যস্ত জঙ্গিরা পুলিশকে টার্গেট করে প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চাইছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল বলেন, পুলিশের মনোবল ভাঙতেই এই অপচেষ্টা। মালিবাগে পুলিশসহ দুইজন যে বিস্ফোরকে আহত হয়েছেন, সেটি একটি শক্তিশালী ককটেল ছিল। বিস্ফোরিত ককটেলটি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)। সাধারণ ককটেলের চেয়ে এটি শক্তিশালী ছিল। বিস্ফোরিত ককটেলটি আগে থেকেই গাড়িতে পেতে রাখা হয়েছিল। ঘটনার পর সিআইডি, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তারা আলামত সংগ্রহ করেছে। তিনি বলেন, কাজটি যারা করেছে তাদের লক্ষ্য জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেয়া। রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে ভীতি ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার জন্যই দেশি-বিদেশি চক্র এ ঘটনা ঘটাতে পারে। পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা তদন্ত করছি, কারা এর সঙ্গে জড়িত, কি উদ্দেশ্য এটা করেছে বের হয়ে যাবে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, পুলিশের মনোবল দুর্বল করার জন্যে এ ধরনের অপচেষ্টা করা হচ্ছে, ভীতি তৈরি করা হচ্ছে। তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ড দিয়ে পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের এডিসি শিবলি নোমান জানান, এ ঘটনায় পুলিশে বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার বিস্ফোরক আইনে পল্টন থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। এদিকে রবিবার রাত ৯টার দিকে মালিবাগে হামলার পর মধ্যরাতে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দায় স্বীকারের একটি আরবি বার্তায় বলা হয়, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় খেলাফতের সৈনিকরা ছদ্মবেশে ঢাকার মালিবাগে ‘মুরতাদ’ পুলিশের দিকে বোমা ছুড়লে তিন জন আহত হয়েছে। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর।’ পুলিশের একধিক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা পুলিশকে টার্গেট করেছে এমন তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। ‘লোন উলফ’ (কাপুরুষের মতো রাতের আঁধারে নিরীহদের ওপর আক্রমণকারী) জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টার্গেট করে হামলার সুযোগ খুঁজছে এমন তথ্যের পর বাড়তি সতর্ককতা জারি করা হয়। এর মধ্যেই বোমা পেতে রাখার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত ৩০ এপ্রিল গুলিস্তানে পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছোড়ার পর আইএস দায় স্বীকার করেছিল। জঙ্গিরা কেন পুলিশকে টার্গেট করছে এমন প্রশ্নের জবাবে নিরপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, পুলিশ যেহেতু জঙ্গি দমনে সফলভাবে কাজ করছে তাই তারা পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভেবে টার্গেট করতে পারে। এ ছাড়া আইএসের মতাদর্শে বিশ্বাসী কিছু সংগঠন ঈদকে কেন্দ্র করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে বা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে এ কাজ করে থাকতে পারে। তবে দাওলাতুল ইসলামসহ নতুন নতুন সংগঠনের নামে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে বিষয়টি নতুন উদ্বেগ ও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেছেন, পুলিশের ওপর দুই কারণে হামলা হতে পারে। একটি হচ্ছে সাধারণ মানুষের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে তাতে জঙ্গিরা সুবিধা করতে পারছে না। ফলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চাইছে। আরেকটি হচ্ছে, দেশে রাজনৈতিক বিভাজনের প্রেক্ষাপটে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থার সংকট রয়েছে। জঙ্গিরা সুযোগটি কাজে লাগাতে চাইছে। প্রসঙ্গত, রবিবার রাত ৯টার দিকে মালিবাগ মোড়ে পেট্রোল পাম্পের উল্টো দিকে ফ্লাইওভারের নিচে এসবির একটি গাড়ি পার্ক করা ছিল। তার পেছনে একটি পিকআপ ছিল। হঠাৎ পিকআপে বিস্ফোরণ ঘটে আগুন ধরে যায়। এতে ট্রাফিক পুলিশের এএসআই রাশেদা আক্তার (২৮) এবং রিকশাচালক লাল মিয়া (৫০) আহত হন। রাশেদার বাঁ পায়ে এবং লাল মিয়ার মাথায় জখম হয়েছে। রাশেদা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল সকালে পুলিশ কমিশনার চিকিৎসাধীন লাল মিয়াকে হাসপাতালে দেখতে যান। তখন ডিএমপি কমিশনার বলেন, ককটেল বিস্ফোরণে আহত রিকশাচালক লাল মিয়ার মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। রবিবার রাতে তার মাথার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন সবকিছু স্বাভাবিক আছে। তবে অবস্থা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। তার চিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার সবকিছুই করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App